ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫ , ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গ্যাস সংযোগ ঘিরে ক্ষুদ্র শিল্পে নজর দেয়ার তাগিদ

​উত্তরে শিল্পায়নের নতুন স্বপ্ন

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৯-০৭-২০২৫ ০৩:৪৬:১৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৯-০৭-২০২৫ ০৩:৪৬:১৫ অপরাহ্ন
​উত্তরে শিল্পায়নের নতুন স্বপ্ন সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
ব্যাপক সম্ভাবনা থাকার পরও শুধু গ্যাসের অভাবে এতোদিন শিল্পের বিকাশ ঘটেনি রংপুর অঞ্চলে। যে কারণে শিল্প বাণিজ্যে অনেকটাই পিছিয়ে এই বিভাগ। তবে শিল্পায়নে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার হিসেবে বগুড়া থেকে নীলফামারী পর্যন্ত গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন নির্মাণে চলতি বছরের ৩০ জুন শেষ হয়েছে প্রকল্পের কাজ।

১ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫০ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। অপেক্ষা বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস সরবরাহের। সংযোগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে বিসিক শিল্পনগরী, ইপিজেডসহ অর্থনৈতিক অঞ্চল। তবে উদ্যোক্তারা বলছেন, এক্ষেত্রে ভারী শিল্পের পাশাপাশি সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকেও। ব্যবসায়ী নেতারা জানান, কলকারখানাগুলোতে গ্যাস সংযোগ দেয়া হলে শিল্পায়নের গতি বাড়বে, আর তাতে তৈরি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ। এতে করে শুধু রংপুর অঞ্চলেরই নয়, সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক নাজমুল আলম নাজু বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার রংপুর অঞ্চলের মানুষ। বিশেষ সুযোগ-সুবিধা না থাকায় এখানে তেমন শিল্প কলকারখানা গড়ে ওঠেনি। তাই এই অঞ্চলে গ্যাস সংযোগ দিতে হলে অবশ্যই ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারীদের সংযোগ নিশ্চিত করা উচিত, যারা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়তে চায়। সমভাবে যদি গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়, তাহলে পিছিয়ে থাকা উত্তরাঞ্চল দ্রুতই এগিয়ে যাবে। যার বড় প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতে।’

রংপুর চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনজুর আহমেদ আজাদ বলেন, ‘গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে রংপুর অঞ্চলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তখন এই অঞ্চলের মানুষকে আর কাজের খোঁজে ঢাকা কিংবা দক্ষিণাঞ্চলে ছুটতে হবে না। এরই মধ্যে গ্যাস সঞ্চালনের সব কাজ শেষ হয়েছে, এখন শুধু অপেক্ষা সংযোগ দেয়ার। দ্রুত কারখানা পর্যায়ে সংযোগ দেয়া গেলে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদনে যেতে পারবে।’

রংপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, ‘উত্তরবঙ্গ দিনের পর দিন পিছিয়ে পড়ছে শুধু গ্যাস সুবিধার অভাবে। এখানকার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। গ্যাস সংযোগ এলে বদলে যাবে সেই চিত্র। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে, গড়ে উঠবে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প। এতে যেমন বাড়বে কর্মসংস্থান, তেমনি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে এই অঞ্চলের অর্থনীতি।’

উন্নয়ন গবেষক উমর ফারুক মনে করেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বাজেট বরাদ্দে বৈষম্যের ফলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে রংপুর অঞ্চল। এই অবস্থায় উন্নয়নের গতি ফেরাতে গ্যাস সরবরাহকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তবে ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের তুলনায় উত্তরাঞ্চলে গ্যাসের দাম কিছুটা কমানো জরুরি। কারণ, সরকার যদি এ অঞ্চলের জন্য গ্যাসের দামে বিশেষ রেয়াত না দেয়, তাহলে যে রকম শিল্প সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে, বাস্তবে তার সুফল পাওয়া কঠিন হবে।‘

এদিকে, পাইপলাইন নির্মাণের অগ্রগতির বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (পিজিসিএল) রংপুর, নীলফামারী ও পীরগঞ্জ গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী ফজলুল করিম সময় সংবাদকে বলেন, ‘৩০ জুনের মধ্যে আমরা পুরো পাইপলাইন নির্মাণ কাজ শেষ করেছি। ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইন ইতোমধ্যে রংপুর, সৈয়দপুর বিসিক এবং উত্তরা ইপিজেডের গেট পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এখন ইপিজেডের ভেতরে অভ্যন্তরীণ সংযোগ লাইন নির্মাণ করতে হবে, যা গ্রাহকদের নিজস্ব অর্থায়নে হবে। সংযোগ প্রদানের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। খুব শিগগিরই সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উদ্যোক্তা পর্যায়ে গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হবে।’

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ