এক সপ্তাহে বস্তাপ্রতি ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে
চালের বাজার চড়া : মুরগি-ডিমের দামে স্বস্তি
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
২০-০৬-২০২৫ ০৪:২৫:৫৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২০-০৬-২০২৫ ০৭:০২:১৪ অপরাহ্ন
ফাইল ছবি
ইরি বোরোর নতুন চাল আসার পর রাজধানীর বাজারগুলোতে চালের দাম কিছুটা কমেছিল। তবে সে স্বস্তি বেশি দিন টিকলো না। ঈদের পর এখন খুচরা বাজারে চালের দাম ফের বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মোকামগুলোতেই চালের দাম বেড়েছে। ঢাকার ব্যবসায়ীদের দাবি, চালকল মালিকরা ঈদের পরে কারবার চাঙ্গা হওয়ায় সঙ্গে এই দাম বৃদ্ধি করেছেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন মিলগেটে ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি চালের দাম ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
শুক্রবার (২০ জুন) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের আগের চেয়ে এখন প্রতি কেজি চাল ২ থেকে ৫ টাকা টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এখন খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা দরে। সরু চালের মধ্যে জিরাশাইলের কেজি ৭৪ থেকে ৭৮ টাকা এবং মিনিকেট ৭৬ থেকে ৮০ টাকা। কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজিতে। এদিকে ছোট বাজারে ও পাড়ার মুদি দোকানে এ দাম আরেকটু বেশি। রামপুরা বাজারে চাল বিক্রেতা জুবায়ের আলী বলেন, এক সপ্তাহ হলো অর্থাৎ ঈদের পর থেকে দোকান খুলে যে চাল-ই অর্ডার দিচ্ছি, তারই দাম বস্তায় ৫০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি। দিনাজপুর, নওগাঁ ও কুষ্টিয়া সব মোকামে চালের দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, মিল মালিকদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলছে, ধানের দাম বাড়ার কারণে চালের দাম এখন বেড়েছে।
এদিকে বাজারে গরুর মাংসের চড়া দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায়, যা অনেক মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য অনেকটাই নাগালের বাইরে। এদিকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেকটাই কম দামেই মিলছে ব্রয়লারসহ অন্যান্য জাতের মুরগির মাংস। ফলে গরুর মাংস থেকে মুখ ফিরিয়ে তুলনামূলক সস্তা মুরগির মাংসের দিকে ঝুঁকছেন ক্রেতারা। অপরদিকে মাছের বাজার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকায় স্বস্তিতে ক্রেতারা। সকালে রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা এলাকার একাধিক বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৩০-২৪০ টাকায়। দেশি মুরগি ৫০০-৫৫০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৩০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, গত মাস-খানেক যাবত বাজারে মুরগির অনেকটা কমে বিক্রি হচ্ছে। তাই ক্রেতাদের ভিড়ও বেশি। অনেকেই বেশি পরিমাণে কিনে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখছেন। এদিকে মুরগির দাম কমলেও বাজারে আগের মতোই চড়া রয়েছে খাসির মাংসের দাম। প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ২৫০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।
অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে মাছের বাজার। বাজারে প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতল ৩৪০ থেকে ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৬০০-৭০০ টাকা, চাষের শিং ৫০০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২২০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, পোয়া ৪০০ টাকা, আইড় ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, দেশি কৈ ৮০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা ও দেশি শিং ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রামপুরা বাজারে বাজার করতে আসা শফিকুল ইসলাম নামের এক স্কুল শিক্ষক বলেন, বাজারে গরুর মাংসের দাম অনেক বেশি। সেই তুলনায় মুরগির দাম বেশ কম থাকায় মুরগির মাংসই নিয়েছি। গরুর তুলনায় বাচ্চারাও মুরগির মাংসই বেশি পছন্দ করে। তিনি আরও বলেন, দাম তুলনামূলক কম থাকায় একটু বেশি করে কিনে নিয়েছি। আমার মতো আরও অনেকেই নিচ্ছে। বাসায় এখন মাছের চেয়েও মুরগিটাই বেশি খাওয়া হয়। সেলিনা হোসেন নামের এক গৃহিণী বলেন, এক কেজি গরুর মাংস নিয়েছি ৮০০ টাকায়। দাম কিছুটা বেশিই মনে হচ্ছে। কিন্তু কিছু তো করার নেই। দামাদামি করারও কোনো সুযোগ নেই। ব্যবসায়ীদের ভাবখানা এমন যে নিলে নেন, না নিলে বিদায় হোন।
এদিকে দাম তুলনামূলক কম থাকায় বিক্রি ভালো হওয়ায় খুশি মুরগি বিক্রেতারা। রামপুরা বাজারের মুরগি বিক্রেতা রাসেল মিয়া বলেন, মুরগির মাংস অনেকদিন যাবতই কম। ১৬০/১৭০ টাকার মধ্যেই সবসময় থাকে। বাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় কেউই আর মুরগি ধরে রাখতে চায় না। তাই দাম কিছুটা কম হলেও ছেড়ে দেয়। রাখতে গেলেই দিনে ৪/৫টি করে মেরে যায়। যে কারণে ১৭০ টাকায়, এমনকি মাঝেমধ্যে ১৬০ টাকা হলেও দিয়ে দিচ্ছি। আরেক মুরগি বিক্রেতা মফিজুল ইসলাম বলেন, মাসখানেক আগেও ব্রয়লার ১৬০ টাকায় বিক্রি করেছি। এখনও সেই দামেই বিক্রি করছি। লাভ তেমন নেই, প্রতি মুরগিতে কোন রকম খরচটা উঠতেছে। বনশ্রী এলাকার মাছ বিক্রেতা জসিম উদ্দিন জানান, মাছের বাজারে খুব বেশি পার্থক্য নেই। কিছু মাছের দাম কিছুটা কমেছে, আবার ইলিশসহ আরও কিছু মাছের দাম বেড়েছে। তবে সবমিলিয়ে ভালোই বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স