ঢাকা , শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫ , ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েলের আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানীয় খ্রিষ্টান-মুসলিমদের প্রবেশে বাধা

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ১৯-০৬-২০২৫ ০৮:১৭:৫০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৯-০৬-২০২৫ ০৮:১৯:২৮ অপরাহ্ন
ইসরায়েলের আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানীয় খ্রিষ্টান-মুসলিমদের প্রবেশে বাধা ​তেল আবিবের একটি ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে প্রবেশ করেছেন স্থানীয়রা। ছবি : সংগৃহীত
ইসরায়েলের জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতংশ ফিলিস্তিনি বা আরব। দেশটিতে আরব মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের বসবাস রয়েছে। সম্প্রতি ইসরায়েলের জাফা শহরের ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় তারা যে ভূগর্ভস্থ বোমা আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবহার করতেন, সেটির প্রবেশাধিকার হঠাৎ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলের ইহুদি প্রতিবেশীরা।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাফা শহরের ইয়েহুদা হায়ামিত সড়কের বাসিন্দারা বলেন, সম্প্রতি তেল আবিব লক্ষ্য করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় তারা ওই আশ্রয়কেন্দ্রে ঢোকার চেষ্টা করলে জানতে পারেন, প্রবেশের কোড নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছে।

৬৩ বছর বয়সী নাসির কতেলাত নামের এক ফিলিস্তিনি বলেন, আগে তার ভবনের কমিটি থেকেই তাদের আশ্রয়কেন্দ্রের কোড জানিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু এবার প্রায় ১২ থেকে ১৫ জন মুসলিম ও খ্রিষ্টান প্রতিবেশী আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে তাদের ‘অবাঞ্ছিত’ হিসেবে দেখানো হয়।

তিনি বলেন, ‘তাদের চোখ মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছিল যে তারা আমাদের দেখতে চায় না। পরে তারা জানায়, আমরা যেন আর না আসি। কোড পরিবর্তন করে দেওয়া হবে।’

নাসির কাতেলাত আরও জানান, ‘পরে তারা আরেকবার ঢোকার অনুমতি পেলেও সেবার জানিয়ে দেওয়া হয় যে, এটিই তাদের শেষ সুযোগ।’ 

তার ভাষায়, ‘সবকিছু দেখে পরিষ্কার মনে হয়েছে—শুধু আরব বলেই আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।’

জাফা শহরটি বর্তমানে তেল আবিবের একটি দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকা হিসেবে পরিচিত হলেও, একসময় এটি ছিল একটি সমৃদ্ধ ফিলিস্তিনি বন্দর। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সময় এই শহরের অধিকাংশ ফিলিস্তিনিকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাদের বেশিরভাগ মানুষ গাজার শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই নেয়।

আজকের জাফা একটি ‘মিশ্র শহর’ হলেও জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ এখনো ফিলিস্তিনি নাগরিক। তারাও নিরাপত্তা সুবিধা থেকে বঞ্চিত বলে অভিযোগ উঠছে। নতুন নির্মিত ভবনগুলোতে বাধ্যতামূলক নিরাপদ কক্ষ বা বোমা শেল্টার থাকলেও তা মূলত ইহুদি নাগরিকদের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।

উদাহরণস্বরূপ, উত্তর ইসরায়েলের আরব শহর তামরায় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে চারজন ফিলিস্তিনি নিহত হন। সেখানকার বাসিন্দারা আগে থেকেই সতর্ক করে জানিয়েছিলেন—৩৫ হাজার মানুষের এই শহরে কোনো পাবলিক বোমা শেল্টার নেই। অথচ কাছাকাছি ইহুদি বসতি মিত্সপে আবিবে মাত্র ১১শ জনের জন্য রয়েছে ১৩টি আশ্রয়কেন্দ্র।

তামরায় ফিলিস্তিনি নাগরিকদের মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু ইসরায়েলি নাগরিক উল্লাস করছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় এবং গাইছে ‘তোমার গ্রাম জ্বলে যাক’।

জাফার ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মী আবেদ আবু শাহাদা বলেন, ‘তামরার ঘটনাটি একটি স্তরে ইসরায়েলি ঘৃণার চিত্র তুলে ধরে। আর জাফার ঘটনা সেই ঘৃণার সামাজিক স্বীকৃতি ও কাঠামোগত বৈষম্যের উদাহরণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইচ্ছাকৃতভাবে ইরানকে উস্কে দিয়ে ইসরায়েলের সব নাগরিককে ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন। তবে সেই ঝুঁকির বোঝা সবাই সমানভাবে বহন করছেন না।’

তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দশকে ইসরায়েল যুদ্ধের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো অবকাঠামো গড়েছে। কিন্তু এসব সুবিধা কেবল ইহুদি বসতিগুলোতে বাস্তবায়ন করেছে। আরব শহরগুলো বা পাড়াগুলো পুরোপুরি উপেক্ষিত থেকে গেছে।’

মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরায়েলের প্রায় ২০ শতাংশ নাগরিক ফিলিস্তিনি। কিন্তু রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আইন ও অবকাঠামো নির্মাণে তাদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ফলে যখন যুদ্ধ বা সংকট আসে, তখন তারা হয়ে পড়েন ‘ইসরায়েলের যুদ্ধবন্দি’। একদিকে শত্রু দেশের হামলা, আরেকদিকে নিজেদের রাষ্ট্রের অবহেলা।

এই সংকটে জাফা বা তামরার ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, বরং এক জটিল নৈতিক ও রাজনৈতিক প্রশ্নের সামনে দাঁড় করাচ্ছে ইসরায়েলকে। একটি রাষ্ট্র কীভাবে তার নিজস্ব সংখ্যালঘু নাগরিকদের নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত রাখতে পারে?

বাংলা স্কুপ/ডেস্ক/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ