পানির নিচে কৃষিজমি, বিপাকে মুন্সিগঞ্জের হাজারো চাষী
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
১৯-১২-২০২৪ ০৩:৫৫:৩১ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১৯-১২-২০২৪ ০৩:৫৫:৩১ অপরাহ্ন
মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে খাল-বিল ভরাট করায় পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর কৃষিজমি পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। এতে আলু রোপণ করতে না পেরে ক্ষতির শঙ্কায় দিশেহারা কৃষক।
জানা গেছে, উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার দুই ও তিন ফসলি আবাদি জমি প্রায় ছয় মাস ধরে পানির নিচে। অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র ডোবা-নালা-খাল ও জমি ভরাট করায় বর্ষা মৌসুমের পানি নামতে পারেনি। আগে যেসব কৃষিজমিতে আলু রোপণ করা হতো, সেই জমিগুলোতে এখন হাঁটুপানি।
জমিতে পানি থাকায় চলতি মৌসুমে আলু রোপণ করতে পারেননি বলে জানান উপজেলার ঘোড়দৌড় গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ঘোড়দৌড় কাঠপট্টি এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে সরকারি খাল ভরাট হয়ে গেছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা খাল ভরাট করে ভবন নির্মাণ করেছে। এ জন্য বর্ষা মৌসুমের পানি নামতে পারেনি। জমিগুলো এখনও পানিতে তলিয়ে আছে। বিগত বছরগুলোতেও এসব জমিতে আলু হতো। কিন্তু মাসের পর মাস পানি আটকে থাকায় এখন আর আগের মতো আলু হয় না।
কৃষি অফিসসহ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উপজেলার প্রায় ৬ হাজার হেক্টর কৃষিজমি এখনও পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে ভরাট বাণিজ্য এবং বর্ষা ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জমিতে থই থই করছে পানি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বেশ কয়েক বছর ধরে এ অবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় বছরে ৬ থেকে ৯ মাস এসব জমি পানির নিচে তলিয়ে থাকে। ফলে তিন ফসলি জমি হওয়া সত্ত্বেও কৃষকরা বছরে শুধু ইরি ধান আবাদ করে। কিছু জমি পুরোপুরি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। এ সমস্যা সমাধানে নেওয়া হয়নি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। যদিও এবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে কিছু স্থানে ভরাট হয়ে যাওয়া খাল কেটে সরু পথ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এর পরও উপজেলার প্রায় ৬ হাজার হেক্টর কৃষিজমি এখনও পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।
বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বর্ষা মৌসুমের পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় উপজেলার খেদেরপাড়া, মৌছা মান্দ্রা, ঘোলতলী, খলাপাড়া, কাজিরগাঁও, খিদিরপাড়া, বন সামন্ত, ঢোলুগাঁও, জোড়পুল, কলারবাগ, গাঁওদিয়া, ধারার হাট, বেজগাঁও, কনকসার, নয়াবাড়ি, ভোগদিয়া, পালগাঁও এলাকায় বিস্তীর্ণ কৃষজমি এখনও পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
কৃষকরা জানিয়েছেন, বর্ষা মৌসুম ও ঘূর্ণিঝড়ে টানা বৃষ্টির পর পানি জমি থেকে নামতে পারেনি। খাল-বিল, সেতু-কালভার্টের মুখ আটকে মাটি ভরাটের কারণেই পানি আটকে রয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়ছে। বর্ষার পানি নামতে না পারায় এলাকার কৃষকরা দিশেহারা। তারা বলেন, বছরের পর বছর সৃষ্ট জলাবদ্ধতা বেড়ে চলায় প্রান্তিক চাষিরা খুবই চিন্তিত। আবাদের মৌসুম শুরু হলেও বর্ষার পানি না নামায় সময়মতো আলুসহ বিভিন্ন রবি ফসলের চাষ করতে পারছেন না কৃষক। তাদের অভিযোগ, কোথাও জমি-সংলগ্ন খাল দখল, কোথাও মাটি জমে খাল সরু হয়ে গেছে। এতে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় ফসলি জমিতে জমে আছে বর্ষার পানি। তাই এখনও আলু রোপণ করতে না পেরে আর্থিক ক্ষতির কবলে পড়ার আশঙ্কায় কৃষকরা।
ঘোলতলী গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী পাঠান বলেন, ‘৫ বছর আগেও আমাদের জমিতে আলু হয়েছে। দুই ফসলি জমিতে আগে আলু রোপণ করতাম। এর পর ইরি ধান আবাদ করা হতো। কিন্তু জমিতে এখনও জমে আছে পানি। তাই আলু আবাদ করা সম্ভব হয়নি।
একই গ্রামের অপর কৃষক সোহেল খান বলেন, তাদের গ্রাম থেকে পয়সাগাঁও গ্রাম হয়ে বালিগাঁও খাল পর্যন্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য ছোট খালগুলো কেটে পানি নামার ব্যবস্থা করে দিলে তারা আলু চাষ করতে পারতেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান-উদ-দৌলা জানান, এ উপজেলায় মোট কৃষিজমির পরিমাণ ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। এর মধ্যে ৩ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলায় এখন পর্যন্ত মাত্র ২০-২৫ হেক্টর কৃষিজমিতে আলু রোপণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত কী পরিমাণ জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর সঠিক পরিসংখ্যান তাঁর কাছে নেই।
এ ব্যাপারে বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) অজয় কুমার রায় বলেন, মুন্সীগঞ্জে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তারা ৩০ কিলোমিটারের মতো খাল খনন করেছেন। ২৩-২৪ অর্থবছরে কোনো খাল খনন হয়নি। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে লৌহজং উপজেলার জাঙ্গালিয়া খাল খনন প্রকল্প নিয়ে তারা কাজ করছেন।
বাংলা স্কুপ/ প্রতিনিধি/ এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স