ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নৌপথ বন্ধের হুঁশিয়ারি!

সাত খুনের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৪-১২-২০২৪ ০৩:৩৪:০৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৪-১২-২০২৪ ০৪:৪৩:৫০ অপরাহ্ন
সাত খুনের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ঈশানবালায় মেঘনা নদীতে মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের এমভি আল-বাখেরা নামের সারবাহী একটি জাহাজের সাতজনকে হত্যায় জড়িত অপরাধীদের গ্রেপ্তারের জন্য সরকারকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন নৌযান শ্রমিকরা। এ সময়ের মধ্যে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা না হলে ২৬ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে সারা দেশের নৌপথ বন্ধ ঘোষণা করা বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সদস্য ও ঢাকা-চাঁদপুর লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুনুর রশিদ। এর আগে, মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চাঁদপুরের নৌযান শ্রমিকরা লঞ্চঘাট এলাকায় বিক্ষোভ করেন।

মেঘনা নদীতে জাহাজের চালকসহ সাত জনকে হত্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করে হারুনুর রশিদ বলেন, ‘আমাদের সাত জন সহকর্মী মারা গেছেন। আরও একজন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। এ ঘটনায় আমাদের সহকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাই প্রশাসনের কাছে আমাদের সুস্পষ্ট আবেদন, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে হবে। নিহতের পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ২০ লাখ টাকা সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা। আর সন্ত্রাসীদের আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে নিয়ে যেতে চাই না। কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী আজ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হচ্ছে, এটি হতে থাকবে। পাশাপাশি আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরকার অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হলে ২৬ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে বাংলাদেশের সম্পূর্ণ নৌপথ বন্ধ ঘোষণা করা হবে।’

এদিকে, চাঁদপুর নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম এস ইকবাল বলেন, ‘এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের প্রতি আমাদের সহানুভূতি থাকবে। ময়নাতদন্ত শেষে আজই মরদেহগুলো তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তারা মামলা করতে পারবেন। তাদের আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। নৌপথে সব ধরনের টহল জোরদার করা হয়েছে। এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য সকল সংস্থা কাজ করছে। আশা করি, খুব শিগগিরই আমরা রহস্য উদঘাটন করতে পারবো। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।’

এর আগে, সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকালে ওই ইউনিয়নের মাঝের চর নামক স্থান এমভি আল-বাখেরা জাহাজ থেকে নিহতদের মরদেহ ও আহতদের উদ্ধার করে কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ। নিহতরা হলেন-জাহাজের মাস্টার (চালক) ফরিদপুরের কোতয়ালী থানার গোলাম কিবরিয়া (৬৫), ইঞ্জিনচালক নড়াইলের লোহাগড়া থানার সালাউদ্দিন (৪০), সুকানি আমিনুল মুন্সি (৪১), গ্রিজার ফরিদপুরের কোতয়ালীর শেখ সবুজ (২৭), মাজেদুল ইসলাম (২০), সজিবুল ইসলাম (২৮) ও রানা (২৭)। গুরুতর আহত একজন হলেন জুয়েল। হতাহত ব্যক্তিদের বাড়ি নড়াইল ও ফরিদপুর জেলায়।

হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে নৌপুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার (২২ ডিসেম্বর) রাত ১টা থেকে ২টার দিকে। আমরা দুপুর ২টার দিকে খবর পেয়েছি। এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। প্রত্যেকের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহতদের নিজ নিজ কক্ষে মরদেহগুলো পেয়েছি। তিন জকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে চাঁদপুরের হাসপাতালে আনা হলে দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাহাজের মালিকপক্ষ আসলে আমরা কিছু বিষয় জানতে পারবো। জাহাজে থাকা কোনও মালামাল কেউ নিয়ে যায়নি। যাদের ডাকাত বলা হচ্ছে, আমার মনে হচ্ছে, এটি ডাকাতি না। কারণ, জাহাজে কয়েক কোটি টাকার সার ছিল। সেগুলো সব আনটাচ অবস্থায় ছিল। বর্তমানে সেগুলো পুলিশের পাহারায় রয়েছে। নিহতদের মোবাইলগুলো আমরা পেয়েছি। অপরাধীরা কিছু নিয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। খুনিদের অন্য কোনও টার্গেট ছিল হয়তো। তদন্ত সাপেক্ষে সেটি বলা যাবে। আপাতদৃষ্টিতে বলা যায়, এটি ডাকাতির ঘটনা না। ডাকাতির ঘটনা হলে এ জাতীয় কার্গো জাহাজে যারা থাকে তারা সবাই কর্মচারী। তাদের কাছে সর্বসাকুল্যে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকাও থাকে না। শুধু তাদের পথ খরচ থাকে। ডাকাতদল যদি তাদের অ্যাটাক করে চাইলেই তো তা দিয়ে দেয়। কারণ, সামান্য কিছুর জন্য কেউ জীবনের ঝুঁকি নেবে না। ঝুঁকি নিলেও তো অন্য কোথাও আঘাত থাকবে। কাউকে মেরে ফেলতে চাইলে সে তো বাঁচতে চাইবে। কিন্তু সবারই মরদেহ নিজ নিজ রুমে এবং নিহতদের সবার মাথায় আঘাত করা, অন্য কোথাও আঘাত দেখা যায়নি। একজনের ছিল গলায় আঘাত করা।’ তিনি জানান, কোস্টগার্ড, সিআইডি, পিবিআইসহ সকল টিম কাজ করছে। ফরেনসিকের জন্য যেগুলো সংগ্রহ করা দরকার সব সংগ্রহ করেছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা বলেন, ‘তরিকুল নামে একজন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেছিলেন। ওই ফোনে প্রাপ্ত খবরের ভিত্তিতে ডিসি স্যার আমাকে সোমবার বিকাল ৩টার দিকে বিষয়টি জানিয়েছেন। স্যার ঠিক জানেন না কোন জায়গায় জাহাজটি আছে। আমরা জানতে পেরেছি, এমভি আল-বাখেরা জাহাজের মালিক রবিবার রাত থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। তখন একই মালিকানাধীন আরেকটি জাহাজের স্টাফদের বলেন জাহাজটি কোথায় আছে তা খোঁজ নিতে। তারা বাখেরা জাহাজটিকে হাইমচর উপজেলার ঈশানবালার মাঝিরঘাট এলাকায় মেঘনা নদীতে খুঁজে পায়। এ সময় তারা জাহাজে উঠে দেখতে পায়, পাঁচ জনের মরদেহ পড়ে আছে। তাদের গায়ে কাঁথা, শাল ছিল। মরদেহগুলো এমনভাবে ছিল যেন তারা ঘুমিয়ে আছেন। কিন্তু তাদের মাথা ক্ষতবিক্ষত ছিল। সম্ভবত কোপানো হয়েছে। আর তিন জন আহত ছিল। পরে খবর পেয়ে নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড সেখানে যায়। ডিসি স্যার ও আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলাম। উদ্ধারকাজ শুরু হলো।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ