বিমানের সেবা নিয়ে অসন্তুষ্টি-ক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
০২-১২-২০২৪ ০৭:৪২:৩৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০২-১২-২০২৪ ০৭:৪২:৩৫ অপরাহ্ন
সংবাদচিত্র : সংগৃহীত
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের 'তৃতীয় টার্মিনাল : সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ' বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বৈঠকে শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ এবং টার্মিনাল-২-এ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা নিয়ে অসন্তুষ্টি এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অংশীজনেরা। বিমানের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান দিয়ে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা। এভিয়েশন এন্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ -এটিজেএফবি'র আয়োজনে 'তৃতীয় টার্মিনাল :সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠক সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর লা মেরিডিয়ান ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এভিয়েশন অপারেটর'স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) সেক্রেটারি জেনারেল ও নভোএয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এটিজেএফবির সভাপতি তানজীম আনোয়ার।
বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফ, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়াসহ শাহজালাল বিমানবন্দরের অংশীজনেরা অংশগ্রহণ করেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ে সক্ষমতার বিষয়টি আমরা দেখব। দুই বছর যে আমরা হাত দিয়ে বসে থাকবো বিষয়টা এমন নয়। যদি তার সক্ষমতার ঘাটতি হয় বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সময় তিনি তৃতীয় টার্মিনাল চালু হতে আরও এক বছর লাগবে বলে জানান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিমানের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হেন্ডলিং মতো সক্ষমতা আছে কি নেই, এটা প্রাথমিকভাবে পারসেপশনের একটি বিষয়। তার কারণ, বিমানের এতো দিন যে সার্ভিস আমরা পেয়ে আসছি সেটা মনপুত না। একটি কমন অভিযোগ, আমি টিকিট পাই না কিন্তু বিমানে উঠে দেখি পুরো বিমান ফাঁকা। বিমান যেহেতু এখন আমার দায়িত্বে, সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে সেগুলো নিয়ে গতকাল আলোচনা করেছি। শুধু আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না, আমি এগুলোর ইনেশপেকশনে যাই। আমাকে আপনার মুভিং কন্ট্রোল রুম বলতে পারেন। যদি বিমানের সক্ষমতার অভাব হয়, সেটার বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করবো।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, এখন পর্যন্ত ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল তৈরিতে ২৩ হাজার কোটি খরচ হয়েছে। একটি কি-নোট পেপারে দেখলাম দূর্নীতি না হলে এত টাকা খরচ হওয়া কথা না। নিশ্চয়ই আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। তিনি বলেন, হাসান আরিফ বলেন, সব কিছুতেই সংস্কারের একটি বিষয় আসছে। দুদকও সংস্কার করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বিষয় যেটি বিগত সরকারের ১৭ বছরে ঘটেছে, সেগুলোর শ্বেতপত্র আসছে। সেভাবে বিমানেরও শ্বেতপত্র আসবে। শ্বেতপত্র মানে শুধু অভিযোগই আনা না, এটি আত্মশুদ্ধির একটি প্রক্রিয়া।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালসহ দেশের সব টার্মিনালগুলোকে উন্নত করার জন্য বেবিচক কাজ করছে। এসব টার্মিনালের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য উপদেষ্টার সাথে আমাদের কথা হয়েছে। এখন শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল চালু জাতির কাছে একটা স্বপ্ন। তবে এজন্য বেবিচক বসে নেই। সংশ্লিষ্ট সবাই কাজ করে যাচ্ছেন।
এর আগে প্রবন্ধে এভিয়েশন অপারেটর'স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল ও নভোএয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বিমানের জিম্মায় তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা দুই বছরের জন্য প্রদানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জোর বিতর্ক চলমান এবং তা যৌক্তিক। তৃতীয় টার্মিনাল অপারেশনের ক্ষেত্রে যেন রাজনীতির উপর অপারেশনাল বিষয় প্রাধান্য পায় তার জোর দাবি রাখব। তিনি বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা এবং টার্মিনাল অপারেশন উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বর্তমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং মনোপলি ভেঙ্গে একাধিক কোম্পানিকে দেয়া হোক। এখানে বিমান প্রসঙ্গ নয়, বরঞ্চ গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার মনোপলি ভাঙ্গা সম্ভব হলে চূড়ান্ত বিচারে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। আর অন্য অপারেটরের সাথে যোগ্য বিবেচনা হলে বিমানকেও জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। এতে দেশ এবং জনগণ একধারে আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং উন্নত সেবা পাবে।
এয়ারলাইন্স অপারেটরস কমিটির ঢাকার (এওসি) চেয়ারপারসন দিলারা হোসেন বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে যেসব অভিযোগ শুনেছি এখনো একই ধরনের অভিযোগ আসছে। এই বিমানবন্দরে ক্রমেই বিদেশি এয়ারলাইন্স বাড়ছে। কিন্তু গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং এর সেবার মান বাড়ছে না।
গোলটেবিলে বেবিচকের সদস্য (অপারেশন্স এন্ড প্ল্যানিং) এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মেহবুব খান, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম, এয়ার এ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফ, কাতার এয়ারওয়েজের কার্গো ম্যানেজার সুহেদ আহমেদ চৌধুরী, বিশিষ্ট এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ উইং কমান্ডার এটিএম নজরুল ইসলাম, লা মেরিডিয়াল বাংলাদেশের জেনারেল ম্যানেজার কনস্টান্টিনোস গ্যাভরিয়েল, বেঙ্গল এয়ারলিফটের গ্রুপ সিইও বাহাউদ্দিন মিয়া, থাই এয়ারওয়েজের এয়ারপোর্ট সার্ভিস সুপারইন্টেন্ডেন্ট সৈয়দ ইয়াসেরুল আলম, এয়ার ইন্ডিয়ার এয়ারপোর্ট ম্যানেজার শয়নদেব ঘোষ, তার্কিশ এয়ারলাইন্সের স্টেশন ম্যানেজার সেরকান অ্যাকেন, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জিএম-জনসংযোগ কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট কবির আহমেদ ছাড়াও দেশি বিদেশী এয়ারলাইন্স, ট্যুর অপারেটর, ওটিএ’র প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন
বাংলাস্কুপ/ প্রতিবেদক/ এএইচ/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স