সাগরে হতাশ জেলেরা
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
০৫-১২-২০২৪ ০৩:৫৫:০২ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০৫-১২-২০২৪ ০৩:৫৫:০২ অপরাহ্ন
সাগরে মাছ শিকার করতে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশ বরগুনার জেলেরা। শুধু জেলে নয়, মাছ না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মৎস্য ব্যবসায়ী ও ট্রলার মালিকরাও। এ অবস্থায় ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে অনেক ট্রলার মালিক বাধ্য হয়ে বন্ধ রেখেছেন মৎস্য শিকার। এদিকে মাছের অভাবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণকেন্দ্র পাথরঘাটায় রাজস্ব আদায়েও দেখা দিয়েছে বড় ধরনের ঘাটতি।
পাথরঘাটার মৎস্য অবতারণ কেন্দ্রে ঘুরে দেখা যায়, মাছ বিক্রির হাঁকডাকে সরগরম থাকার কথা থাকলেও মাছ নেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। সাগর থেকে ফিরে আসা ট্রলারগুলোয় মাছ কম থাকায় হতাশার শেষ নেই জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের। খরচের টাকা না ওঠায় প্রতি ট্রিপেই বাড়ছে ঋণের বোঝা। ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা, পরিবারের ভরণপোষণ নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলেরা। মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে কাঙ্ক্ষিত মাছ না পাওয়ায় কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ জেলে ও ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে সাগরে মাছ না পাওয়ার ঘাটে বেধে রাখা হয়েছে সারি সারি ট্রলার।
মৎস্য অবতরণকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে প্রতিদিন বিক্রি হওয়া মাছের মোট দামের সোয়া এক শতাংশ রাজস্ব আদায় করে সরকার। গড়ে প্রতিদিন কোটি টাকার মাছ বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকার মাছ। এতে এ অবতরণকেন্দ্রে কমেছে রাজস্ব আদায়। গত দুই দিনে এ অবতরণকেন্দ্র থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র এক লাখ টাকা।
জেলেদের অভিযোগ, সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা প্রতিবেশী দেশের সাথে মিলিয়ে না দেয়ার ফলে নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে অবাধে মাছ ধরে নেয় প্রতিবেশী দেশের জেলেরা। আবার নিষেধাজ্ঞার সময় কিছু ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ার সুযোগ পেলেও নিষেধাজ্ঞার পরে অবৈধ ট্রলিং ট্রলারের জালে আটকে পড়ছে ডিম ও ছোট ছোট পোনা মাছ। এর ফলে ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছই বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে। জেলেরা অভিযোগ করে আরও বলেন, এই ট্রলিংগুলো প্রভাবশালীদের হওয়ার প্রশাসন নিশ্চুপ থাকে। এদের থামানোর মতন কেউ নেই।
সাগরে মাছ না পেয়ে আক্ষেপ করে জেলে মো. ইউসুফ বলেন, আগে নিষেধাজ্ঞার পরে সাগরে প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। এবার সাগরে কোন মাছই নেই। সাধারণত অবরোধের সময় ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ে এবং বাচ্চাগুলো ছোট থাকে। সাগরে এত পরিমাণ ট্রলিং বোট চলে যে সামান্য মাছের ডিমও ওদের জালে আটকা পড়ে। সব ছোট মাছ ওদের জালের সাথেই মরে যায়। এ অবস্থা চললে ইলিশ মাছ ভবিষ্যতে আর থাকবে না।
ট্রলার মালিকদের দুর্দশা নিয়ে আব্দুল মান্নান মাঝি বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছ না পেয়ে অনেক ট্রলারমালিকই তাদের বোট ঘাটে বেঁধে রেখেছেন। বর্তমানে একটা ট্রলার সাগরে পাঠাতে প্রায় ৫ লক্ষ টাকার বাজার লাগে সেখানে অনেক বোটে ৫০ হাজার টাকার মাছ ও পাচ্ছেনা। আমার দেখা অনেক ট্রলার মালিক ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা লস দিয়েছেন এই এক মাসে। পোষাতে না পেরে এখন অনেকেই ট্রলার বন্ধ করে রাখছেন।
মৎস্য অবতারণকেন্দ্রের পাইকার কামাল বলেন, ট্রলিং বোটসহ, ঘোপ, বাদা ও নেট জালের কারণে ছোট বড় সব রকমের মাছে মেরে ফেলছে। আমাদের বাঙালিদের আগে বলতো মাছে ভাতে বাঙালি, এখন আমরা বলি পানি ভাতে বাঙালি। সাগরে মাছ না পাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে এই ট্রলিং বোট। এই অবৈধ ট্রলার এখন আমাদের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো বন্ধ না করলে ইলিশের মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হারিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শুধু গল্প শুনিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা মৎস্য অবতারণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লে: কমান্ডার জি এম মাসুম শিকদার বলেন, জেলেরা সাগরে গিয়ে মাছ তেমন একটা পাচ্ছেনা। ফলে বলতে গেলে তারা খালি হাতেই ফেরত আসছে। তাই পাথরঘাটা অবতারণকেন্দ্রে মাছ কম আসায় রাজস্ব আদায়ও কম হচ্ছে। পাশাপাশি ইলিশ নেই বললেই চলে। তবে আশা করছি খুব শিগগিরিই এই সংকট কেটে উঠবে।
বাংলা স্কুপ/ প্রতিনিধি/ এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স