ঢাকা , শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​ভোল পাল্টে শিক্ষাখাতে তদবিরে ফের সক্রিয় দুই শতাধিক কর্মকর্তা!

আপলোড সময় : ১৮-১০-২০২৪ ০৩:৫১:১৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৯-১০-২০২৪ ০৪:০৮:০৯ অপরাহ্ন
​ভোল পাল্টে শিক্ষাখাতে তদবিরে ফের সক্রিয় দুই শতাধিক কর্মকর্তা! ​ফাইল ফটো
দেশের শিক্ষাখাতে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে অনিয়ম, দুর্নীতি আর ঘুষবাণিজ্যে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট সদস্যদের অনেকে ভোল পালটে এখনো সক্রিয় রয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং এসব সংস্থাভুক্ত ১৩টি প্রতিষ্ঠানের সর্বত্র এদের আধিপত্য। শিক্ষাখাতের বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে ঘুষবাণিজ্য নিশ্চিত করতে দুই শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী সক্রিয়। 
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরে তিনজন শিক্ষামন্ত্রী দায়িত্বে ছিলেন। প্রথম দুই মেয়াদে ১০ বছর ছিলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ, এরপর দীপু মনি এবং সর্বশেষ ছিলেন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। নাহিদের আলোচিত এপিএস মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈ, দীপু মনির ভাই ওয়াদুদ টিপু এবং নওফেলের এপিএসের হাত ধরেই হয়েছে সকল পোস্টিং-তদবির ও ঘুষ দুর্নীতির বাণিজ্য। আর এসব কাজে সহযোগিতা করছেন ওই সময়ে পোস্টিং পাওয়া কর্মকর্তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, থানা শিক্ষা অফিস থেকে শুরু করে আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস, শিক্ষা ভবন এমনকি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগে রয়েছে ঘুষের প্রভাব। স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তি, শিক্ষক নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, শিক্ষকের এমপিওভুক্তি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন, জাতীয়করণসহ অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের পেনশনের টাকা তুলতে ঘুষ দিতে হয়। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, মেরামত, আসবাবপত্র ও শিক্ষা সরঞ্জাম কেনাকাটা ও সরবরাহের প্রতিটি ধাপেই চলে সীমাহীন চাঁদাবাজি। শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগে সরকারি অর্থের যথেচ্ছ অপচয় আর লুটপাট চলে আসছে। 
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত সাড়ে ১৫ বছরে শিক্ষা প্রশাসনে ঘুরেফিরে ৯২ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা সাবেক তিন মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন। সাবেক এক মন্ত্রীর স্বামী ও ভাইয়ের জোরে দুর্নীতির দুর্গ গড়া শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক একজন মহাপরিচালকের অনুসারীরা এখনো শিক্ষা প্রশাসনে বহাল তবিয়তে। 
আবার এতদিন যারা আওয়ামী সুবিধাভোগী ছিলেন, তাদের কেউ কেউ ভোল পালটে হয়ে উঠছেন নতুন সরকারের সুবিধাভোগী। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, সেই সরকারের হয়ে যান এসব সুবিধাভোগী দুর্নীতিবাজরা। এখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, সকল শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিসহ (নায়েম) দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোতে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগীরা। এর কোনো কোনোটিতে দপ্তর প্রধান পদত্যাগ করলেও যাদের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারাও একই আদর্শের এবং সাবেক মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠ। 
গত ১৫ বছরের মধ্যে শিক্ষাখাতে বরাদ্দের অর্ধেকের বেশি ব্যয় হয়েছে অবকাঠামো উন্নয়নে। ফলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে অনিয়ম-দুর্নীতিও বেড়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ঘুষ ছাড়া কিছুই হয় না। রাজধানীসহ বড় শহরগুলোয় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল কিংবা কিন্ডারগার্টেনের অনুমতি নিতে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিতে হয়। হাইস্কুল ও কলেজের ক্ষেত্রে এই ঘুষের পরিমাণ সর্বনিম্ন ২ লাখ টাকা। কোনো কারণে প্রতিষ্ঠান বা নির্দিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অনুদান বা বেতন বন্ধ হয়ে গেলে তা পুনরায় চালু করতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। পেনশনের কাগজপত্র প্রক্রিয়ায় ঘুষ লাগে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণের উদ্যোগ নিতে চাইলে কমবেশি ২০ ধাপে ঘুষ দিতে হয়। প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ‘ইতিবাচক পরিদর্শন রিপোর্ট’ করিয়ে নিতে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দেওয়া যেন ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে। এমপিওভুক্তির কাজে একজন শিক্ষক বা কর্মচারীকে ন্যূনতম ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। 
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে এমপিওভুক্তির কাজ মাঠ প্রশাসনে ছেড়ে দেওয়ার পর এই ঘুষ বাণিজ্য আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফলে শিক্ষকদের হয়রানির মাত্রাও বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। এছাড়া নাম, বয়সসহ নানা বিষয় সংশোধন, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পেতে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে ফাইল পাঠাতে ঘুষ দিতে হয় ৮-১০ হাজার টাকা। জেলা শিক্ষা অফিসে দিতে হয় ৫-৭ হাজার টাকা।

বাংলা স্কুপ/বিশেষ প্রতিবেদক/এএইচ/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ