ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ , ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​ডিপিডিসির সিদ্ধিরগঞ্জ ডিভিশন

বিদ্যুতের গ্রাহককে জিম্মি করে কোটিপতি প্রকৌশলী সলিম উল্লাহ

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ৩০-১১-২০২৪ ০৬:৩৪:৩৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০১-১২-২০২৪ ০৩:৫৭:৩৪ অপরাহ্ন
বিদ্যুতের গ্রাহককে জিম্মি করে কোটিপতি প্রকৌশলী সলিম উল্লাহ
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) সিদ্ধিরগঞ্জ ডিভিশনের গ্রাহকদের জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই ডিভিশনের আওতায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ১৪০টি। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ মালিক এই চক্রের শিকার হচ্ছেন। বিল বকেয়া থাকলেই তাদেরকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয় বিপুল অর্থ। গ্রাহকদের নতুন সংযোগ যুক্ত করে দেওয়ার প্রলোভন এবং উচ্চচাপ সংযোগকে পাশ কাটিয়ে নিম্নচাপ সংযোগের কথা বলেও অবৈধ অর্থ আদায় করা হয়। ফাইল বাণিজ্য, মিটার পরিবর্তন করেও ব্যাপক টাকার চাঁদাও আদায় করা হচ্ছে। আর এই সমস্ত অবৈধ কর্মকাণ্ড করেই কোটিপতি বনে গেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ ডিভিশনের সহকারী প্রকৌশলী মো: সলিম উল্লাহ। ডিপিডিসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ানকে ম্যানেজ করেই তিনি এসব করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর বর্তমানে সেলিম উল্লাহর মাথায় রয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী ও ডিপিডিসির সাউথ বেল্টের প্রধান প্রকৌশলীর আশির্বাদের হাত।
জানা গেছে, স্টিলমিল, টেক্সাইল, রি-রোলিং মিল, গার্মেন্টসসহ ১৪০টির মতো ছোট বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ ডিভিশনে। এসব কারখানার বিদ্যুৎলাইন, নতুন সংযোগ ও বকেয়া বিল আদায়ের বিষয়টি দেখভাল করেন সলিম উল্লাহ। ওই সব কারখানায় বকেয়া পড়ে আছে কোটি কোটি টাকা। সেলিম উল্লাহ এসব কারখানায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকার মাসোয়ারা আদায় করেন। যাদের বকেয়া বেশি সেই সব ফ্যাক্টরির মালিকদের থেকে নেন ৫০ হাজার টাকা।  
জানা গেছে, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকদের লাইন বিচ্ছিন্ন করলেই ডিপিডিসির নীতিমালা অনুসারে পুন:সংযোগের জন্য ১১ হাজার টাকা ব্যাংকে পরিশোধ করার কথা রয়েছে। কিন্তু কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই সলিম সংযোগ দিয়ে দেয়। এতে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে পকেট ভরছেন সলিম উল্লাহ। এ ছাড়াও মিটার টেম্পারিং থেকে মাসোয়ারা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।  
ডিপিডিসির এইচআর দপ্তরের নথি থেকে জানা যায়, তাঁর চাকরি জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে পোস্তগোলা ডিভিশনেই। ঘুরে ফিরে পোস্তগোলা ডিভিশনে কর্মরত থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে সেখানে রয়েছে অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ। পোস্তগোলা ডিভিশন থেকেই তিনি রাতারাতি বনে যান কোটি কোটি টাকার মালিক। সিদ্ধিরগঞ্জ ডিভিশনে যোগদান করার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সলিম উল্লাহকে।
সিদ্ধিরগঞ্জ ডিভিশন সূত্র জানায়, অনিয়ম, গ্রাহক হয়রানি ও গ্রাহকের সঙ্গে অসদাচারণ করা সলিম উল্লাহর নিত্যদিনের ঘটনা। এখানেই শেষ নয়। উচ্চচাপ গ্রাহকদের বিদ্যুতের সংযোগ পেতে হলে তাঁর কাছ থেকেই সাবস্টেশন ও সোলার প্লান্ট কিনতে হয়, নইলে মেলে না বিদ্যুৎ সংযোগ। এমনকি, এই কর্মকর্তা টাকা পেলেই উচ্চচাপ সংযাগকে পাশ কাটিয়ে নিম্নচাপ সংযোগ দিতে দ্বিধাবোধ করেন না। ৬০ থেকে ৭৮ কিলোওয়াট নিম্নচাপ বিদ্যুৎ সংযোগে এই প্রকৌশলী দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে থাকেন। তাঁরা আরো জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী ও ডিপিডিসির সাউথ বেল্টের প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে রয়েছে সলিম উল্লাহর রয়েছে বিশেষ সম্পর্ক। আর এর প্রভাবেই তাঁর দৌরাত্ম্য এখনও থেমে নেই। 
ডিপিডিসির এইচআর সূত্রে জানা যায়, সেলিম উল্লাহর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ আসার পরও ডিপিডিসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ানের সঙ্গে বিশেষ ঘনিষ্ঠতার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারেনি। সূত্র আরো জানায়, গত বছরের শেষদিকে তাঁর বদলির বিষয়ে এইচআর দপ্তর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বদলির আদেশ হওয়ার আগেই তা আটকে দিতে সক্ষম হন সেলিম উল্লাহ।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সহকারী প্রকৌশলী সলিম উল্লাহ বলেন, তিনি কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন।  অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক পারিবারিক। 
প্রকৌশলী সলিম উল্লাহর অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শের আলী বাংলা স্কুপকে বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। কোন গ্রাহক যদি লিখিত অভিযোগ করে তাহলে তদন্তপূর্বক চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
উল্লেখ্য, ডিপিডিসির সিদ্ধিরগঞ্জের সহকারী প্রকৌশলী মো: সলিম উল্লাহ (আইডি নং-১১৩১৪) এখানে কর্মরত আছেন প্রায় তিন বছর ধরে। তিনি ২০০৮ সালের ৩০ জুন ডেসার আমলে (ডিপিডিসি গঠনের পূর্বে) উপসহকারি প্রকৌশলী পদে চাকরিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি পোস্তগোলা, গ্রিড সাউথ, গ্রিড সাউথ-১, পোস্তগোলা, ডিপিডিসির সচিব দপ্তর, পোস্তগোলা, গ্রিড সাউথ- ২ এ দায়িত্ব পালন করেন। ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জ ডিভিশনে যোগ দেন।

বাংলাস্কুপ/ প্রতিবেদক/ এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ