ঢাকা , শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​প্রভাবশালীর গ্রুপের দাপটে হুমকির মুখে জাপানি বিদ্যুৎকেন্দ্র

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ০৫-১২-২০২৪ ০১:১১:৫৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৫-১২-২০২৪ ০১:১১:৫৭ অপরাহ্ন
​প্রভাবশালীর গ্রুপের দাপটে হুমকির মুখে জাপানি বিদ্যুৎকেন্দ্র
নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে একই সময়ে গড়ে ওঠা সামিটসহ আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন শুরু করেছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গ্রুপ হওয়ায় ওই কেন্দ্র দুটি চালু হয়েছে। অথচ সব রকমের প্রস্তুতি থাকার পরও অদৃশ্য কারণে জাপানের বিনিয়োগে গড়ে ওঠা এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এখনো উৎপাদনে যেতে পারেনি।
অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের বন্ধুরাষ্ট্র জাপানের বিনিয়োগ। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করে এখন বিপাকে পড়েছে জাপানভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি জাপানস এনার্জি ফর এ নিউ এরা (জেরা)। ২০১৯ সালে জাপানের এই কোম্পানি মেঘনাঘাট যৌথ (কম্বাইন্ড সাইকেল) জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরু করে। বাণিজ্যিক অপারেশনের জন্য গত ২৬ অক্টোবর পরীক্ষামূলক উৎপাদনও করে। কিন্তু তিতাস থেকে গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পারছে না কেন্দ্রটি। এরই মধ্যে এ প্রকল্পে জেরা ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। প্রকল্পটির বিনিয়োগে জেরা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনসহ একাধিক জাপানিজ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে একই সময়ে গড়ে ওঠা সামিটসহ আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন শুরু করেছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গ্রুপ হওয়ায় ওই কেন্দ্র দুটি চালু হয়েছে। অথচ সব রকমের প্রস্তুতি থাকার পরও অদৃশ্য কারণে জাপানের বিনিয়োগে গড়ে ওঠা এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এখনো উৎপাদনে যেতে পারেনি। জানা গেছে, মেঘনাঘাটে সামিট মেঘনাঘাট-২ বিদ্যুৎকেন্দ্র চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল এবং অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি উৎপাদন শুরু করেছে। কিন্তু জেরা মেঘনাঘাটে গ্যাস সরবরাহ করা হয়নি। ফলে তারা বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পারছে না। বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে না পারলেও জেরাকে গুনতে হচ্ছে বিপুল পরিমাণ ঋণের কিস্তি। সম্প্রতি জেরার পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে গ্যাস সরবরাহ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করেও প্রয়োজনীয় গ্যাস পাচ্ছে না জেরা। এ অবস্থায় বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা যেতে পারে এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগে তারা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। তারা বলছেন, শিগগির কেন্দ্রটি চালু করতে চুক্তি অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা প্রয়োজন।
জেরা মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের হেড অব কন্ট্রাক্টস অ্যান্ড কমার্শিয়াল স্মিতেশ বৈদ্য বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পারবে, যদি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা হয়। তিনি বলেন, এই প্রকল্পটি সর্বাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর, অত্যন্ত কর্মদক্ষ টারবাইন এবং প্রতিযোগিতামূলক দামে বাংলাদেশের জাতীয় পাওয়ার গ্রিডে যুক্ত হবে। আমাদের বিশ্বাস, বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে এই কেন্দ্রটি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, জেরার বিদ্যুৎকেন্দ্রে অবশ্যই গ্যাস দেওয়া উচিত। তা না হলে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এদিকে, পেট্রোবাংলা ও তিতাস গ্যাসের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা জানান, এটা সরকারের ওপরের নির্দেশনার বিষয়। তারা নির্দেশনা পেলে সেই অনুযায়ী কাজ করবেন।
প্রায় ৩৫ একর জমির ওপর ২০১৯ সালে মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেড প্রকল্পের কাজ শুরু করে জেরা। জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই) থেকে প্রধান সরঞ্জাম ক্রয় এবং স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি করপোরেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রকিউরমেন্ট এবং নির্মাণ চুক্তির ভিত্তিতে প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হলেও সরকারের গ্যাসলাইন সঞ্চালন লাইন চালু করতে ধাপে ধাপে বিলম্বের মুখে পড়ে। সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় জেরা নিজ খরচে শাখা পাইপলাইন বসাতে বাধ্য হয়। নানা ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে ৮ মাস আগে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যায়।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ অক্টোবর বাণিজ্যিক অপারেশনের জন্য এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সপ্তাহব্যাপী পরীক্ষামূলক উৎপাদন রেকর্ড করা হয়। পরীক্ষামূলক উৎপাদনের শেষ দিন ১০০-১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবাহ করা হয় এবং ৮০০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন রেকর্ড করা হয়। পরীক্ষার পঞ্চম দিনে ৫৪০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৯০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ রেকর্ড করা হয়। গত চার মাসে বিভিন্ন মাত্রায় এখানে তিতাসের গ্যাস ব্যবহার করা হয়। ইতোমধ্যে জেরা তিতাসের সব বিল পরিশোধও করেছে।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সরকারের সঙ্গে জেরার আনুষ্ঠানিক চুক্তিপত্র সম্পাদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে গ্যাস কিনে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে কেন্দ্রটি ২২ বছর পিডিবিকে সরবরাহ করবে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ তারা বিক্রি করবে ৭ দশমিক ৩১২৩ সেন্ট বা ৫ টাকা ৮৪ পয়সা দরে। এই কেন্দ্র বাণ্যিজিক উৎপাদনে যাওয়ার পর উৎপাদিত ৪০০ ভোল্টের বিদ্যুৎ পিজিসিবির মেঘনাঘাট সাব-স্টেশন হয়ে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জেরা মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেড ডিসেম্বরের মধ্যে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যেতে মন্ত্রণালয়, পিডিবি এবং পেট্রোবাংলার কাছ থেকে সহায়তা চেয়েছে। জাপানের অর্থায়নে বাংলাদেশে বেশ কিছু অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। ওইসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিতে নানাভাবে অবদান রাখছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অত্যাধুনিক সুবিধা, সবচেয়ে দক্ষ টারবাইন এবং কম শুল্কসহ জেরা মেঘনাঘাট প্রকল্প বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার জন্য একটি বড় উদাহরণ সৃষ্টি করবে।
জেরা জাপানের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন দেশে বর্তমানে প্রায় ৬১ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করছে। এর মধ্যে জাপানের বিদ্যুতের ৩০ শতাংশ এবং ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্যান্য দেশে ১৩ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে জেরা। জেরা নিজেদের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের পাশাপাশি ১৫টি দেশে এলএনজি সরবরাহ করছে।
সূত্র: কালবেলা

বাংলা স্কুপ/ ডেস্ক/ এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ