'জ্বালানি খাতে এখনই ৪০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব'
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
২৬-১০-২০২৪ ০৮:০৮:৩৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২৬-১০-২০২৪ ১০:৩৯:০২ অপরাহ্ন
সংবাদচিত্র : ফোকাস বাংলা নিউজ
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জ্বালানি খাতে যে অবাধ দুর্নীতি চলেছে তার মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। শুধুমাত্র কয়লা আমদানির দামদর ঠিক করতে যে টাকা লুট হয়েছে, সেটি ন্যায়সঙ্গতভাবে করলে ৬ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা যেত এবং এখনও যায়। ফার্নিশ ওয়েল বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ন্যায়সঙ্গতভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করলে আরো ২০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। আর পুরো বিদ্যুৎ খাতে সংস্কার করতে পারলে এখনই ৪০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা যাবে।
তাঁরা বর্তমান সরকারকে দ্রুততার সাথে এই সংস্কার সাধন করে জনবান্ধব জ্বালানি খাত গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকের এসব কথা বলেন। কমিটির ঢাকা মহানগরের অন্যতম সংগঠক জুলফিকাব আলীর সভাপতিত্বে ও অন্যতম সংগঠক খান আসাদুজ্জামান মাসুমের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক এম এম আকাশ, অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, অধ্যাপক আনিস চৌধুরী।
দেশের গ্যাস, সৌর, বাতাস ব্যবহার করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়েই কার্যক্রমকে অগ্রসর করার আহ্বান জানিয়ে আলোচকেরা বলেন, সমতাভিত্তিক সমাজের জন্য জ্বালানি ক্ষেত্রেও সমতা আনতে হবে। তাঁরা বিদ্যুৎ জ্বালানিক্ষেত্রে দায়মুক্ত আইন বাতিল ও জ্বালানি অপরাধীদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারের দাবি জানান ।
তাঁরা বলেন, গত বছরগুলোতে দেশীয় গ্যাস ও সৌরকেও উপেক্ষিত করা হয়েছে। ব্যক্তি খাতকে বাড়িয়ে তুলে জ্বালানি খাতকে নিরাপত্তাহীনতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ক্যাপাসিটি চার্জসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলেও বাংলাদেশে বেড়েছে। এইসময় একাধিকবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট কাঁটা হয়েছে। রূপপুর মাতারবাড়ি, পায়রা, রামপালসহ এমন অনেক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে যা শুধু পরিবেশেরই ক্ষতি করছে তা নয়, জনগণের কাঁধে ঋণের বোঝা বাড়িয়েছে।
গোলটেবিল বৈঠক থেকে কিছু দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে- জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য কমাতে স্বল্প মেয়াদে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে; বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চুক্তি ও সম্ভাব্য চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে এবং প্রয়োজনে বাতিল করতে হবে; স্বৈরাচারী সরকারের সংগঠিত সকল জ্বালানি অপরাধের বিচার করতে হবে; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও বিদ্যুৎখাত পরিকল্পনার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে; দেশীয় গ্যাস উত্তোলন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; আমদানিকৃত গ্যাসের উপর নির্ভরতা কমাতে হবে এবং সাগরে গ্যাস উত্তোলনে বাপেক্সের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করে প্রতিযোগিতামূলক বিডিং নিশ্চিত করতে হবে।
আলোচকেরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চুক্তিসমূহ পর্যালোচনা করে অসম ও ক্ষতিকর চুক্তিসমূহ বাতিলের দাবি জানান। তাঁরা বলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে তার মধ্যে জ্বালানি খাতের সংস্কার হতে হবে অন্যতম। স্থলভাগ ও সমুদ্রভাগের গ্যাস উত্তোলন, দেশীয় সংস্থা বাপেক্সকে অগ্রাধিকার প্রদান ও সর্বক্ষেত্রে শতভাগ মালিকানা নিশ্চিত করে জ্বালানি খাতে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানোটাই হবে এখনকার প্রধান কাজ।
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কমিটির অন্যতম সংগঠক বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দিন পাপ্পু, গণমুক্তি ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা নাসির উদ্দিন নাসু, বাসদ (মাহবুব) কেন্দ্রীয় নেতা মহিন উদ্দিন চৌধুরী লিটন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক গণ মঞ্চ সভাপতি মাসুদ খান।
বাংলা স্কুপ/প্রতিবেদক/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স