ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫ , ৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আশরেফা খাতুনের জুলাই স্মৃতিচারণ

​“গুলি করলেও বের হব-পণ করেছিলাম”

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৩-০৭-২০২৫ ০৩:০৩:৪৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৩-০৭-২০২৫ ০৩:০৩:৪৩ অপরাহ্ন
​“গুলি করলেও বের হব-পণ করেছিলাম” ফাইল ছবি
“সেদিন মনে হয়েছিল-গুলি করলে করুক, তবু আজ রাস্তায় নামতেই হবে”-জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আশরেফা খাতুনের এই কথায় উঠে আসে আন্দোলনের ভয়াবহতা ও দৃঢ় প্রত্যয়। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের মুখপাত্র আশরেফা খাতুন সম্প্রতি সাংবাদিকদের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জুলাই আন্দোলনের ভেতরের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, ৫ আগস্ট সকালের কথা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান দেখে মনে হয়েছিল রাস্তায় নামা প্রায় অসম্ভব। তবুও তিনি আরেকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে মিছিল খুঁজে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। চারদিকে পুলিশের গুলির খবর, বন্ধুরা বারবার সাবধান করছিলেন। তবু তিনি সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন।

২০২৫ সালের ৬ জুন আদালতের রায়ের প্রতিবাদ থেকে শুরু হওয়া জুলাই আন্দোলনে আশরেফা প্রথম থেকেই সম্পৃক্ত ছিলেন। “এই আন্দোলনের পেছনে কোনো দলীয় ইশতেহার ছিল না, ছিল চাকরির নিরাপত্তা আর বেঁচে থাকার আকুতি,” বলেন তিনি। প্রথম দিকে মেয়েদের অংশগ্রহণ সীমিত থাকলেও পরে তারা বড় ভূমিকা রাখে। ঢাবির পাঁচটি ছাত্রী হলের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ ‘নারী সমন্বয়’-এর মাধ্যমেই সংগঠিত হয় মেয়েরা। তিনি জানান, আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেক ছাত্রী ছাত্রলীগের প্রভাবাধীন রুমে থাকলেও ভয়কে জয় করে রাস্তায় নেমেছিল। অনেকেই শারীরিকভাবে আক্রান্ত হন, কেউ কেউ ট্রমায় নিঃশব্দ হয়ে পড়েন—তবুও পিছু হটেননি।

১৫ জুলাই ইডেন কলেজে আন্দোলনকারী ছাত্রীদের ওপর হামলা হয়। ছাত্রলীগের মেয়েরা গরম পানি ছুড়ে মারে ও গেট আটকে দেয়। আশরেফা বলেন, “আমি ভেবেছিলাম, মেয়েরা হয়তো বাসায় ফিরে যাবে। কিন্তু তারা আরও সংগঠিত হয়ে রাস্তায় নামে।” তিনি জানান, পরদিন ছাত্রলীগের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। লিখিত চুক্তি তৈরি করে ছাত্রলীগের মেয়েদের হলে রাজনীতি না করার অঙ্গীকার নেওয়া হয়।

৩ আগস্ট শহীদ মিনারে পৌঁছানোর স্মৃতিকে ‘জীবনের সবচেয়ে বড় বিজয়’ বলে আখ্যায়িত করেন আশরেফা। ডেমরা থেকে রিকশা বদলিয়ে, হুমকি-ভয়ে পাড়ি দিয়ে পৌঁছেছিলেন সেখানে। “সেদিন বুঝেছিলাম—পরিচিত কেউ না থাকলেও সবাই আপন, সবাই সহযোদ্ধা।” তিনি বলেন, “আমরা তো বিশ্বাস করতাম, ট্যাটু করা, স্লিভলেস পরা মানুষজন কখনো আন্দোলনে যায় না। কিন্তু সেদিন তারাও ছিল। এটা ছিল আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা।”

সাক্ষাৎকারের শেষে আশরেফা বলেন, “বাবা-মার ইচ্ছা ছিল বিসিএস ক্যাডার হই। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম মানুষের পাশে দাঁড়াতে। সেই পথেই আমি হেঁটেছি। হয়তো সেই পথে বাঁচাও পেয়ে গেছি।” আন্দোলনে প্রাণ দেওয়া আবু সাঈদের কথাও স্মরণ করেন তিনি, “ওকে যেভাবে গুলি করা হয়েছে, সেটা কোনো সভ্য রাষ্ট্রে কল্পনাও করা যায় না।” তিনি বলেন, “আমাদের নবজন্ম হয়েছিল সেদিন। কিন্তু এর জন্য আমাদের মূল্যও দিতে হয়েছে অনেক।”

বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ