ঢাকা , শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​বিলুপ্তির পথে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১০-১১-২০২৪ ০১:২৫:৩৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১০-১১-২০২৪ ০২:৪১:৫৬ অপরাহ্ন
​বিলুপ্তির পথে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার
বেহালদশায় রয়েছে ভোলায় বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। এই স্মৃতি জাদুঘরটি এখন দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে পারছে না । আকৃষ্ট করার মতো মুক্তিযুদ্ধের তেমন কোনো স্মৃতিচিহ্ন এখানে নেই। গ্রন্থাগারে নেই পর্যাপ্ত বই। জীর্ণ হয়ে পড়েছে আসবাবপত্র। আছে জনবল সংকটও। সব মিলিয়ে বিলুপ্তির পথে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার। 

দর্শনার্থীদের অভিযোগ, জাদুঘরটি বাইরে থেকে সুন্দর হলেও ভেতরে তেমন কিছু নেই। এর কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও পরিকল্পনার অভাবকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। এটিকে সংস্কার করে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। 

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, নির্মাণের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও সরকারি সহযোগিতা ও প্রচারের অভাবে পূর্ণতা পায়নি বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি।
প্রাথমিকের পাঠ্যবইয়ে বীরশ্রেষ্ঠদের গল্পে এ সম্পর্কে খুব ক্ষুদ্র একটি অধ্যায় থাকলেও মাধ্যমিক বা কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে তেমন কোনো ধারণা রাখে না বললেই চলে।

মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, শিক্ষার্থীরা যে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল সম্পের্কে জানবে, তার জন্য তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা আমাদের ভোলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও  প্রশাসন এখন পর্যন্ত নিতে পারেনি।

সরজমিনে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের স্মৃতি জাদুঘরে ঢোকার আগেই জানা গেল সেখানকার অযত্ন-অবহেলার কথা। ভেতরে গিয়ে সেসবের সত্যতা মিলল। দেখা গেল, কেয়ারটেকার নেই। শিশু সাহিত্য, প্রযুক্তি বিজ্ঞান, রচনাবলীসহ আরও কিছু শেল্ফ ভাঙাচোরা এবং খালি পড়ে আছে। একইসঙ্গে জাদুঘরের ভেতরের একটি কক্ষের দরজা পুরোটাই ভাঙা। মোস্তফা কামাল স্মৃতি জাদুঘর হলেও সেখানে এই বীরশ্রেষ্ঠর বীরত্বগাঁথা ও জীবনী সংক্রান্ত কোনো বই পাওয়া গেল ন। সবমিলিয়ে পুরো গ্রন্থাগার ও জাদুঘরেই অযত্ন আর অবহেলার ছাপ স্পষ্ট। পাশে থাকা মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞেস করে জানা গেল গ্রন্থাগার ও জাদুঘরে মানুষের আসা যাওয়া না থাকায় দিনদিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 

কলামিস্ট মোস্তাফিজ মিশুক বলেন, দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর উদাসীনতার ফলে ভবিষ্যত প্রজন্ম যে মুক্তিযুদ্ধ ও বীরশ্রেষ্ঠদের চেতনা থেকে ছিটকে পড়ছে তা ফুটে উঠছে। দর্শনার্থী এমনকি এই গ্রন্থাগারের এলাকার লোকজন বা শিক্ষার্থীরা কেন আসছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন। শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্য আমরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে পারিনি। জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধকালীন ছবি, ভিডিও আর্কাইভ থাকলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ইতিহাস জানার সুযোগ পেত। আগে এখানে মোটামুটি জনসমাগম হলেও এখন আর নেই।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের নামে তার জন্মস্থান দৌলতখানে লঞ্চ টার্মিনাল এবং জেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামের নামকরণ করা হলেও তা আবার পরিবর্তন করে ফেলেন। সমালোচনার এক পর্যায় তা আবার বহাল করা হয়। এ ছাড়াও তার নামে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ড (চরফ্যাশন বাসস্ট্যান্ড) থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করলেও সেখানে এখন পর্যন্ত এই বীরের নামে একটি ম্যুরাল বা স্মৃতিস্তম্ভ করা হয়নি। এমনকি বড় নামফলকও নেই সেখানে। 

মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শাহাজাহান বলেন, এটি সত্যিই একটি কষ্টদায়ক বিষয়। যাদের রক্তের বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীন দেশে বাস করছি তাদের স্মৃতি ও ইতিহাসকে আমরা পদদলিত করে চলেছি। এই অবস্থা থেকে রেহাই পেতে হলে বীরশ্রেষ্ঠদের স্মৃতির প্রতি এমন অযত্ন-অবহেলার মানসিকতা থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের এই মহান বীরসহ সকল মুক্তিযোদ্ধার যথাযথ সম্মান দিতে হবে। 

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে ১৮ এপ্রিল যুদ্ধের মাঠে সহযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেন সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল। সেই আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে দেয়া হয় বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব। বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের জন্ম স্থান ভোলার দৌলতখান উপজেলার মৌটুসী গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে ১৯৮২ সালে তার পরিবারকে স্থানন্তর করে ভোলার আলীনগর ইউনিয়নে একটি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়। তারা সেই বাড়িতেই থাকেন। এর প্রায় তিন যুগ পর ২০০৮ সালে ভোলায় সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের গ্রামের বাড়ি আলীনগরে নির্মাণ করা হয় গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভোলা জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে জাদুঘরটি।


বাংলা স্কুপ/ প্রতিনিধি/ এনআইএন/ এসকে


 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ