ঢাকা , বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অর্থনীতি সামাল দিতে জ্বালানি খাত পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ১৮-১২-২০২৪ ১২:২৪:৩৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৮-১২-২০২৪ ১২:২৪:৩৮ অপরাহ্ন
অর্থনীতি সামাল দিতে জ্বালানি খাত পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ
বাশার আল-আসাদের দুই যুগের শাসনামলের বড় একটি সময় জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল ছিল সিরিয়ার অর্থনীতি। ২০১০ সালে যখন সমগ্র অঞ্চলে আরব বসন্তের হাওয়া লাগে, তখন দেশটির জিডিপির পাঁচ ভাগের এক ভাগ ছিল জ্বালানি তেলনির্ভর। তখন দেশটির রফতানির অর্ধেক ছিল এ জীবাশ্ম সম্পদ। এমনকি জ্বালানি তেল থেকে হতো রাষ্ট্রীয় আয়ের অর্ধেকের বেশি সংস্থান। পরবর্তী সময়ে বছরের পর বছর যুদ্ধ খাতটিকে ধ্বংস করে দেয়। এখন আসাদের মস্কো পালিয়ে যাওয়ার পর নতুন সরকারের অর্থনৈতিক সাফল্য অনেকটা নির্ভর করছে খাতটির পুনরুজ্জীবনের ওপর। তবে এর ওপর প্রভাব ফেলবে আন্তর্জাতিক সহায়তা, ভূরাজনীতি, নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল সরকার ব্যবস্থা।

সম্প্রতি দ্য ন্যাশনালে সিরিয়ার জ্বালানি খাতের ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করেছেন পরামর্শক সংস্থা কামার এনার্জির প্রধান নির্বাহী রবিন এম মাইলস। সেখানে পুরনো তথ্য ঘেঁটে তিনি দেখান যুদ্ধের আগে সিরিয়া প্রতিদিন প্রায় চার লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন করত, যা ২০০২ সালে ছয় লাখ ব্যারেল ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু যুদ্ধে খনি অবকাঠামোর অনেক অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক তথ্যানুযায়ী, সিরিয়ায় জ্বালানি তেল উত্তোলন দৈনিক ৪০-৮০ হাজার ব্যারেলে নেমে এসেছে।

সিরিয়ায় দুটি এলাকায় রয়েছে প্রধান জ্বালানি তেলের উৎসগুলো। কুর্দিপ্রধান উত্তর-পূর্ব অঞ্চল হাসাকাহর কাছাকাছি এলাকা ও ইউফ্রেটিস নদীর পাশ দিয়ে ইরাক সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত দেইর এজজরের আরবপ্রধান পূর্বাঞ্চল। রাক্কার কাছাকাছি রয়েছে একগুচ্ছ ছোট তেলক্ষেত্র। এছাড়া আরো দক্ষিণে প্রাচীন পালমিরা এলাকায় সিরিয়ার গ্যাস ক্ষেত্রের বেশির ভাগের অবস্থান।

একসময় সিরিয়ার খনি শিল্পে বিদেশী কোম্পানির উপস্থিতি ছিল। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী ও উচ্চ সালফারযুক্ত জ্বালানি তেল উত্তোলন করত সিরিয়ান পেট্রোলিয়াম কোম্পানি (এসপিসি)। কিছু এলাকা ছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক গালফস্যান্ডস পেট্রোলিয়ামের অধীনে। দেইর এজজর এলাকায় উচ্চমানের জ্বালানি তেল উত্তোলন করত শেল ও টোটাল এনার্জিস। এ তেলক্ষেত্রগুলো পরে আইএসআইএস দখল করে নেয় এবং ২০১৫ সালে মার্কিন বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মূলত সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় জ্বালানি সরবরাহ করত গ্যাস ক্ষেত্রগুলো। দেশটির গ্যাস উত্তোলন ব্যবস্থা জ্বালানি তেলের তুলনায় অনেকটা ভালো ছিল। তবে ২০১০ সালের ৮৪০ কোটি ঘনমিটার থেকে গত বছর তা নেমে আসে ৩০০ কোটি ঘনমিটারে।

যুদ্ধ চলাকালে জ্বালানি তেল ব্যবসায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। আসাদ সরকারের কাছে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে কিছু বিক্রি করা হতো। বাকি অংশ তুরস্ক সীমান্ত হয়ে পাচার ছাড়াও স্থানীয়ভাবে পরিশোধনাগার অথবা ইরাকের কুর্দিস্তানে পরিশোধনের জন্য পাঠানো হতো। তবুও আসাদ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোয় প্রয়োজনীয় জ্বালানির ৮০ শতাংশই আমদানি করতে হতো। এছাড়া বানিয়াস ও হোমসে অবস্থিত দেশটির প্রধান দুটি পরিশোধনাগার যুদ্ধ ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

২০১৪ সাল থেকে সহজ ঋণ শর্তে সিরিয়ায় প্রতিদিন গড়ে ৫০-৮০ হাজার ব্যারেল জ্বালানি তেল সরবরাহ করত ইরান। তবে বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সে প্রবাহ বন্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে। শিগগিরই দেশটিতে শীত তীব্র হবে, কিন্তু জ্বালানি মজুদ রয়েছে এক মাসের।

এরই মধ্যে নতুন সরকার এসপিসিকে পুনরায় জ্বালানি তেল উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছে। তবে উত্তোলনই শেষ কথা নয়। কারণ নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি প্রাপ্তিতে চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার স্থগিতাদেশ। এক্ষেত্রে কাতার ও তুরস্কের মতো মিত্র দেশ অর্থ দিতে পারে অথবা ছাড় বা লেট পেমেন্টে জ্বালানি সরবরাহ করতে পারে।

২০২০ সালে আরোপিত মার্কিন সিজার আইন আগামী শুক্রবার মেয়াদোত্তীর্ণ হতে যাচ্ছে। তবে এটি নবায়ন হলে পরিস্থিতি ভিন্ন হবে। কারণ মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সরানো একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং এতে অনেক বছর সময় লাগে, যা ইরাক ও লিবিয়ার ক্ষেত্রে দেখা গেছে।

বাসিল আবদুল আজিজ সম্প্রতি সিরিয়ার নতুন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন। জ্বালানি প্রকৌশল বিষয়ে তার ডিগ্রি রয়েছে। সম্ভবত তার ওপর জ্বালানি সরবরাহ ঠিক রাখার দায়িত্ব পড়বে। এখন সিরিয়ার অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের প্রথম পদক্ষেপ হবে গ্যাস উত্তোলন পুনরুজ্জীবন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ আরো উন্নত করা। একই সঙ্গে জ্বালানি তেল উত্তোলন বৃদ্ধি ও পরিশোধনাগারগুলো পুনরায় চালু করতে হবে। কারণ এর ওপর স্থানীয় জ্বালানি চাহিদা ও সরকারের আয় নির্ভরশীল।

রবিন এম মাইলসের মতে, প্রযুক্তিগতভাবে বিদ্যমান তেলক্ষেত্র পুনরুদ্ধার এবং উত্তোলন বাড়ানোর অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছোট ও গভীর তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করা যেতে পারে। এছাড়া সিরিয়ার সম্ভাবনাময় উপকূলীয় এলাকায় এখনো তেমনভাবে অনুসন্ধান হয়নি।

অবশ্য উত্তোলন ও অনুসন্ধান ব্যবস্থা নতুন করে সাজাতে হবে আসাদ-পরবর্তী সরকারকে। কারণ নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পুরনো কোম্পানিগুলো ফিরে আসতে আগ্রহী নাও হতে পারে। ২০১১ সালে দেশটিতে কার্যক্রম স্থগিত করেছিল শেল, টোটাল এনার্জিস ও সানকর। তবে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি গালফস্যান্ডস ও চীনের সিনোকেমের মতো প্রতিষ্ঠান নতুন করে ভাবতে পারে।

জীবাশ্ম জ্বালানির উৎসের পাশাপাশি পরিবহন কেন্দ্র হিসেবেও সম্ভাবনাময় দেশ সিরিয়া। দেশটি হয়ে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা পাইপলাইনটি পুনরায় চালু করা হলে ইরাকের জন্য বিকল্প রফতানি পথ তৈরি হতে পারে। ইসরায়েলের কারণে রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল হলেও সিরিয়া হয়ে মিসরীয় গ্যাস লেবাননে সরবরাহের পরিকল্পনাটি এখনো অসম্ভব নয় বলা হচ্ছে বিশ্লেষণে।

বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ