ঢাকা , শনিবার, ২১ জুন ২০২৫ , ৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৮ হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের লক্ষ্য

আমে চাঙ্গা চাপাইয়ের অর্থনীতি

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২০-০৬-২০২৫ ০১:০৪:১১ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২০-০৬-২০২৫ ০১:০৪:১১ অপরাহ্ন
আমে চাঙ্গা চাপাইয়ের অর্থনীতি সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
আমের অন ইয়ার, অর্থাৎ বেশি ফলনের বছর চলছে এবার। চলতি বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে কাঁচা ও পাকা আম এবং আম থেকে প্রক্রিয়াজাত পণ্যের বাজারজাত ও রফতানি মিলিয়ে ৭ হাজার ৫০০ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এ নিয়ে আশাবাদী আমচাষি, ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকরা। তাদের দাবি, প্রক্রিয়াজাত পণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ এবং রফতানি বাড়লে আম অর্থনীতির পরিসর আরও বাড়বে।

বর্তমানে জেলায় চলছে আমের ভরা মৌসুম। জেলার বাজারগুলোতে এখন খিরসাপাতি, ল্যাংড়া, লক্ষণভোগ, বারি-৪ ও গুটি জাতের আমে ভরপুর। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা ছুটে আসছেন কানসাট, রহনপুর ও ভোলাহাট আমবাজারে। সেখান থেকে আম সংগ্রহ করে পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। আমকে কেন্দ্র করে চাঙা হয়ে উঠেছে জেলার সামগ্রিক অর্থনীতি।

এ বছর ইংল্যান্ডে আম পাঠানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে আম রফতানি। আগের বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম যাচ্ছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। তবে এবারে নতুন একটি বড় বাজার হিসেবে যুক্ত হচ্ছে চীন। দেশটি ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আম আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যা নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে এখানকার চাষিদের।জেলায় আমের মৌসুম চলবে আগামী আগস্ট পর্যন্ত। এই সময় জুড়ে কাঁচা ও পাঁকা আমের কেনাবেচা, প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদন এবং রফতানিকরণে ব্যস্ত থাকবেন আমচাষি, উদ্যোক্তা ও রফতানিকারকরা। ভালো ফলনের কারণে এবং বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা করছেন চাষিরা।

সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আমচাষি তারেক রহমান বলেন, এবার আমের ফলন ভালো হয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকেই আবহাওয়া ছিল অনুকূলে। ঈদের ছুটিতে কিছুটা ক্ষতি হলেও এখন বাজার আবার চাঙ্গা হয়েছে। ৪০ বিঘা জমির আমবাগানে অর্ধেক আম পাড়া শেষ হয়েছে, আর এখন পর্যন্ত ভালো দামও পেয়েছি।বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আরেক কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, আমের মৌসুমে প্রায় তিন মাস এলাকার ৮০ শতাংশ মানুষ এই খাতে কাজ করেন। এখানকার আমভিত্তিক অর্থনীতি বিশাল সম্ভাবনাময়। এবার চীনের মতো বড় একটি বাজারে আম রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে। সেটি বাস্তবায়িত হলে বাজারের পরিসর বহুগুণ বাড়বে।

কৃষক নেতাদের মতে, আম থেকে প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদন ও রফতানি বাড়লে বাণিজ্যের পরিমাণও বাড়বে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, কাঁচা ও পাঁকা আমের পাশাপাশি যদি আম থেকে প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করা যায়, তবে জেলার আমভিত্তিক অর্থনীতির ভিত্তি আরও মজবুত হবে। এজন্য সরকার ও কৃষি বিভাগকে বিনিয়োগ এবং পরিকল্পনা বাড়াতে হবে।কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, আমের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাষিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। এই মৌসুমে জেলার আমভিত্তিক বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৮ হাজার কোটি টাকায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী বলেন, চলতি মৌসুমে আম ও প্রক্রিয়াজাত পণ্যের বাণিজ্য ৭ হাজার ৫০০ কোটি থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। চাষিদের চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর এ জেলা থেকে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রফতানি হয় ১৩৩ মেট্রিক টন আম, আর তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে রফতানি হয় ৩৭৬ মেট্রিক টন।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ