ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​পাঠ্যবই সরবরাহে অনিশ্চয়তা কাটছে না

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৫-১২-২০২৪ ১০:৫০:০৬ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ২৫-১২-২০২৪ ০২:২৮:০৮ অপরাহ্ন
​পাঠ্যবই সরবরাহে অনিশ্চয়তা কাটছে না সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
নির্ধারিত সময়ে সরকারের বিনামূল্যের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না। মুদ্রণ মালিকদের হাতে সময় কম থাকায় সব বই সরবরাহ করা নিয়ে এই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। মুদ্রণ মালিকরা বলছেন, সময় কম হলেও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পাঠ্যবই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে পৌঁছাতে। তবে এই কম সময়ে অল্প সংখ্যক বই সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিকের সব বই এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত—এই তিনটি বই তারা (মুদ্রণ মালিক) পৌঁছাতে সক্ষম হবেন বলে কথা হয়েছে। অপরদিকে জানুয়ারির ১০ তারিখের মধ্যে মাধ্যমিকের আরও পাঁচটি বই এবং জানুয়ারির ২০ তারিখের মধ্যে মাধ্যমিকের বাকি সব বই পৌঁছানোর কথা হয়েছে। এ জন্য তারা সব সহযোগিতা চেয়েছে, আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।’

যথাসময়ে পাঠ্যবই সরবরাহের প্রতিশ্রুতির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মুদ্রণ মালিক সমিতির সভাপতি রব্বানী জব্বার ফোন রিসিভ করে বলেন, ‘মিটিংয়ে আছি, পরে কথা বলবো।’ পরে একাধিকার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ মুদ্রণ মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, ‘সময় দিতে হয় ৭০ থেকে ৯৬ দিন। এবার সময় দেওয়া হয়েছে ৪০ দিন। আজ যে লোক চুক্তি করেছে, তার ৪০ দিন কবে শেষ হবে? ওয়ার্ক অর্ডার দিচ্ছেন ৪০ দিনের মধ্যে বই ছেপে দিতে হবে। কাজের জন্য চাপ দিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত জাতীয় স্বার্থে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো, কিন্তু নিশ্চয়তা তো দিতে পারবো না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা গত ১৯ ডিসেম্বর নো অবজেকশন অ্যাগ্রিমেন্ট করেছি (নবম ও দশম শ্রেণির বইয়ের জন্য)। এটার পর আমরা একটা সম্মতি দেই। সম্মতির পর ব্যাংকের সঙ্গে আমরা চুক্তি করি। ব্যাংকের কাছে আমরা লোন চাই। ব্যাংক গ্যারান্টি দিলে আমরা অনলাইনে জমা করি। এরপর চুক্তি করি। চুক্তি অনুযায়ী আমরা ৪০ দিন সময় পাবো। এবার সময়ের দিকে তাকাচ্ছি না। চেষ্টা করছি যথাসময়ে বই দেওয়ার। সরকার আমাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। আশানুরূপ সমাধান হলে আমরা অনেক বই দিতে পারবো।’

প্রাথমিকের শতভাগ বই যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকের অনেক বই চলে গেছে।’ মাধ্যমিকের কী পরিমাণ বই ডিসেম্বরের মধ্যে দেওয়া যেতে পারে, জানতে চাইলে তোফায়েল খান বলেন, ‘মাধ্যমিকের সর্বোচ্চ তিনটি বই দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এনসিটিবি বলেছে তারিখ এইটা, আর আমরা বলেছি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।’ সরকারকে প্রতিশ্রুতির দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মুদ্রণ মালিক বলেন, ‘সম্ভাবনা কম। একজন মুদ্রণ মালিকের গুদাম সিজ করা হয়েছে। সেটি এখনও খুলে দেয়নি। তিনি যদি বই দিতে একদিন দেরি করেন, তাহলে সরবরাহ একদিন পিছিয়ে যাবে। সারা দেশে ব্যাংকের আর্থিক সংকট চলছে। তারা ঠিকমতো আমাদের আর্থিক সাপোর্ট দিতে পারছে না। কাজেই জোর করে বই ছাপিয়ে দেওয়া যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। সব বই দিতে ফেব্রুয়ারি লেগে যাবে।’

প্রসঙ্গত, ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর বিনামূল্যের পাঠ্যবই বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার উৎসব করা হতো। এ বছর অর্থ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে উৎসব করা হবে না। পাঠ্যবই নিয়ে সম্ভাব্য অনিশ্চয়তা নিয়ে প্রকাশকরা বলছেন, আগের টেন্ডার বাতিল করে নতুন টেন্ডার দেওয়ায় সময় নষ্ট হয়েছে। পরিমার্জনে চলে গেছে অনেক সময়। শেষ মুহূর্তে এসে ওয়ার্ক অর্ডার (কার্যাদেশ) দিতেও দেরি হয়েছে। ফলে যথাসময়ে মুদ্রণ মালিকরা বই দিতে পারবেন না। তবে প্রতিশ্রুত দিয়ে আন্তরিকতা নিয়েই কিন্তু বই ছাপতে হবে। মাধ্যমিকের একটি বই এখন পর্যন্ত ছাপা হয়নি। তাহলে কীভাবে যথাসময়ে বই দেওয়া সম্ভব? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মুদ্রণ মালিক বলেন, এ বছর ডিসেম্বরে কার্যাদেশ পাওয়া গেছে। এরপর বিভিন্ন প্রক্রিয়া থাকে। বই ছাপার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে ৪০ দিন। এসময়ে শুধু প্রাথমিকের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই দেওয়া সম্ভব। ‍কিন্তু চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই কীভাবে ডিসেম্বরের ৩১ তারিখের মধ্যে দেবে?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন ছাপাখানার মালিক বলেন, ‘বছরের শুরুতে হয়তো প্রাথমিকের বই দেওয়া যেতে পারে। তবে সব দেওয়া যাবে এমন নিশ্চয়তা নেই। আর জানুয়ারিতে মাধ্যমিকের বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু অন্য বই দেওয়া নিয়ে সংশয় আছে। বই দিতে হলে তো ছাপা শেষ হতে হবে। এরপর আছে বাইন্ডিং। অন্যান্য বছর সময় দেওয়া হতো ১২০ দিন। তাতেই সব বই দেওয়া সম্ভব হতো না। এছাড়া বই দেওয়ার পর কোথাও কম পড়ে যেতে পারে, কোথাও খারাপ বই পড়তে পারে। বই নষ্ট হতে পারে। সেসব বই যাচাই-বাছাই করে আবার পাঠাতে হবে। ফলে কিছু বই বছরের শুরুতে দেওয়া গেলেও সব দেওয়া সম্ভব নয়।  

গত রবিবার (২২ ডিসেম্বর) মুদ্রণ মালিক সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জুনায়েদুল্লাহ আল মাহফুজ পাঠ্যবই সরবরাহে ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময় চেয়ে চিঠি দেন শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে। বিষয়টি নিয়ে চাপের মুখে পড়ে এনসিটিবি। পরে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিকের সব বই এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত—এই তিনটি বই নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে প্রতিশ্রুতি দেন তারা (মুদ্রণ মালিক)। এছাড়াও জানুয়ারির ১০ তারিখের মধ্যে মাধ্যমিকের বাকি পাঁচটি বই এবং জানুয়ারির ২০ তারিখের মধ্যে মাধ্যমিকের বাকি সব বই পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতিও দেন তারা। শুধু তাই নয়, চিঠি দিয়ে সময় চাওয়ার জন্য ক্ষমা চান মুদ্রণ সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জুনায়েদুল্লাহ আল মাহফুজসহ সমিতির শীর্ষ নেতারা। মুদ্রণ মালিকরা বলছেন, আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী যে সময় পাবো, সেদিকে না তাকিয়ে সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পাঠ্যবই সরবরাহের চেষ্টা করবো।

বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ