ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫ , ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​ দেশেই মরিয়ম-আজওয়া চাষ

খেজুর চাষে সফল দিনাজপুরের জাকির

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ৩০-০৭-২০২৫ ০৪:০৭:৩৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ৩০-০৭-২০২৫ ০৪:০৭:৩৭ অপরাহ্ন
খেজুর চাষে সফল দিনাজপুরের জাকির সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
মরুর দেশের খেজুর চাষে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন জাকির হোসেন (৪৭)। তার বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে মরিয়ম, আজওয়া, খলিজি, মেডজল ও আম্বারসহ নানা জাতের খেজুর। এ বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে মানুষ।

জাকির হোসেন ফুলবাড়ী পৌর শহরের স্বজন পুকুর এলাকার আবু আব্বাসের ছেলে। ১৯৯৯ সালে কুয়েত প্রবাসী হন। শুরুতে কুয়েতের ‘সুয়েব’ শহরে মোটর গ্যারেজে চাকরি নেন। এরপর ধীরে ধীরে কর্মচারী থেকে গ্যারেজের মালিক হন। সুয়েব শহরে প্রতিটি বাড়ি, রাস্তায় খেজুর গাছ দেখে উদ্বুদ্ধ হন জাকির। এক সময় নিজের দেশে খেজুর বাগান করার পরিকল্পনা করেন। চাষের পদ্ধতি শিখেন অনলাইনসহ খেজুর চাষিদের কাছে।পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে থাকেন জাকির। ২০১৭ সালে পৌর শহরের স্বজন পুকুর এলাকায় নিজের ২০ শতক জমিতে রোপণ করেন খেজুরের বীজ। সে বীজ থেকে চারা, চারা থেকে পরিপূর্ণ গাছ এবং ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো দেখা মেলে কাঙ্ক্ষিত খেজুরের। তার এ সফলতা এলাকার সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। অর্থনৈতিক মুক্তিসহ প্রায় সব ধরনের প্রশান্তি যেন খেজুর গাছের ছায়ায় খুঁজে নিয়েছেন জাকির হোসেন। তাই আর প্রবাসে ফেরেননি তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাগানে কাজে ব্যস্ত জাকির হোসেন। কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে ফলন্ত খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। তার সখের খেজুর বাগান সম্পর্কে অনেক তথ্য জানান তিনি।জাকির হোসেন বলেন, ‘দুই একর জমিতে খেজুর গাছের বাগান ও চারা উৎপাদন করছি। নার্সারিতে বিক্রির উপযোগী ১০ হাজারেরও অধিক চারা রয়েছে। বীজ থেকে খেজুর গাছের চারা তৈরি করছি। সেই চারা বিক্রি করি আশপাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। অনলাইনেও খেজুর গাছ প্রেমীদের চাহিদা রয়েছে। সেখানেও বিক্রি হয়। গত তিন বছরে প্রায় ৪০ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছি।’তিনি বলেন, ‘শুরুর দিকে ২০ শতক জমিতে লাগানো ১৯টি খেজুর গাছের মধ্যে এবার ১৪টি গাছে আশানুরূপ ফল ধরেছে। এসব গাছে প্রায় ২০ মণ খেজুর পাবো বলে আশা করছি। এসব খেজুর এখনো পরিপক্ব হয়নি। সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা কেজি দর পেলেও ১০ লাখ টাকার খেজুর বিক্রি করতে পারবো।’

বাগান মালিক বলেন, ‘২০২২ সালে প্রথম দুটি গাছে ফল ধরেছিল। এরপর থেকে ফলন বাড়তে থাকে। এর মধ্যে কিছু এলাকাবাসীকে খেতে দিয়েছি। কিছু বীজ করে চারা লাগিয়েছি। খেজুর শুরুতে সবুজ রঙের থাকে। ধীরে ধীরে রং পরিবর্তন হয়ে প্রথমে হলুদ তারপর গাঢ় লালচে রং ধারণ করবে। আগস্টের শেষ দিকে বাজারজাত করার উপযোগী হয়ে উঠবে এ খেজুর।’তিনি বলেন, ‘দুই বছর বয়সী প্রতিটি খেজুর গাছের চারা বিক্রি এক হাজার টাকায়। আর প্রতিটি কলম চারা বিক্রি হয় ১৫-৩০ হাজারে। ছাদে লাগানোর জন্য প্লাস্টিকের ড্রামেও চারা প্রস্তুত করছি। যারা এক সময় হাসাহাসি করেছেন তারা এখন টাকা দিয়ে চারা কিনছেন। যারা চারা কিনেছে এরমধ্যে কয়েকজনের গাছে ফল ধরেছে।’

খেজুর গাছের যত্ন নেওয়া, বীজ থেকে চারা উৎপাদন, কলম চারা করার পদ্ধতি, ডাল ছাঁটাই, ফসল সংগ্রহ-সংরক্ষণ বিষয়ে জাকির যেন রীতিমত বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা খেজুর মরুর দেশের ফল। বিষয়টি তা নয়। খেজুর গাছ সব ধরনের মাটিতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা আছে কিনা। তবে বেলে-দোঁআশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী।’জাকির আরও বলেন, ‘বালি-ছাই-গোবর ও কম্পোস্ট সার মিশিয়ে কয়েকদিন রেখে দিয়ে পরে জমিতে দিতে হবে। খেজুর থেকে প্রাপ্ত বীজ ৪০-৪৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরে ট্রেতে বীজ রোপণ করতে হয়। নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়। এভাবে ৪ সপ্তাহের মধ্যে বীজ থেকে চারা গজাবে। কিছুদিন পর ওই চারা প্লাস্টিকের প্যাকেটে তুলে রাখতে হয়। তারপর আবার তা মাটিতে রোপণ করতে হয়।’

পঞ্চগড় থেকে খেজুর গাছের চারা কিনতে এসেছেন তাহেরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পরিচিত একজনের কাছে জাকিরের সন্ধান পাই। তারপর মুঠোফোনে যোগাযোগ করি। ইতোমধ্যে জমি প্রস্তুত করেছি। ২০টি চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছি।’জাকির বলেন, ‘এত সুন্দর পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ ফল। যা প্রতিদিন বিশেষ করে রমজান মাসে লাখ লাখ টাকার খেজুর আমাদের আমদানি করতে হয়। অথচ আমাদের দেশে খেজুর চাষের দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে। আমি চেষ্টা করছি আগামী দশ বছরের মধ্যে দেশের প্রত্যেকটি গ্রামে এ খেজুর গাছের চারা রোপণ করতে। রপ্তানি করতে না পারি যেন খেজুর আর আমদানি করতে না হয় সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। ইতিমধ্যে এলাকার মানুষদের উদ্বুদ্ধ করেছি, সাড়াও পাচ্ছি বেশ।’

এ বিষয়ে উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহানুর রহমান বলেন, ‘জাকিরের খেজুর বাগান পরিদর্শন করেছি। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। খেজুর চাষে এ অঞ্চলের কৃষিতে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। তিনি খুব ভালো একজন কৃষি উদ্যোক্তা। জাকির যেভাবে খেজুর চাষাবাদ করেছেন এভাবে খেজুর চাষাবাদ করে লাভবান হওয়া সম্ভব।’

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ