উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি # কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে না রাখার পক্ষে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
১৭-১২-২০২৪ ০৮:০০:১৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১৭-১২-২০২৪ ০৮:০০:১৯ অপরাহ্ন
সংবাদচিত্র : সংগৃহীত
বিসিএসে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডার হিসেবে না রেখে এ দুই ক্যাডারকে আলাদা করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এ ক্ষেত্রে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মতো স্বাস্থ্য ও শিক্ষার জন্য আলাদা কমিশন করার পক্ষে সংস্কার কমিশন।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সচিবালয় বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে জনপ্রশাসনের সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভায় কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সদস্যসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এ কথা জানান।
জনপ্রশাসনে উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতির সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ সুপারিশ করা হচ্ছে। বর্তমানে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নেওয়া হয়। কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ করবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া চাকরির জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রথা উঠিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছেন কমিশন-প্রধান।
কমিশনের প্রধান বলেন, শিক্ষা ক্যাডারটা অযৌক্তিক। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা আলাদা। আমরা সুপারিশ করছি, এটি ক্যাডার রাখা যাবে না। যেমন, একজন চোখের ডাক্তার, একজন দাঁতের ডাক্তার, আরেকজন জেনারেল ফিজিশিয়ান, পদোন্নতি কি তাঁরা একসঙ্গে পাচ্ছেন? পাচ্ছেন না। সে জন্য আমরা বলেছি, এটা ক্যাডারে রাখা যাবে না। এটা আমাদের চিন্তা যে এটা ক্যাডার করা অযৌক্তিক হয়েছে। এগুলোকে আলাদা করতে হবে। বেতন বাড়িয়ে দেওয়া হোক, এটা বিশেষায়িত বিভাগ। এই দুই বিভাগ ছাড়া বাকি সবই ক্যাডার থাকতে পারবে। কিন্তু এই বিভাগে এটা সম্ভব নয়। আমাদের ধারণা এটা। এখন আমরা আলাপ-আলোচনা করব।
এ সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে সরে গিয়ে আমাদের জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন আলাদা হয়েছে। ঠিক এ রকম আমরা স্বাস্থ্য কমিশন আলাদা ও শিক্ষা ক্যাডারকে আলাদা করার পরামর্শ দিয়েছি।
উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির বিষয়ে মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, পরীক্ষা ছাড়া আর কেউ পদোন্নতি পাবেন না। পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষা নেবে। ৭০ নম্বর না পেলে পদোন্নতি পাবেন না। প্রতিটি স্তরে (উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত) এটি হবে না। উপসচিব ও যুগ্ম সচিব এই দুই পর্যায়ে হবে। এরপরের পর্যায়ে সরকার পদোন্নতি দিতে পারবে। কমিশন-প্রধান বলেন, আর যে পরীক্ষা হবে, সেখানে যদি একজন কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তা সবচেয়ে বেশি নম্বর পান, তিনি তালিকায় এক নম্বরে চলে আসবেন। উপসচিবের তালিকায় তিনি এক নম্বরে আসবেন।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে বিভাগ করার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই সব এলাকার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কার কমিশন দুটি বিভাগ করার পরামর্শ দেবে। এ সময় সচিব বলেন, এই দুটি বিভাগ করতে গেলে দু-একটা জেলা এই বিভাগ থেকে ওই বিভাগে দিতে হবে, আমরা ম্যাপ করে দিয়েছি। একটি ম্যাপ দেখলেই বোঝা যাবে, সামনে ১০টি বিভাগ এবং কোন কোন জেলাকে কোন জায়গায় দেওয়া হয়েছে। সব বিভাগকে টাচ করা হয়নি। এখানে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামকে টাচ করা হয়েছে, যাতে কুমিল্লা, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ সে রকম হয়। এটা একটা বড় সিদ্ধান্ত। আমরা দিয়েছি, সরকার যদি মনে করে ১০টা বিভাগ করবে, ভালো।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আরও বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশন কোথাও থাকবে না, এয়ারপোর্টেও থাকবে না। প্রত্যেক নাগরিকের পাসপোর্ট পাওয়ার অধিকার আছে। সচিবালয় বিটে কর্মরত অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকরা সচিবালয় ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা এবং সচিবালয়ের ভেতর অবস্থিত পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারবেন বলে মন্তব্য করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেছুর রহমান। সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা এ সপ্তাহেই একটা আদেশ জারি করবো। এ আদেশের মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচিবালয় থেকে যে স্বাস্থ্যসেবা পান সেই সেবাটা সাংবাদিকরাও পাবেন। তবে এই সেবা পেতে অবশ্যই অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডধারী হতে হবে। তিনি বলেন, পাসপোর্ট নবায়নের ক্ষেত্রেও সচিবালয়ের অফিস থেকে যাতে সাংবাদিকরা পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারে আমরা সেই ব্যবস্থা করব।
সাংবাদিকদের তোপের মুখে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে সাংবাদিকদের তেমন ভূমিকা ছিল না— এমন মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়েছেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। এ সময় অডিটোরিয়ামে ‘তার বক্তব্য শুনতে চাই না’ বলে দাবি উঠে। মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এক মতবিনিময় সভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে এ ঘটনা ঘটে। সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানের এমন বিতর্কিত মন্তব্যের পর হট্টগোল শুরু হয় অডিটোরিয়ামে। এ সময় সাংবাদিক নেতারা ‘ছাত্র-আন্দোলনে তাদের ভূমিকা ছিল’ উল্লেখ করে কমিশনের চেয়ারম্যানকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। সাংবাদিকরা বলেন, ওই আন্দোলন ছিল সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের। আন্দোলনে আমাদের সন্তানেরাও মাঠে ছিল। আমাদের বহু সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। অনেকে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়েছেন, কিন্তু রাষ্ট্র সে বিষয় কোনো উদ্যোগ নেয়নি। পরে নিজের বক্তব্য সংশোধন করে মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, আমি আসলে এভাবে বলতে চাইনি। আমি বলতে চেয়েছি, ছাত্ররা বেশি ভূমিকা রেখেছে কিন্তু আমরা সেভাবে রাখতে পারিনি। কমিশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-প্রতিনিধি ও লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানও কমিশনের চেয়ারম্যানের বিতর্কিত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমা চান।
বাংলাস্কুপ/ প্র্রতিবেদক/এএইচ/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স