ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ , ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​চলে গেলেন ‘লাল পাহাড়ির দেশে’র স্রষ্টা অরুণ চক্রবর্তী

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ২৩-১১-২০২৪ ০৮:৪৩:০৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৩-১১-২০২৪ ০৮:৪৩:০৭ অপরাহ্ন
​চলে গেলেন ‘লাল পাহাড়ির দেশে’র স্রষ্টা অরুণ চক্রবর্তী
চলে গেলেন বহুল জনপ্রিয় ‘লাল পাহাড়ির দেশে যা, রাঙামাটির দেশে যা’ শিরোনামের গানের স্রষ্টা ভারতীয় কবি অরুণ চক্রবর্তী। পশ্চিমবঙ্গের চুঁচুড়ার ফার্ম সাইড রোডে নিজের বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

আনন্দবাজার অরুণ চক্রবর্তীর মৃত্যুর খবর দিয়ে বলেছে, শারীরিকভাবে ‘অশক্ত’ এই কবি শুক্রবার (২২ নভেম্বর) কলকাতার মোহরকুঞ্জে জঙ্গলমহল অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই কিছুটা ঠান্ডা লেগেছিল তাঁর। কবির পুত্রবধূ সুদেষ্ণা চক্রবর্তী জানিয়েছেন, কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই তাঁর ফুসফুসে সমস্যা ছিল।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে অরুণ চক্রবর্তীর মরদেহ চুঁচুড়া রবীন্দ্র ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মুক্তমঞ্চে মরদেহ রাখা হলে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অনেকে।

বহু কবিতা লিখলেও অরুণ চক্রবর্তীকে পরিচিতি এবং খ্যাতি এনে দিয়েছিল তার ‘লাল পাহাড়ির দেশে যা, রাঙামাটির দেশে যা’ গানটি। তার রচিত এই কবিতা পরে গান হয়ে লোকের মুখে মুখে ফিরেছে। এই গানে সুর দেন ঝুমুর শিল্পী সুভাষ চক্রবর্তী।

অরুণ চক্রবর্তীর জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর, কলকাতার বাগবাজারে। ১৯৯০ সাল থেকে চুঁচুড়ায় থাকতেন তিনি। পেশায় ছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। তবে একসময় সরকারি চাকুরে অরুণ কুমার চক্রবর্তী পুরোদস্তুর কবি। লিখতে, পড়তে ও বলতে ভালোবাসতেন তিনি। 

শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাস করেছিলেন অরুণ। তাঁকে পরিচিতি ও খ্যাতি এনে দিয়েছিল ‘লাল পাহাড়ির দেশে যা, রাঙা মাটির দেশে যা’; ওই কবিতা পরে গান হয়ে দুই বাংলার সংগীতানুরাগীদের মুখে মুখে ফিরেছে। বাংলার লোকসংস্কৃতি নিয়ে চর্চা করতেন অরুণ। ঘুরতেন পাহাড়, জঙ্গল ও আদিবাসী এলাকায়। ‘লাল পাহাড়ের’ সুরেই অমর হয়ে থাকবেন কবি। 

এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, গানটি (প্রথম কবিতা হিসেবে লেখা) একটা গাছের চারা নিয়ে লেখা। ৫০ বছর আগে লেখা কবিতা, ১৯৭২ সালে। শ্রীরামপুরে। অরুণ কুমার আরও বলেছিলেন, ‘স্টেশনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎই মহুয়া ফুলের গন্ধ। দেখলাম ফুলভর্তি একটা মহুয়াগাছ। দৃশ্যটা আমাকে কেন জানি অবাক করেছে। মনে হলো, আচ্ছা গাছটি এখানে কেন? এ তো জঙ্গলে থাকার কথা। এটা হবে জঙ্গলের রানি। এখানে, এই রেলস্টেশনে তো একে মানাচ্ছে না। জঙ্গলমহলেই তাকে মানায়। আর সেখানে বসেই লিখে ফেললাম এই কবিতা। “হাই দ্যাখ গো/ তুই ইখানে কেনে/ ও তুই লাল পাহাড়ির দ্যাশে যা/ রাঙা মাটির দ্যাশে যা হেথাকে তুকে মানাইছে নাইরে/ ইক্কেবারে মানাইছে নাইরে...।”’ তখন পর্যন্ত গানটির নাম ছিল ‘শ্রীরামপুর ইস্টিশনে মহুয়াগাছটা’। বাউলেরা অরুণ কুমার চক্রবর্তীকে গানটি বড় করার অনুরোধ জানালে তিনি ‘লাল পাহাড়ির দ্যাশে যা’ নামে আবার লেখেন এবং নতুন করে সুর করেন।

অরুণের চর্চার বিষয় ছিল লোকসংস্কৃতি। কিছুটা বোহেমিয়ান জীবন পছন্দ করা এই কবি ঘুরতেন পাহাড়, জঙ্গল ও আদিবাসী এলাকায়।

তাঁর পরনে থাকত লাল পোশাক, মাথায় বাঁধতেন রঙিন রুমাল। কবির কাঁধের ঝোলায় থাকত চকলেট। ছোটোদের দেখলে বা নতুন কারো সঙ্গে পরিচিত হলে হাত মিলিয়ে চকোলেট দিতেন। নানা বিষয়ে লেখালেখি করতেন অরুণ চক্রবর্তী। রাজনীতি, শিক্ষা থেকে শুরু করে লোকসংগীত; সাধারণ মানুষের কথা লিখতেন তিনি। সবচেয়ে বেশি লিখতেন প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে। ভারতের জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন।

বাংলা স্কুপ/ডেস্ক/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ