এ যেন সবুজ ঘাসের বিছানা। দৃষ্টি যতদূর যাবে, শুধু সবুজের সমারোহ। কেউ চাইলে বিকেলের মিষ্টি রোদে সবুজ ঘাসে বসে সাগরের পানিতে পা ভিজিয়ে চুপচাপ সময় কাটাতে পারেন দীর্ঘক্ষণ। লাল কাঁকড়ার দৌড়াদৌড়ি আর সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে দেখতে হারিয়ে যেতে পারেন কল্পনার সাগরে। মনোমুগ্ধকর এ স্থানের নাম ‘গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত’। অপূর্ব এ সমুদ্রসৈকতের অবস্থান চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায়। গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতের কারণে নতুন করে এ উপজেলায় পর্যটক বাড়ছে। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক ভিড় করছেন গুলিয়াখালী সৈকতে।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৪ সালের পর থেকে গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতে পর্যটক আসতে শুরু করেন। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) একদল শিক্ষার্থী সৈকতে বেড়াতে এসে ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেন। এরপর গুলিয়াখালীর সৌন্দর্যের কথা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে, বাড়তে থাকে পর্যটক। ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতকে পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে সরকার। উপকূলীয় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ২৫৯ দশমিক ১০ একর জায়গার সৈকতটিকে পর্যটন স্পট হিসেবে স্বীকৃতি দেয় বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। ফলে সৈকতটি এখন পর্যটন স্পট হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃত। গুলিয়াখালী সৈকতে দর্শনার্থীদের জন্য শৌচাগার, দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে। বেড়িবাঁধের পাশে আছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও।
সরেজমিনে জানা গেছে, দলে দলে দর্শনার্থীরা আসছেন। কেউ হেঁটে, আবার কেউ নৌকায় চড়ে। সৈকতে আছে ওয়াশ ব্লক ও দোকানপাট। বেড়িবাঁধের পাশে আছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। পুরোনো খাবারের দোকানের পাশাপাশি নতুন করে নির্মিত হচ্ছে একাধিক রেস্তোরাঁ। গুলিয়াখালীতে আসা পর্যটকদের নৌকায় ভ্রমণ করান মাঝি সালেহ আহমদ। তিনি বলেন, ‘বেড়িবাঁধ থেকে মূল সৈকতে নেওয়ার জন্য তাদের ১৫টি পর্যটনবান্ধব নৌকা আছে। স্লুইসগেট এলাকা থেকে মূল সৈকতে যেতে জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হয় ৩০ টাকা। তবে যারা আরও দূরে গিয়ে নৌকা ভ্রমণ করতে চান; তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫০ টাকা নেওয়া হয়।’
স্থানীয় জানে আলম বলেন, ‘গুলিয়াখালীতে এখন সন্ধ্যার আগমুহূর্তে হরিণও দেখা যায়। অনেক পর্যটক হরিণ দেখতে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। এ পর্যটন এলাকা এখন আগের তুলনায় অনেক নিরাপদ। এ পর্যটনকে ঘিরে স্থানীয়দের অনেকের জীবিকা হয়েছে। অনেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালান, অনেকে নৌকা চালান আবার অনেকে সৈকত এলাকায় দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ফলে পর্যটকদের নিরাপত্তায় স্থানীয় বাসিন্দারাও তৎপর আছেন।’ সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মামুন বলেন, ‘তারা সীতাকুণ্ড পৌর সদরের বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রীদের নিয়ে গুলিয়াখালী সৈকতের বেড়িবাঁধ পর্যন্ত যান। এতে জনপ্রতি ভাড়া নেন ৩০ টাকা। প্রতি অটোরিকশায় পাঁচজন যাত্রী নেওয়া হয়। এ পথে ১২০টি অটোরিকশা আছে।’ সৈকতে কথা হয় ফেনী সদরের বাসিন্দা নুরে আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক। এখন আমাদের ছুটি চলছে। শহরের যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি পেতে গুলিয়াখালী সৈকতে এসেছি।’
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘শুধু গুলিয়াখালী নয়, সীতাকুণ্ডের সব দর্শনীয় স্থান পর্যটকদের জন্য নিরাপদ। তবু পর্যটকেরা কোথাও সমস্যার সম্মুখীন হলে সীতাকুণ্ড থানা-পুলিশ সর্বোচ্চ আইনি সহায়তা দেয়।’ সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সারাবছর গুলিয়াখালী সৈকতে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে। বিকেল হলেই দর্শনার্থীরা সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে গাড়ি পার্কিং ও শৌচাগারের ব্যবস্থা আছে। অনেক সময় দেখা যায়, দর্শনার্থীদের কেউ কেউ যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশ নোংরা করেন। এ ব্যাপারে দৃষ্টি দিতে পর্যটকদের প্রতি অনুরোধ জানাই।’
ঢাকা থেকে কেউ যেতে চাইলে চট্টগ্রামের বাসে করে সীতাকুণ্ড বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে যেতে চাইলে নগরের অলংকার থেকে ৮ ও ১৭ নম্বর বাসে করে সীতাকুণ্ড স্টেশনে নামতে হবে। একইভাবে ট্রেনে সীতাকুণ্ড স্টেশনে নামতে হবে। এরপর নামারবাজার সড়কের সেতু এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডে এসে অটোরিকশা ভাড়া করে গুলিয়াখালী বেড়িবাঁধে আসতে হবে।
বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন