ঢাকা , বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪ , ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​৫৫ বিলিয়ন ডলার বাজার মূলধন হারাল আদানি গ্রুপ

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ২৭-১১-২০২৪ ০৪:১২:২৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৭-১১-২০২৪ ০৫:৪০:৩৭ অপরাহ্ন
​৫৫ বিলিয়ন ডলার বাজার মূলধন হারাল আদানি গ্রুপ
ভারতীয় ধনকুবের ব্যবসায়ী গৌতম আদানির কোম্পানিগুলো চলতি সপ্তাহেই ৫৫ বিলিয়ন ডলার বাজার মূলধন হারিয়েছে। বুধবার (২৭ নভেম্বর) আদানি গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শেয়ারবাজারে তাদের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কমে যাওয়ার কারণে তারা ৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলার হারিয়েছে। খবর-এএফপি
গত সপ্তাহে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠে ভারতীয় শিল্পপতি আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রে আদানি গ্রুপের কয়েকজন নির্বাহীর বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ আনার পর বড় ধরনের সংকটে পড়ে আদানি গ্রুপ।
ভারতের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের ২০২৯ কোটি রুপি ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে। সূত্রের খবর, গৌতম আদানি ও তার ভাতিজা সাগর আদানি, দু’জনের বিরুদ্ধেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভারতের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প যা থেকে আগামী ২০ বছরে ২০০ কোটি ডলার লাভ করা সম্ভব হতো, সেই প্রকল্পের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের প্রায় ২০২৯ কোটি রুপি ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল আদানি গোষ্ঠী।
যদিও আদানি গ্রুপ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বিবৃতিতে কোম্পানিটি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ অভিযোগ আনার পর গ্রুপের ১১টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির বাজার মূলধন প্রায় ৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলার কমেছে।
নিউইয়র্কের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টের ইউএস অ্যাটর্নি অফিস থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের প্রায় ২০২৯ কোটি রুপির বেশি ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া এবং বিনিয়োগকারী ও ব্যাংকের কাছে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে আদানি ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে। অন্য ছয় অভিযুক্তের মধ্যে রয়েছেন ‘আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেডে’র সিইও বিনীত জৈন, রঞ্জিত গুপ্ত, রুপেশ আগরওয়াল, অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের নাগরিক সিরিল ক্যাবানেস, সৌরভ আগরওয়াল ও দীপক মলহোত্র।
আদানি গোষ্ঠীর একজন মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, শিগগিরই সংস্থার পক্ষ থেকে এই অভিযোগ সম্পর্কে একটি বিবৃতি জারি করা হবে। আদানি গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আদানি গ্রিনের পরিচালকদের বিরুদ্ধে মার্কিন বিচার বিভাগ এবং মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। সংস্থা পক্ষ থেকে এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হচ্ছে। এগুলো নিছক অভিযোগ এবং কেবলমাত্র সেই হিসেবেই দেখা উচিত। সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 
তিন সপ্তাহ আগে বিশ্বের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি গৌতম আদানি মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় উদযাপন করেছেন। সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আগ্রহের কথাও জানান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ৬২ বছরের এ ধনকুবের এখন যুক্তরাষ্ট্রেই মোকাবিলা করছেন দুর্নীতির অভিযোগ। এতে দেশ-বিদেশে তাঁর বন্দর ও জ্বালানি খাতের ১৬৯ বিলিয়ন ডলার সম্পদের সাম্রাজ্য বড় ধরনের ঝড়ের কবলে পড়েছে।  
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের অভিযোগে কার্যত বড় ধরনের সংকটে পড়েছে আদানি গ্রুপ। গত বছরের ২৪ জানুয়ারি আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রথমবার শেয়ারে জালিয়াতির অভিযোগ আনে মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। এ নিয়ে তারা একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেখানে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারদর ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর অভিযোগ তোলা হয়। ওই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই দ্রুত পড়তে থাকে আদানির কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম। মুহূর্তে বাজার থেকে হারিয়ে যায় ১০ হাজার কোটি রুপি। এতে বিশ্বের ধনকুবেরদের তালিকায় আকস্মিক কয়েক ধাপ নিচে নেমে যান আদানি।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, নতুন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র আদানির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। সেখানে তাঁর সাজা হওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে। এর প্রভাবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি তৈরি হতে পারে। সেইসঙ্গে বিদেশে ভারতের করপোরেট সুনামও ক্ষুণ্ন হবে। বিশ্লেষক নিমিশ মহেশ্বরী রয়টার্সকে বলেন, এ বিতর্কের কারণে বৈশ্বিক জলবায়ু লক্ষ্যের অন্যতম জটিল খুঁটি ভারতের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ কমে যেতে পারে। বিনিয়োগকারীরা এখন অধিকতর স্বচ্ছতা দাবি করতে পারেন, যা প্রকল্পের অর্থায়নকে ধীরগতি করবে। 
আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এ অভিযোগের প্রেক্ষাপটে কেনিয়া সরকার দেশটিতে আদানি গ্রুপের একটি মেগা প্রকল্প বাতিল করেছে। বৃহস্পতিবার কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো এ ঘোষণা দেন। ২ বিলিয়ন ডলারের ওই চুক্তিটি বাতিলের ঘটনা গ্রুপটির জন্য বড় ধাক্কা। উইলিয়াম রুটো বলেন, তিনি এ চুক্তি বাতিলের আদেশ দিয়েছেন। এটা ছিল দেশটির প্রধান বিমানবন্দর আদানি গ্রুপের হাতে হস্তান্তরের চুক্তি।
যুক্তরাষ্ট্রের এ অভিযোগের জেরে দেশেও চাপের মুখে পড়েছেন গৌতম আদানি। বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী তাঁর গ্রেপ্তার দাবি করেছেন। জি নিউজ জানায়, গতকাল শুক্রবার তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আদানির ঢাল হওয়ার অভিযোগও তোলেন। তবে এটা পরিষ্কার নয় যে, গৌতম আদানি ও তাঁর ভাতিজা সাগর যুক্তরাষ্ট্রে আদালতে হাজির হবে কিনা। তারা অনুপস্থিত থেকেই মামলাটি শেষ করার চেষ্টা করতে পারেন।    
ভারতের অর্থনীতি দেশটির শীর্ষ অবকাঠামো টাইকন আদানির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। তিনি দেশগুলোর ১৩টি বন্দর পরিচালনা করেন (৩০ শতাংশ বাজার শেয়ার); সাতটি বিমানবন্দর (২৩ শতাংশ যাত্রী পরিবহন) ও ভারতের বৃহত্তম সিমেন্ট ব্যবসার (২০ শতাংশ বাজার) নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর রয়েছে ছয়টি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ ছাড়া আরও অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে দেশটিতে নানা গুঞ্জন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ প্রসঙ্গে ভারতীয় সাংবাদিক প্রাণঞ্জয় গুহ ঠাকুর বলেন, ‘এটা বড় অভিযোগ। আদানি ও মোদি দীর্ঘকাল ধরেই অবিচ্ছেদ্য। এটা ভারতের রাজনৈতিক অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে যাচ্ছে।’

বাংলা স্কুপ/ ডেস্ক/ এনআইএন/ এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ