কয়েক মাস পর রমজান এবং বোরো মৌসুম শুরু হচ্ছে। বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার। বিদ্যুৎ বিভাগের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে আগামী গ্রীষ্ম ও রমজানের বিদ্যুৎ সঙ্কট দেখা দিতে পারে। তা ফ্যাসিবাদ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের জন্য বলে মনে করছেন ডিপিডিসিসহ বিতরণ কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা। তারা জানান, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের চারমাস পেরিয়ে গেলেও বিদ্যুৎ বিভাগের ডিপিডিসিসহ বিতরণ কোম্পানিগুলোতে বড় বড় পদে এখনো পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের লোকজনেরা রয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ফ্যাসিবাদের দোসর কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সাথে সখ্যগড়ে তুলেছেন। সে কারণে উপদেষ্টার চারমাসেও তাদের অপসারণ না করে ডিপিডিসিসহ বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানিগুলোতে পদায়ন ও ভালো পদে বদলী করছেন বলে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ। অন্যদিকে পবিত্র রমজান মাসে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে বিদ্যুৎ গ্রাহকগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উপদেষ্টা।
জানা গেছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বড় অংশই গেছে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে, প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা।সামিট ছাড়াও বিদ্যুৎ খাতের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউনাইটেড গ্রুপ, বাংলাক্যাট, হোসাফ গ্রুপ,মোহাম্মদী গ্রুপ, ডরিন গ্রুপ, ম্যাক্স গ্রুপ, কনফিডেন্স গ্রুপ, বারাকা, এনার্জিপ্যাক। গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে চারটি সিন্ডিকেট লুটপাট করেছে। পতিত শেখ হাসিনা সরকারের পুরো আমলে ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। তবে বিদ্যুতের চেয়ে জ্বালানি খাতে তার প্রভাব ছিল বেশি। বিশেষ করে গ্যাজপ্রমকে কূপ খননের কাজ দেওয়া, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প, এলএনজি ও এলপিজি ব্যবসায় সুযোগ বৃদ্ধি, কূপ খননসহ বিভিন্ন কাজে প্রভাব বিস্তার ছিলো সাবেক উপদেষ্টার। বিদ্যুৎ বিভাগের পূর্বের যুগ্মসচিব ও উপসচিব এবং কোম্পানীর আওয়ামী ফ্যাসিবাদ নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালকদের উপর এখনো আস্থা রাখছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার উপদেষ্টা। অন্যদিকে আগামী গ্রীষ্ম ও রোজার সহিত সংশ্লিষ্ট কাজ নিয়ে চলছে ধীরগতি। ফলে বিতরণ কোম্পানী ও ট্রান্সমিশন কোম্পানীর উচ্চপদস্থ প্রকৌশলীরা ভোগান্তিতে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বিগত ২০০৪-২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় দুর্ভোগের ঘটনার পিছনে আওয়ামী পন্থী বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে। একইভাবে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন সংক্রান্ত প্রকল্পের ধীরগতি ঢাকা শহরসহ অন্য শহরে সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
ডিপিডিসিসহ বিতরণ কোম্পানিগুলোতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দুর্নীতির সহযোগী ও সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানসহ ডেসকো, ডিপিডিসি, পিজিসিবি, পল্লী বিদ্যুৎ, নেসকো এবং পিডিবিসহ দেশের ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান এবং ট্রান্সমিশন পর্যায়ে একমাত্র বিদ্যুৎ সঞ্চালনকারী প্রতিষ্ঠান পিজিসিবি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছে। কিন্তু দেশের ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান এবং ট্রান্সমিশন পর্যায়ে একমাত্র বিদ্যুৎ সঞ্চালনকারী প্রতিষ্ঠান পিজিসিবি গুরুত্বপূর্ণ পদে এখনো ফ্যাসিবাদীরা। বিগত ১০ বছরে বিদ্যুৎ বিভাগের যেসকল কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা পদোন্নতি পেয়ে পুনরায় বিদ্যুৎ বিভাগেই বদলী নিয়ে আবার দায়িত্ব পালন করছেন। এসব দুর্নীতিবাজ বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তার সাথে বিভিন্ন কোম্পানির কিছু পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালকদের সখ্যতা গড়ে উঠার কারণে বিদ্যুৎ বিভাগে বিগত লুটেরার সময়ের কোন প্রকল্পের বিষয়ে তদন্ত হয়নি। এসব সুবিধাভোগী কর্মকর্তরা প্রকল্পের তথ্য গোপন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এএফডিসহ যারা বিগত সরকারের অবৈধ নির্বাচনের বিষয়ে সোচ্চার ছিলো সেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জি ফান্ডিং প্রকল্প নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বুয়েটের প্রকৌশলী মো. রেজানুর রহমান দায়িত্ব বুঝে নেয়ার পর যখনই পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে পরিকল্পনা করছেন তখনই তাকে পেট্রোবাংলাতে বদলী করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন প্রকল্পের সাথে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা মনে করেন উহাতে বিদ্যুৎ বিভাগের যেসকল কর্মকর্তা যুগ্মসচিব বিদ্যুৎ বিভাগের পরিকল্পনা ও উন্নয়নে রয়ে গেছেন, সেই সকল স্বৈরাচারের দোসরদের অবস্থান শক্ত করবে। সার্বিক এই ধীরগতি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয় উপদেষ্টার একাধিক দায়িত্ব সড়ক, যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থাকায় তিনি সময় দিচ্ছেন না উপরন্তু স্বৈরাচারের দোসররাই নতুন স্বৈরাচারের দোসর হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন।
ডেসকো, ডিপিডিসি ও নেসকোসহ দেশের মোট ছয়টি বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী গ্রাহকের কাছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করতে প্রয়োজনীয় বিতরণ লাইন নির্মাণ ও ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রদান নিশ্চিত করে থাকে। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোতে কোম্পানির নামে নিয়ন্ত্রিত আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালক নিয়োগ করা হয়। সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর পরিবারের ও কায়কাউসদের সাথে সংশ্লিষ্টরাই বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়োগ নিয়েছেন। অন্যদিকে কায়কাউসের সাথে সখ্যতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রীর পরিবারের সাথে যোগাযোগ স্থাপনকারীরাই বিদ্যুৎ বিভাগে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
বিদ্যুৎ বিভাগে ২০১১-১২ অর্থ-বছরে ৫৪টি, ২০১২-১৩ অর্থ-বছরে ৫৯টি, ২০১৩-১৪ অর্থ-বছরে ৬৯টি, ২০১৪-১৫ অর্থ-বছরে ৭১টি, ২০১৫-১৬ অর্থ-বছরে ৮২টি, ২০১৬-১৭ অর্থ-বছরে ৮৮টি, ২০১৭-১৮ অর্থ-বছরে ১১৩টি, ২০১৮-১৯ অর্থ-বছরে ১১৭টি, ২০১৯-২০ অর্থ-বছরে ১০৪টি, ২০২০-২১ অর্থ-বছরে ৯৭টি, ২০২১-২২ অর্থ-বছরে ৮০টি, ২০২২-২৩ অর্থ-বছরে ৭১টি, ২০২৩-২৪ অর্থ-বছরে ৬৪টি করে প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন ছিলো এবং বর্তমান ২০২৪-২৫ অর্থ-বছরে ৫৭টি এডিপিভুক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে বিপিডিবি’র রিহ্যাবিলিটেশন প্রজেক্ট, জোনভিত্তিক বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পাওয়ার প্ল্যান্ট ও সোলার প্ল্যান্ট নির্মাণ প্রজেক্ট ডেসকো, নেসকো প্রকল্প, নতুন উপকেন্দ্র নির্মাণ ও ভূ-গর্ভস্থ উপকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, এবং পিজিসিবি’র রিলায়েবিলিটি এন্ড ইফিসিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট, পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্কের এক্সপানশন এন্ড স্ট্রেংদেনিং প্রকল্প পাওয়ার ট্র্যান্সমিশন ও গ্রীড নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট লুটপাটের জন্য উল্লেখযোগ্য আছে
লুটপাটের প্রকল্প প্রণয়ন, অনুমোদন, টেন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিপু পরিবার, শেখ রেহানা, শেখ সেলিম ও কায়কাউসের লোকদের কাজ করার জন্য মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা, কোম্পানীর কিছু কর্মকর্তাসহ কোম্পানীর পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালকদের সহযোগিতা প্রয়োজনের কারণে বিদ্যুৎ বিভাগের ফ্যাসিবাদ লোকেরা যারা কার্যরত ছিলো, বর্তমানেও তারাই রয়েছেন। বিদ্যুৎ ও জ্বলানী উপদেষ্টার নির্ভরতা এ সকল কর্মকর্তাদের উপর। ফলে জ্বালানী খাতসহ অন্যান্য খাতে অনেক পরিবর্তন হলেও বিদ্যুৎ বিভাগের সকল কর্মকর্তাসহ কোম্পানী পরিচালক/নির্বাহী পরিচালকও পদস্থ রয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতা নির্বাহী পরিচালক আখিরুল ইসলাম । রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো, শফিকুল ইসলাম প্রকল্প শেষ না করেই নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) হন এবং মাতারবাড়ি মদুনাঘাট ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্প শেষ না করেই মোরশেদ আলম খান নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) হন। অন্যদিকে ডেসকোর প্রধান প্রকৌশলী শবিকুল ইসলাম ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) পদে প্রথম এবং ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশলী) পদে উত্তীর্ণ হয়েও ডিপিডিসির পরিচালক হতে পারেননি।
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় খুচরায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় দাম ছিল ৩ টাকা ৭৩ পয়সা। বর্তমানে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। অর্থাৎ, গত সাড়ে ১৫ বছরে খুচরায় বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১৪২ শতাংশ। ২০০৯ সালে গ্যাসের দুই চুলার মাসিক বিল ছিল ৪৫০ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৮০ টাকা। অর্থাৎ গেল সাড়ে ১৫ বছরে গ্যাসের দাম বেড়েছে ১৪০ শতাংশ। এই সময়ে বিদ্যুৎ খাতের লোকসান ঠেকেছে ২ লাখ কোটি টাকার ওপরে। বিপরীতে সরকার ভর্তুকি দিয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। গত পাঁচ বছরে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে ভর্তুকি দিতে হয়েছে ২৬ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং বিপুল লোকসানের জন্য বিশ্লেষকরা আওয়ামী লীগ সরকারের অপরিকল্পিত উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন কর্মকা- ও দায়মুক্তি আইনের আড়ালে দলীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধা প্রদানকে দায়ী করেন। পাশাপাশি ওই সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন মহলের দুর্নীতি এ খাতকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করেন তারা।
দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতিকে পুঁজি করে দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ বিধান পাস করা হয় ২০১০ সালে। এই আইনে টেন্ডার ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ দেওয়া হয়। এর পর দেশের ভবিষ্যৎ বিদ্যুৎ চাহিদার অবাস্তব প্রাক্কলন করে একের পর এক ব্যয়বহুল প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রয়োজন না থাকলেও অনেক প্রকল্প দেয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকসহ প্রায় দুই ডজন সংসদ সদস্য সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নানা প্রকল্পের কাজ পান। সামিট, ইউনাইটেড পাওয়ার, বাংলাক্যাট, মোহাম্মদী গ্রুপ, ডরিন, বারাক, সিনহাসহ বেশ কিছু কোম্পানি একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে। যদিও এত বেশি কেন্দ্রের প্রয়োজন ছিল না বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। ফলে অনেক কেন্দ্রই নামমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন করে শত শত কোটি টাকা আয় করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী আদানি ও রিলায়েন্সকে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ ব্যবসা। রাশিয়া ও চীনের কোম্পানিকে গ্যাসকূপ খননের কাজ দেয়া হয় বেশি দামে। জনগণের প্রবল প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সুন্দরবনঘেঁষে ভারতের সঙ্গে যৌথ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। দেশীয় উৎপাদন ও অনুসন্ধানের দিকে নজর না দিয়ে গ্যাস সংকটকে পুঁজি করে অসৎ উদ্দেশ্যে এলএনজি আমদানির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। পছন্দের কোম্পানিকে এলএনজি ব্যবসায় যুক্ত করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে মোটা দাগে চারটি সিন্ডিকেট লুটেপুটে খেয়েছে। শেখ হাসিনার পুরো শাসনামলে ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। তবে বিদ্যুতের চেয়ে জ্বালানি খাতে তাঁর প্রভাব ছিল বেশি। বিশেষ করে গ্যাজপ্রমকে কূপ খননের কাজ দেয়া, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প, এলএনজি ও এলপিজি ব্যবসায় সুযোগ বৃদ্ধি, কূপ খননসহ বিভিন্ন কাজে উপদেষ্টা প্রভাব বিস্তার করতেন বলে জানা গেছে। গ্যাস সংকটের কারণে সরকার দীর্ঘদিন গ্যাস সংযোগ প্রদান বন্ধ রাখে। তবে বিশেষ বিবেচনায় শিল্পে কিছু গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। তৌফিক-ই-ইলাহী ছিলেন এ-সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটির প্রধান। এই কমিটির বিরুদ্ধে গ্যাস সংযোগে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন নসরুল হামিদ। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নিজস্ব সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তবে তার প্রভাব বেশি ছিল বিদ্যুতে। জ্বালানিতে নানা কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন সময় তাঁর সঙ্গে উপদেষ্টার মতবিরোধ ঘটে।
বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন
সূত্র: ইনকিলাব