ঢাকা , সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫ , ২৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​লবণাক্ত জমিতেও সৌদি খেজুরের বাম্পার ফলন

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০৭-০৭-২০২৫ ১২:৫৫:১৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৭-০৭-২০২৫ ০১:২৩:৪৬ অপরাহ্ন
​লবণাক্ত জমিতেও সৌদি খেজুরের বাম্পার ফলন সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের একটি উপজেলা রামপাল। যেখানের নদী ও খালে সব সময় লবণ পানি বিরাজ করে। যার ফলে এই উপজেলায় চিংড়ি ছাড়া অন্য কোনো ফসল তেমন ভালো হয় না। সেখানে সৌদির খেজুর চাষ! অবাক করার মতো হলেও সত্য উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার লবণাক্ত জমিতে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে সৌদি খেজুর চাষে সফল হয়েছেন এক আইনজীবী। পেয়েছেন বাম্পার ফলনও। যার ফলে এ অঞ্চলে মরু এলাকার এই ফল চাষে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেল।

রামপালের মল্লিকের বেড় ইউনিয়নের সন্ন্যাসী গ্রামের বাসিন্দা এবং কৃষি উদ্যোক্তা দিহিদার জাকির হোসেন। পেশায় একজন আইনজীবী হলেও ২০১৪ সাল থেকে ১৫ একর জমিতে মৎস্য চাষ শুরু করেন তিনি। চিংড়ি ও বিভিন্ন ফল চাষে আশানুরূপ সাফল্য না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। পরে ইউটিউবে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে শুরু করেন সৌদি খেজুর চাষ।

২০১৯ সালের শুরুর দিকে তিনি উত্তরবঙ্গ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে সৌদি খেজুরের ৬০টি চারা এনে রোপণ করেন। পাঁচ বছর পর তার ৫০টির মতো গাছে ফল এসেছে। আর এক বছরের মধ্যে আরও ২০০ গাছে ফল আসবে বলে আশা করছেন তিনি। স্থানীয় কৃষক মো. ছালাম বলেন, এই জমিগুলোতে আগে শুধু বাগদা চিংড়িই হতো। আর কিছু করলে লোকসান হতো। এখন যেভাবে খেজুর গাছে ফল আসছে, তাতে মনে হয় আমরাও খেজুর চাষ শুরু করলে লাভ হবে। দিহিদার ভাই আমাদের জন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

যুবক উদ্যোক্তা লতিফ শেখ বলেন, যেভাবে সৌদি খেজুর চাষে সফলতা পেয়েছেন, সেটা দেখে এখন অনেক তরুণ চাষে আগ্রহী হচ্ছে। আমি নিজেও চিন্তা করছি তার নার্সারি থেকে চারা এনে শুরু করব। আমাদের মতো এলাকায় এমন চাষ যদি সফল হয়, তাহলে আর পিছিয়ে থাকতে হবে না। প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা শ্রমিক শহিদুল ইসলাম বলেন, চারা লাগানোর সময় মানুষ আমাদের নিয়ে ঠাট্টা করতো। এখন সবাই আসে খেজুর দেখতে। যারা আগে হাসাহাসি করতেন, এখন স্যারকে বাহবা দেন। নিয়মিত গাছে জৈব সার, পানি ও ওষুধ ব্যবহার করায় গাছগুলো ভালোভাবে বেড়ে উঠেছে।

জাকির হোসেন বলেন, ২০১৯ সালে মাছ চাষ ও অন্যান্য ফলের ব্যর্থতায় আমি একেবারে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তখন ইউটিউব দেখে হঠাৎ মনে হলো যেখানে মরুভূমিতে খেজুর হয়, সেখানে আমাদের লবণাক্ত জমিতে কেন নয়? সেই ভাবনা থেকেই সাহস করি। উত্তরবঙ্গ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে ৬০টি সৌদি খেজুরের চারা এনে রোপণ করি। এরপর ধীরে ধীরে এই সংখ্যা দুই হাজারে ছড়িয়ে যায়। বর্তমানে খামারে প্রায় আড়াই হাজার সৌদি খেজুর গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৫০টি গাছে ইতোমধ্যেই ফল এসেছে। অনেক গাছে আবার ফুল এসেছে, ফল আসার প্রস্তুতি চলছে। এক বছরে আরও ২০০ থেকে ৩০০ গাছে ফলন মিলবে।

তিনি বলেন, এটি মরুভূমির গাছ, তাই আমাদের এলাকার জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সময় লেগেছে। রোগবালাই, ইঁদুরের উপদ্রব, পানি ব্যবস্থাপনা সবই বড় চ্যালেঞ্জ। কম পানি দিলে শুকিয়ে যায়, আবার বেশি দিলে গাছ পচে যায়। তবুও নিয়মিত পরিচর্যা আর অধ্যবসায়ের কারণে এখন ফল আসতে শুরু করেছে। এবার অনেক গাছে ২৫ থেকে ৩৫ কেজি পর্যন্ত ফলন হতে পারে। পাশাপাশি আমি ভিয়েতনামি নারকেল, মাল্টা, আম ও আমড়ার মতো ফলও চাষ করছি। গরুও পালছি। খেজুর চাষে কীটপতঙ্গ ও রোগবালাইয়ের ঝুঁকি নিয়েও কথা বলেন তিনি। "‘হোয়াইট ফ্লাই’ ও ‘শুঁটিমূল’ নামে দুটি নতুন রোগে গাছ আক্রান্ত হয়। ইঁদুরও ব্যাপক ক্ষতি করে। এসবের বিরুদ্ধে নিয়মিত কীটনাশক ব্যবহার ও সতর্কতা জরুরি। সরকার যদি খেজুরের জন্য প্রয়োজনীয় কীটনাশক আমদানি করে সহজলভ্য করে, তাহলে আমাদের মতো খামারিদের জন্য আরও বড় সুবিধা হবে। নতুন চাষিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বীজ থেকে তৈরি চারায় পুরুষ গাছ বেশি হয়, তাই ফল আসে না। কলম চারা কিনলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, সৌদি খেজুর সাধারণত মরু এলাকার ফসল। কিন্তু দিহিদার জাকির হোসেন তার চাষে সফল হয়েছেন। এর স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও উৎপাদন ঠিক থাকলে এটি এই অঞ্চলে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ