কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ
সিন্ডিকেটে জর্জরিত ডিপিডিসি
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
২৪-১২-২০২৪ ০২:৫৩:১৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২৪-১২-২০২৪ ০৩:২৫:১৫ অপরাহ্ন
সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
সিন্ডিকেটে জর্জরিত ঢাকা পাওয়ার ডিসট্রিবিশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেড। রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পিজিসিবি’র সাবেক প্রকল্প পরিচালক কিউ এম শফিকুল ইসলাম ও ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা ও নির্বার্হী পরিচালক (প্রশাসন) সোনা মনি চাকমা, পরিচালনা পর্ষদের অন্যতম সদস্য ও ডেসকোর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কাওসার আমীর আলীসহ বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মিলে গড়ে তুলেছেন এই সিন্ডিকেট।
তাঁরা প্রত্যেকে আলাদা আলাদাভাবে এই সিন্ডিকেট পরিচালনা করেন। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তাঁরা হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে দফায় দফায় তুলেছেন হাদিয়া। চলমান অনেক প্রকল্প থেকে আত্মসাৎ করেছেন শত শত কোটি টাকা। ঘুষ নিয়োগ ও বদলী বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এই সমস্ত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ঢাকায় বাড়ি, একাধিক ফ্লাট, ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ টাকা এবং নিজ নিজ গ্রামে করেছেন অঢেল সম্পত্তি। সম্প্রতি দুদক ও বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দুনীর্তি দমন কমিশন সূত্র জানা যায়, চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি দেন। চিঠিতে উল্ল্যেখ করা হয়, ডিপিডিসির শক্তিশালী সিন্ডিকেট অন্য সদস্যরা হলেন - কামরাঙ্গীরচর ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুজ্জামান , মুগদা ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মাহে আলম , মগবাজারের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাসির, শীতলক্ষ্যা ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোরশেদ এবং ধানমন্ডি সার্কেলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আ ন ম মোস্তফা কামালসহ প্রমুখ।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর নির্দেশনায় কিউ এম শফিকুল ইসলামকে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (টেকনিক্যাল) পদে দুই বছরের জন্য চলতি বছরের শুরুতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার ঢাকায় বাড়ি, একাধিক ফ্লাট, ব্যাংকে বিপুল পরিমান টাকা এবং নিজ গ্রামের বাড়ি নওগাঁতে রয়েছে অঢেল সম্পত্তি। ইতোমধ্যে তিনি ডিপিডিসিতে তৈরী করেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ডিপিডিসির ডিএসএস ও সিএসএস ঠিকাদার নিয়োগ, গ্রাহকের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের নীতিমালা ভঙ্গ করে সংযোগ প্রদান, বদলী বানিজ্যসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত এই কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে দুদকে একাধিক অভিযোগ থাকলেও তিনি তা ম্যানেজ করে ধামাচাপা নিয়ে দেন।
অপরদিকে দুদকে করা অপর এক অভিযোগে বলা হয়, বিশাল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সুপারিশে বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক একজন সিনিয়র সচিব তাঁকে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (টেকনিক্যাল) পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এখন তিনি ডিপিডিসিতে টেন্ডার বাণিজ্য, বদলী, পদোন্নতি ও নিয়োগ বানিজ্য নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন।
এ ব্যাপারে কিউ.এম. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো করা হয়েছে, তা পুরোটাই বানোয়াট। সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সাথে আমার ঘনিষ্ঠতার কোনো সুযোগ নেই। আমি কখনোই উনার দপ্তরে যাওয়া আসা করিনি। এছাড়া পিজিসিবি প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে থেকে কোন ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এ দিকে ডিপিডিসির আরেক নির্বার্হী পরিচালক (প্রশাসন) সোনা মনি চাকমার বিরুদ্ধেও রয়েছে নানান অনিয়মের অভিযোগ। এই নির্বাহী পরিচালকও গড়ে তুলেছেন নিজস্ব একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট ডিপিডিসির ৩৬টি ডিভিশনে একটি চক্র গড়ে তুলেছে। নিয়ম ভঙ্গ করে গ্রাহক কে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, মিটার টেম্পারিং ও বাইপাস করে কোন গ্রাহককে চিহ্নিত হলে তাঁকে জরিমানার আওতায় না আনতে অধিনস্তদেরও মৌখিক নির্দেশনা দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি কাকরাইল ডিভিশনে এক বিদ্যুৎ চুরির ঘটনায় গ্রাহককে বাঁচাতে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে বদলি বাণিজ্যের ব্যাপারে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তাঁর এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের দাপটে প্রতিষ্ঠানটিতে গ্রাহক সেবা বিঘ্নত হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সকালে বদলির আদেশ জারী করে বিকেলে আবার টাকা পেলে সেটা স্থগিত করে দেয় এই কর্মকর্তা। এ সব অনিয়ম করেই সোনামনি চকমা অঢেল টাকার মালিক বনে গেছেন।
এছাড়াও চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ এর পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর ঢাকা পাওয়ার ডিসট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেডের দুর্নীতিগ্রস্থ বোর্ড পরিচালক এবং কর্মকর্তাদের অপসারণ ও শাস্তির দাবি জানিয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়- বিদ্যুৎ বিভাগের অধিনস্থ ডিপিডিসির পরিচালনা পর্ষদের অন্যতম্ভ সদস্য ও ডেসকোর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কাওসার আমীর আলীর নামে দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ জানায়-ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা, নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) কিউ.এম শফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বদলী-নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যসহ অনিয়ম ও শত শত কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাতের সাথে জড়িত। যার ফলে পাওয়ার সেক্টরের গুরুত্বকপূর্ণ কোম্পানি ডিপিডিসি প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা আর্থিক লোকসান গুনছে। বিগত স্বৈরশাসকের আমলে গত সাড়ে ১৫ বছরে দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের নামে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে যথেষ্ট তথ্য সম্বলিত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। উল্লিখিত দুর্নীতিগ্রন্থ কর্মকর্তাগণ বিগত স্বৈরাচার সরকারের মদদপুষ্ট হয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, যা বর্তমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার পরিপন্থী এবং শহীদদের সাথে চরম প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। এমতাবস্থায় অনতিবিলম্বে উক্ত দূর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তাদেরকে আপনার অধীনস্থ ডিপিডিসি এর গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে অপসারণ, দূর্নীতির তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা, শাস্তি নিশ্চিতকরণ ও লোপাটকৃত অর্থ যৌক্তিক সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জোরালো দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ।
বাংলা স্কুপ/ প্রতিবেদক/ এনআইএন
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স