ইসরায়েল ও ইরান একে অপরের ওপর নতুন করে হামলা চালিয়েছে। রবিবার (১৫ জুন) রাতভর চালানো হামলা উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ইসরায়েল বিশ্বের বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্রে হামলা চালিয়ে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে আকস্মিক অভিযান সম্প্রসারিত করার পর, এই সংঘর্ষ নতুন মাত্রা পায়। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, রাতভর ইরান থেকে আরও ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে নিক্ষেপ করা হয়েছে এবং তারা তেহরানে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে।
রবিবার ভোরে জেরুজালেম ও তেল আবিবজুড়ে বিমান হামলার সাইরেন বেজে ওঠে। তেল আবিবের আকাশে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র দেখা যায় এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রতিরক্ষামূলক রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়। উভয় শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস জানায়, আগের এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় উত্তর ইসরায়েলের একটি বাড়ির কাছে তিন নারী নিহত ও আরও ১০ জন আহত হন। তামরা শহরের একটি আংশিক ধসে পড়া বাড়িতে টর্চ নিয়ে উদ্ধারকর্মীদের ধ্বংসস্তূপে অনুসন্ধান চালাতে দেখা যায়।
স্থানীয় সময় রাত ২টা ৩০ মিনিটের দিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইরান থেকে আরেকটি হামলার সতর্কতা জারি করে এবং জনগণকে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানায়। রাতভর একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৩টা ৩০ মিনিট নাগাদ অন্তত চারজন নিহত ও ৩৬ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি গণমাধ্যম একটি ১০ তলা আবাসিক ভবনের ছবি প্রকাশ করেছে। তারা দাবি করেছে, এটি কেন্দ্রীয় ইসরায়েলে অবস্থিত এবং হামলার ফলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।ইরান জানায়, তেহরানের শাহরান তেল ডিপো ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। রাজধানীর কাছে একটি তেল শোধনাগারে হামলার পর সেখানে আগুন ধরে যায়। এটিই ইরানের গ্যাস উৎপাদনের প্রধান উৎস। ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় তেহরানে অবস্থিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভবনেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যদিও তা ছিল সামান্য।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী জানায়, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ইসরায়েলের জ্বালানি অবকাঠামো ও যুদ্ধবিমান জ্বালানি উৎপাদনকারী স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করেছে। বাহিনীটি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, যদি ইসরায়েল তার আগ্রাসন চালিয়ে যায়, তাহলে ইরানের পাল্টা আক্রমণ আরও ‘ভারী ও বিস্তৃত’ হবে।পারমাণবিক কর্মসূচিতে বড় রকমের ছাড় না দিলে ইরানকে আরও ভয়াবহ পরিণতির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর ফলে রবিবার ওমানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মার্কিন-ইরান পরমাণু আলোচনা বাতিল করেছে তেহরান। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, যখন ইরান ইসরায়েলের ‘বর্বর’ হামলার শিকার, তখন আলোচনার কোনও পরিবেশ নেই।ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইরান ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ আক্রমণের মুখোমুখি হবে।
এর আগে শুক্রবার ইসরায়েল প্রথম হামলায় ইরানের তেল ও গ্যাস অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু বানায়নি, তবুও জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় তেলের দাম ৯ শতাংশ বেড়ে যায়।ইরানের জেনারেল এসমাইল কোসারি শনিবার বলেন, তেহরান উপসাগরে ট্যাঙ্কার চলাচলের নিয়ন্ত্রণকারী হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার বিষয়টি বিবেচনা করছে।ইরান জানায়, ইসরায়েলের অভিযান শুরুর প্রথম দিনেই ৭৮ জন নিহত হয় এবং দ্বিতীয় দিনে আরও বহু মানুষ প্রাণ হারান। একটি ১৪ তলা ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৬০ জন নিহত হয়, যাদের মধ্যে ২৯ জনই শিশু ছিল।
বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন