ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ , ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​ডিপিডিসিতে গোপালগঞ্জের সুজনের দাপট এখনও কমেনি!

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৯-১১-২০২৪ ০৫:৪৩:০২ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৯-১১-২০২৪ ০৫:৪৩:০২ অপরাহ্ন
​ডিপিডিসিতে গোপালগঞ্জের সুজনের দাপট এখনও কমেনি!
আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও থেমে যায়নি তার প্রেতাত্মাদের কীর্তিকলাপ। তাঁরা বহাল তবিয়তেই আছেন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে। সেখানে বসে এখনও তাঁরা করে যাচ্ছেন অনৈতিক সব কর্মকাণ্ড। ঘুষ- দুর্নীতির যে সাম্রাজ্য তারা বানিয়েছেন সেগুলো এখনো চলমান রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাস্কুপের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন একজনের দুর্নীতির চিত্র। যিনি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে ১৭ বছর ধরে গড়েছেন এক অবৈধ সাম্রাজ্য। 

নাম তাঁর সুজন কুমার বিশ্বাস। বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। পিতা বৈকুণ্ঠনাথ বিশ্বাস টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি কমপ্লেক্সের দারোয়ান। এই পরিচয় বেচেই আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলে দাঁপিয়ে বেরিয়েছেন সুজন। ঢাকায় বানিয়েছেন একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাট, গ্রামে কিনেছেন অঢেল সম্পত্তি।

অনুসন্ধানে যায় যায়, ডিপিডিসির সিদ্ধিরগঞ্জ শাখার কম্পিউটার অপারেটর কাম কোঅর্ডিনেটর সুজন কুমার বিশ্বাস (আইডি নং- ২০৭৩২) ডেসার আমলে ২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ডিপিডিসিতে মাস্টাররোল থেকে ২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর চাকরি স্থায়ীকরণ হয়। ২০০৮ সালের ১ জুলাই থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ ডিভিশনে কম্পিউটার অপারেটর পদে প্রায় ১৭ বছর যাবৎ কর্মরত রয়েছেন।

সুজন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। ঘুষ না দিলে কোনো ফাইল খোলেন না তিনি। বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় হওয়ায় এলাকার ‘মাহাত্ম্যে’ তাঁকে কেউ এই দপ্তর ও পদ থেকে সরাতে পারেনি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও একইভাবে বহাল রয়েছেন তিনি। 

সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এইচআর বিভাগের জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের কারণে তাঁকে কর্তৃপক্ষ সরাতে পারেননি। 

ওই ডিভিশন সূত্রে জানা যায়, দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যিনিই আসেন, তাঁর সঙ্গে বিশেষ সখ্য করে সুজন অবৈধভাবে অর্থ উর্পাজন করছেন। তাঁর রয়েছে বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন ও সোলার স্থাপনের ব্যবসা। কোন গ্রাহক তাঁর কাছ থেকে সাব-স্টেশন না নিলে তার উচ্চচাপ সংযোগ মেলে না। এমনকি, তার কাছ থেকে গ্রাহক সোলার প্লান্ট না নিলে ভাগ্যে জোটে না সোলার ছাড়পত্র!

ডিপিডিসির সিদ্ধিরগঞ্জ শাখার অনেক কর্মচারী সুজনের কাছে এখনো জিম্মি। বিদ্যুতের জন্য নতুন আবেদন করা গ্রাহকদের ফাইল সুজনের কাছে অনলাইনের জন্য পাঠানো হয়। ফাইলপ্রতি তিনি ৫০০-১০০০ টাকা করে ঘুষ নিচ্ছেন খোদ নিজের দপ্তরের কর্মচারীদের কাছ থেকেই। ভুক্তভোগী কর্মচারীরা সুজন বিশ্বাস ও নির্বাহী প্রকৌশলীর ভয়ে কোন কথাও বলতে পারেন না। তাঁর বিরুদ্ধে কথা বললে তাদেরকে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এ জন্য বছরের পর বছর ধরে ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি সহ্য  করে গেছেন অন্য কর্মচারিরা। 

তবে মুখ বন্ধ রাখতে পারেননি ভুক্তভুগী গ্রাহকদের। হিরাঝিল এলাকার বাসিন্দা আমির হোসেন, ফরহাদ হোসেন লিটন, সুলতানা, শফিক, আজম বেপারি ও রাবেয়া আক্তার বাংলাস্কুপকে বলেন, কম্পিউটার অপারেটর সুজনকে ঘুষ না দিলে তিনি কোনো ফাইল ধরেন না। মো. সাহাবুদ্দিন নামে এক গ্রাহক বলেন, সুজনের কাছে ফাইল গেলে তাঁর দাবি করা টাকা না পেলে তিনি অনলাইনে ফাইলের কোনো আপডেট তথ্য পোস্টিং দেন না এবং বিদ্যুতের লোড বরাদ্দের পর ডিমান্ডনোটের (ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার কাগজ) কাগজ প্রিন্ট করেন না। প্রিন্টারে কালি নেই, কাগজ নেই, প্রিন্টার নষ্টসহ নানা অজুহাত দিয়ে গ্রাহককে ঘোরাতে থাকেন তিনি। তারা আরও অভিযোগ করেন, এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে কোন অভিযোগ দিলেও প্রতিকার পাওয়া যায় না। 

সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকার বাসিন্দা আলমগীর ও মকবুল হোসেন বলেন, সুজনের ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে যেসব নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন তাদের কাছেও অনেকবার অভিযোগ করেছেন। কিন্তু টুঙ্গিপাড়ার লোক হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে তারাও কোনো ব্যবস্থা নেননি। এতে সুজনের সাহস বেড়ে যায় এবং ঘুষবাণিজ্য চালিয়ে যেতে থাকেন।  

দুই মাস আগে সিদ্ধিরগঞ্জে কর্মরত একদল সংবাদকর্মী সুজনের ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত অধিকারীকে জানালে তিনি বলেন, সুজনসহ যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত, তাদের দ্রুত এই দপ্তর থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধান কার্যালয়ে সুপারিশ করা হবে। কিন্তু বাস্তবে তিনি কোনো ব্যবস্থাই নেননি। 

একাধিক কর্মকর্তা ও প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই দপ্তরে প্রতিদিন গড়ে নতুন বিদ্যুতের জন্য ৩০-৪০টি আবেদনপত্র জমা পড়ে। সুজনকে দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বিভিন্ন অনিয়ম করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এবং সুজন যে ফাইল প্রতি ঘুষ আদায় করেন তার বেশির ভাগ নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত অধিকারীকে সে দিয়ে থাকে।  

ঘুষ বাণিজ্য ও অবৈধ সম্পদের বিষয়ে সুজন বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। 

এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত অধিকারী বলেন, কত লোকে কত কথাই বলবে। সুজন বিশ্বাসের বিষয়ে তিনি বলেন, টপ ম্যানেজমেন্ট ভালো জানেন কে কোথায় কত বছর রয়েছেন। এটি আমার বিষয় নয়।

ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (এডমিন অ্যান্ড এইচ আর) সোনামনি চাকমা বাংলাস্কুপকে বলেন, চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী তিন বছরের বেশি কোন কর্মকর্তাকেই আমরা একই জায়গায় রাখি না। সুজন বিশ্বাসের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এ বিষয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ শুনেছি। ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

বাংলা স্কুপ/ প্রতিবেদক/ এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ