পানি বাড়ছে তিস্তা-যমুনায়, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়া শুরু
এবার উত্তরবঙ্গে বন্যার শঙ্কা
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
১১-০৭-২০২৫ ০৩:০৩:৫১ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১১-০৭-২০২৫ ০৭:১৭:১৬ অপরাহ্ন
ফাইল ছবি
উজানের ঢল ও অবিরাম বৃষ্টির ফলে আবারও উত্তরের জনপদে দেখা দিয়েছে নতুন করে বন্যার শঙ্কা। তিস্তা ও যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। ইতিমধ্যেই অনেক এলাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙনের খবরও মিলছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে থাকলেও, জনমনে ফের দানা বাঁধছে আতঙ্ক। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান- সিরাজগঞ্জে ভারী বর্ষণে যমুনা নদীতে পানি ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। যা বিপৎসীমার ১৭২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দ্রুত পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার সদর, কাজিপুর, শাহজাদপুর, চৌহালী, চলনবিলের নিম্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার (১১ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর হার্ড পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার ও কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যা হার্ড পয়েন্টে ১৭২ ও কাজিপুর পয়েন্টে ১৯৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার বেশকিছু এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।
যমুনার ভাঙনে কাজিপুর উপজেলার চরগিরিশ ইউনিয়নের ভেটুয়া গ্রামে অন্তত ১০০টি বসতবাড়ি, শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতনী ইউনিয়নের ধীতপুর গ্রামের অন্তত ৫০টি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের ফুলজোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরগিরিশ নিম্ন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় ও ভেটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের মুখে পড়েছে। মকবুল হোসেন নামে এক রিকশাচালক বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। এ কারণে রিকশা নিয়ে বের হইনি। আজ বৃষ্টি না থাকায় বের হয়েছি। বৃষ্টি না থাকলে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় হয়।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘নদীতে পানি বাড়ার প্রবল স্রোত বইছে। এ কারণে নদী তীরের বেশ কিছু স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সদর উপজেলার ভাটপিয়ারী ও বাহুকা এলাকায় জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। তাছাড়া নদীর এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমায় পৌঁছে নদী সংলগ্ন কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়। পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী দুই দিন এই নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।
তিস্তার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার দেওয়া পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সতর্কসীমায় (বিপৎসীমা) প্রবাহিত হতে পারে। এর ফলে কুড়িগ্রামের নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে। কুড়িগ্রামের রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী মিলন মিয়া (৫০) বলেন, গত বুধবার রাত থেকে নদীর পানি অন্তত দেড় থেকে দুই ফুট বাড়ছে। বৃহস্পতিবার সারাদিন পানি বাড়ছিল। কুড়িগ্রামের পাউবো নিয়ন্ত্রণ কক্ষের প্রতিবেদন বলছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দিনভর তিস্তার পানি রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার মাত্র ৫০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সেগুলো এখনও বিপৎসীমার অনেকটাই নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে এসব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছে পাউবো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান জানান, তিস্তার পানি বাড়ছে। পানি বিপৎসীমায় পৌঁছাতে পারে। তিস্তার কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। অন্য নদ-নদীর পানি বাড়লেও বিপৎসীমায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা নেই।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স