ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুপির টিমটিমে আলোই ভরসা

​তিন দশক ধরে বিদ্যুৎহীন শতাধিক পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২২-১২-২০২৪ ০২:৩৮:৫৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২২-১২-২০২৪ ০২:৩৮:৫৫ অপরাহ্ন
​তিন দশক ধরে বিদ্যুৎহীন শতাধিক পরিবার প্রতীকী ছবি
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে মানুষ যেখানে আধুনিক জীবনযাপন করছে; সেখানে গত ৩০ বছর ধরে অন্ধকারে দিন কাটছে গ্রামবাসীর। স্বাধীনতার এত বছর পরেও গ্রাম এখনও বিদ্যুৎহীন! শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। জনপ্রতিনিধিদের ভুয়া আশ্বাস আর নীতিমালার বেড়াজালে আটকে আছে এই গ্রামের বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ।

এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নের কালিনগর বাগানপাড়া গ্রামের ঘটনা। এখানে আধাপাকা ঘরেই বসবাস ১২০টি পরিবারের। নদীভাঙনসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩০ বছর আগে এই বাগানের মধ্যেই বসতি গড়ে তোলে পরিবারগুলো। দিন দিন সেই সংখ্যাও বাড়ছে। অথচ আজও এই গ্রামটিতে পৌঁছায়নি বিদ্যুতের আলো। ফলে উন্নয়ন ও আধুনিক সুযোগ থেকে একেবারে বঞ্চিত কালিনগর বাগানপাড়াবাসী।

স্থানীয়দের দাবি, সন্ধ্যা হলেই গাঢ় অন্ধকারে ঢেকে যায় পুরো এলাকা। সৃষ্টি হয় এক ভূতুড়ে পরিবেশের। অন্ধকার দূর করতে তাই এখনও মোমবাতি, হ্যারিকেন বা কুপির টিমটিমে আলোই ভরসা কালিনগর বাগানপাড়া গ্রামের মানুষের। ফলে প্রচণ্ড গরম আর নানা ভোগান্তির মধ্য দিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে পরিবারগুলো।
গ্রামবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, গত ৩০ বছরে বহুবার প্রশাসনের দারস্থ হয়েছেন তারা। ধরনা দিয়েছেন জনপ্রতিনিধিদের দুয়ারে দুয়ারে। কিন্তু আশ্বাস মিললেও মেলেনি ফল। ফলে অন্ধকারেই থেকে গেছে গ্রামটি। এতে অন্যান্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত নিম্নআয়ের মানুষগুলো। বিদ্যুৎ না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চলে হ্যারিকেন ও কুপির আলোয়। ফলে পড়ালেখায়ও পিছিয়ে পড়ছে এখানকার ছেলেমেয়েরা। বিদ্যুৎবঞ্চিত গ্রামটিতে নেই কোনো দোকানপাট ও রাস্তাঘাটও।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জনপ্রতিনিধিদের ভুয়া আশ্বাস, জমির মালিকদের বাধা আর বিদ্যুৎ বিভাগের নীতিমালার বেড়াজালে আটকে আছে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ।
ষাটোর্ধ্ব আবদুল জব্বার বলেন, অন্য গ্রাম থেকে ১৮-১৯ বছর হলো আমার আসা। তখন থেকেই এসে দেখি বিদ্যুৎ নেই। যাদের জমি তারা খুঁটি পুঁততে দেয়নি। সে কারণে বিদ্যুৎ নেই। স্কুলপড়ুয়া আবদুল্লাহ জানায়, গ্রামে বৈদ্যুতিক সংযোগ না থাকায় এই গ্রামের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ায় পিছিয়ে রয়েছে। এ কারণে এখানে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হারও অনেক বেশি।

স্থানীয় যুবক রাজু আহমেদ কয়েক বছর ধরে ফ্রিল্যান্সারের কাজ করেন। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় ভিন্ন গ্রামে ল্যাপটপ ও ফোন চার্জ দিতে যেতে হয়। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে চাইলেও দোকানপাট করতে পারছেন না। এটির সমাধান খুবই জরুরি।

ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নের ৮ নং ইউপি সদস্য মো. আবদুল জলিল বলেন, এর আগে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য বিদ্যুতের খুঁটি রেখে গেছিল পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ। কিন্তু বাগানের মালিক তার জমির ওপর ওই খুঁটি পুঁততে দেয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে কারও কাছে যেতে বাকি নেই। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা করা যায়নি। পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নাকি কাগজ পাঠানো হয়েছে। তাদের অনুমতি পেলেই কাজ শুরু হবে। এ জনপ্রতিনিধি আরও বলেন, আধুনিক যুগে বিদ্যুৎ ছাড়া থাকা বাঁচা কঠিন। সেখানে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এটি একই সঙ্গে দুঃখজনক ও লজ্জাজনক।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. ছানোয়ার হোসেন বলেন, শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় ঠিকাদার লাইন দেওয়ার সময় স্থানীয় এক বাগান মালিক বাধা দেয়। সে কারণে সেখানে ঠিকাদার কাজ করতে পারেনি। এখন যেহেতু প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে গেছে তাই শতভাগের আওতায় লাইনটির কাজ করা আর সম্ভব হচ্ছে না।

পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তা আরও বলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ডিসি ও ইউএনওর সুপারিশে লাইনটি ফ্রি করার জন্য আরডিপিতে পরবর্তীতে একটি পত্র দিই। কিন্তু এখনও সেটির অনুমতি আসেনি। অনুমতি এলেই কাজ শুরু হবে।

বাংলা স্কুপ/ প্রতিনিধি/ এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ