শতাব্দীর ভয়াবহতম সুনামি কি আসন্ন?
জাপানে ১৪ দিনে ৯০০ ভূমিকম্প
ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় :
০৩-০৭-২০২৫ ০২:৪৭:১১ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০৩-০৭-২০২৫ ০৪:১৬:১৬ অপরাহ্ন
ফাইল ছবি
টানা ১৪ দিন ধরে ভূমিকম্পে কাঁপছে টোকারা দ্বীপপুঞ্জ। এই ১৪ দিনে ৯০০টিরও বেশি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে জাপানের দক্ষিণাঞ্চলের দ্বীপপুঞ্জটি। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। এমনকি ভয়ে রাতে ঘুমাতেও পারছেন না তারা। সেইসঙ্গে আরেকটি বড় সুনামির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে জাপান জুড়ে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ংকর সুনামি হয়তো আসন্ন। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
জাপানের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে, গত ২১ জুন থেকে দ্বীপপুঞ্জের আশপাশের সমুদ্রে ভূমিকম্পজনিত তৎপরতা অত্যন্ত সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। সর্বশেষ বুধবার রিখটার স্কেলে ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। এসব কম্পনে এখনও পর্যন্ত বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি এবং সুনামিরও আশঙ্কা নেই বলে জানানো হয়েছে। তবে, প্রশাসন স্থানীয়দের প্রস্তুত থাকতে বলেছে যাতে প্রয়োজনে দ্রুত স্থানত্যাগ বা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া যায়।
স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল এমবিসিকে একজন বাসিন্দা বলেন, ঘুমাতে গেলেই ভয় লাগে, মনে হয় সবসময় কাঁপছে। চিজুকো আরিকাওয়া নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ভূমিকম্পের আগে সমুদ্র থেকে এক অদ্ভুত গর্জনের শব্দ শোনা যায়, বিশেষ করে রাতে। পুরোটা বিষয় ভৌতিক মনে হয়।আকুসেকিজিমা দ্বীপের বাসিন্দা এই ব্যক্তি আরও বলেন, সবাই ক্লান্ত, আমরা চাই এগুলো বন্ধ হোক। ৬০ বছর বয়সী ইসামু সাকামোতো আকুসেকিজিমায় স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। তিনি জানান, নিচ থেকে প্রথমে একটা ধাক্কা লাগে, তারপর পুরো ঘর দুলে ওঠে। অসুস্থ বোধ করি তখন।
বিবিসি বলছে, টোকারা দ্বীপপুঞ্জে মোট ১২টি দ্বীপ রয়েছে, এর মধ্যে ৭টিতে মানুষের বসবাস আছে। মোট জনসংখ্যা মাত্র ৭০০ জনের মতো। অনেক দ্বীপে হাসপাতাল নেই, সবচেয়ে কাছে স্বাস্থ্যসেবার যে সুযোগ আছে, তা কাগোশিমা শহরে। সেখানে যেতে হলেও ছয় ঘণ্টা ফেরিতে চড়ে যেতে হয়।এদিকে ভূমিকম্পের কারণে টোকারা দ্বীপপুঞ্জের অনেক গেস্টহাউস নতুন করে পর্যটক নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কারণ সেগুলো এখন জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন সংবাদমাধ্যমকে অনুরোধ করেছে যেন বাসিন্দাদের অতিরিক্ত ফোন দিয়ে বা সাক্ষাৎকার নিয়ে বিরক্ত না করা হয়।
ধারাবাহিক এই ভূমিকম্পের মধ্যেই জাপানজুড়ে গুজব ছড়িয়েছে, একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প আসছে। এই গুজব আরও বাড়িয়েছে ১৯৯৯ সালের একটি জাপানি কমিক বই, যেখানে লেখক রিও তাতসুকি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ২০২৫ সালের ৫ জুলাই ভয়াবহ ভূমিকম্প আসবে। এই ভবিষ্যদ্বাণীকে ঘিরে দেশজুড়ে এখন আলোচনার ঝড় বইছে, অনেক পর্যটক তাদের ভ্রমণ বাতিল করছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম।বিবিসি বলছে, জাপানে বছরে গড়ে প্রায় ১৫০০ ভূমিকম্প হয়ে থাকে। তবে ২০১১ সালের ভূমিকম্প ও সুনামিতে ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যাওয়ার পর থেকে সবাই “দ্য বিগ ওয়ান” নামে পরিচিত শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা করে আসছে। জাপান সরকার আশঙ্কা করছে, এই ধরনের একটি ভূমিকম্পে ৩ লক্ষাধিক মানুষ মারা যেতে পারে। এই আশঙ্কার প্রেক্ষাপটে চলতি সপ্তাহেই সরকার নতুন বাঁধ নির্মাণ, আশ্রয় কেন্দ্র গঠনসহ আরও প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স