ঢাকা , রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫ , ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাফিলতি, ক্লান্তি, চালকের অসতর্কতাই দুর্ঘটনার কারণ

ঈদযাত্রার শেষদিনে ১১ মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১৪-০৬-২০২৫ ০৮:৩১:৩৬ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৪-০৬-২০২৫ ০৮:৩১:৩৬ অপরাহ্ন
ঈদযাত্রার শেষদিনে ১১ মৃত্যু সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
ঈদ শেষে প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটিয়ে ফিরছিলেন কর্মস্থলে—তবে অনেকের যাত্রা শেষ হলো রক্তাক্ত ট্র্যাজেডিতে। দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় একদিনেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১২ জন। ঝালকাঠি, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, পদ্মা সেতু ও চট্টগ্রামে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। গাফিলতি, ক্লান্তি, চালকের অসতর্কতা এবং যানবাহনের ত্রুটি মিলিয়ে ঈদের আনন্দ ম্লান করে দিল এই মৃত্যুবার্তা। আহত হয়েছেন অন্তত আরও ৫০ জন, যাদের অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শনিবার (১৪ জুন) প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-

ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান- ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার পাকাপোল এলাকায় হানিফ পরিবহনের একটি বাস ও একটি পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজাপুর-ভাণ্ডারিয়া আঞ্চলিক সড়কে রাজাপুর উপজেলা গালুয়া ইউনিয়নে এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পিকআপটি ভাণ্ডারিয়া থেকে রাজাপুরের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় বিপরীত দিক থেকে দ্রুতগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাস এসে পিকআপটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এ সময় পিকআপটি উল্টে পাশের খাদে পড়ে যায়। এ সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই পিকআপে থাকা দুজন নিহত হন। দুর্ঘটনার পর সড়কে যান চলাচল কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে রাজাপুর ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের উদ্ধার করে। তাদের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। এ বিষয়ে রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ঘটনার পর পরই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় এনেছে। তবে নিহতদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান- দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের সঙ্গে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় ৫ জন নিহত হয়েছেন। একই দুর্ঘটনায় আরও অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। শনিবার (১৪ জুন) ভোর ৪টা ২০ মিনিটের দিকে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের ঘোড়াঘাট উপজেলার নূরজাহানপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজমুল হক বিষয়ট নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন, বাসের সুপার ভাইজার নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার পারশিকারপুর গ্রামের মৃত আক্কাস আলীর ছেলে আমিনুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও জেলার সদর থানার কে কে বাড়ি এলাকার হাসেম আলীর মেয়ে তামান্না আক্তার, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য পঞ্জগড় জেলার সদর উপজেলার আব্দুল খালেকের ছেলে এরশাদ আলী, ঠাকুরগাঁও জেলার ভুল্লি উপজেলার বড় বালিয়া গ্রামের তারিকুল ইসলামের ছেলে আরিফ ইসলাম এবং ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার রাশেদ ভূঁইয়ার ছেলে কিবরিয়া ভুইয়া। ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, ঘটনাস্থলে আমবোঝাই কয়েকটি ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। ভোর ৪টার পর পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী নাবিল পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পেছন থেকে একটি আম বোঝাই ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে তিন জনের মৃত্যু হয় এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো দুই জনের মৃত্যু হয়। এসময় আরো ১৫ জন আহত হয়েছে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে হতাহতদের উদ্ধার করে। 

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান-পদ্মা সেতুতে যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার ও ট্রাকের সংঘর্ষে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে বাসের চালকসহ ২ জন নিহত হয়েছেন। একই দুর্ঘটনায় শিশুসহ আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১০ জন। গত শুক্রবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে সেতুর ২ নম্বর পিলারের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে একজনের নাম রকিব সমাদ্দার। তার গ্রামের বাড়ি খুলনা সদর উপজেলায়। নিহত অপরজনের নাম-পরিচয় এখনও জানা যায়নি। অন্যদিকে দুর্ঘটনায় আহতরা হলেন- গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলার ফকরা এলাকার আইব খানের ছেলে মিল্টন (২৫), খুলনা সদরের রকিব সমাদ্দারের মেয়ে আয়শা সিদ্দিক (১০), একই উপজেলার শেখ শহিদুল ইসলামের ছেলে শেখ খালিদুর জামান, খুলনার ফুলতলা উপজেলার হারুন অর রশিদের ছেলে মো. মামুন, একই উপজেলার ইয়াছিন গাজীর ছেলে আজাদ গাজী, খুলনার মুংলার হাট এলাকার তুতা শেখের ছেলে মো. হাবিব শেখ, খুলনার তেরখাদা এলাকার হাসমত শেখের ছেলে আরিফুল শেখ, খুলনা সদরের জব্বার মৃধার ছেলে হাবিব মৃধা, খুলনার দৌলতপুর উপজেলার ফরিয়াদ ইসলামের স্ত্রী কামরুন্নাহর ও একই উপজেলার জাকারিয়ার ছেলে ফরিয়াদ ইসলাম। জানা গেছে, সেতুর ২ নম্বর পিলারের কাছে যাত্রীবাহী একটি বাস, একটি প্রাইভেটকার ও ট্রাকের সংঘর্ষ ঘটে। ইমাদ পরিবহনের ওই বাসটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে এসেছিল। সংঘর্ষে ট্রাকের পেছনের অংশের সঙ্গে ধাক্কা লেগে বাসের চালকের আসনের অংশটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই বাসচালক ছাড়াও আরও এক যাত্রী মারা যান। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান-কুষ্টিয়ার মিরপুরে অ্যাম্বুলেন্স ও ইট বোঝাই ট্রলির সংঘর্ষে অনিক (১৮) নামে একজন নিহত হয়েছে। নিহত অনিক অ্যাম্বুলেন্সটির হেলপার ছিলেন। তিনিই অ্যাম্বুলেন্সটি চালাচ্ছিলেন। আর চালক এ সময় ভেতরে ঘুমিয়েছিলেন। এ দুর্ঘটনায় আরো তিনজন আহত হলেও তাদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। গতকাল শনিবার সকাল ৭টার সময় কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কের মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের সদরপুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার সন্নিকটে এ দুর্ঘটনা ঘটে।নিহত অনিক মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া ইউনিয়নের চারুলিয়া এলাকার হাফিজুর রহমানের ছেলে। কাকিলাদহ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই নাসির উদ্দিন জানান, সকাল ৭ টায় কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুরগামী অ্যাম্বুলেন্সটি সদরপুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার সন্নিকটে এসে সামনের চাকা ফেটে বিপরীত দিক থেকে আসা ইট বোঝায় ট্রলিকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই অনিকের মৃত্যু হয়। তবে অ্যাম্বুলেন্সে অন্য কোন যাত্রী ছিলো না। তিনি আরো জানান, মূলত নিহত অনিক অ্যাম্বুলেন্সের হেলপার। চালক ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলো এবং অনিক গাড়ি চালিয়ে মেহেরপুর যাচ্ছিলো। মিরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোমিনুল ইসলাম জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। সেই সাথে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটিকেও উদ্ধার করেছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়-চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক ও জাসাস নেতা আলী আজম (৬০) সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মারা গেছেন। শুক্রবার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এর আগে, বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুরে নগরের কর্নেল হাট এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে নগরের ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে রাত ৯টায় উত্তর কাট্টলী মুন্সিপাড়ায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। আলী আজম এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী রেখে গেছেন। আলী আজম বিএনপির বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। তার মৃত্যুতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় তিনি আলী আজমকে ‘সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ ও ত্যাগী নেতা’ হিসেবে স্মরণ করেন এবং তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান- সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ট্রাকের সঙ্গে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে শফিকুল ইসলাম শফি (৪৫) নামে এক মাইক্রোবাস চালক নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার হাটিকুমরুল বনপাড়া মহাসড়কের ১০ নম্বর ব্রিজের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। জানা যায়, নিহত শফিকুল ইসলাম শফি সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ পৌর সদরের মৃত গঞ্জের আলী ফকিরের ছেলে। তাড়াশ উপজেলা মাইক্রোবাস মালিক ও চালক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা সোহাগ বলেন, মাইক্রোবাস চালক শফিকুল ইসলাম নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার কাছিকাটা এলাকা থেকে ভাড়ায় যাত্রী নিয়ে ঈদের পরে কক্সবাজার যান। ভ্রমণ শেষে শুক্রবার ভোরের দিকে যাত্রীদের কাছিকাটা নামিয়ে দিয়ে মাইক্রোবাস নিয়ে তাড়াশের উদ্দেশ্য রওনা দেন। মাইক্রোবাসটি হাটিকুমরুল বনপাড়া মহাসড়কের ১০ নম্বর ব্রিজের কাছে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় চালক শফিকুল ইসলাম গুরুতর আহত হন। তিনি আরও বলেন, পরে শফিকুল ইসলাম শফিকে বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন উদ্ধার করে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে।  সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান। এ বিষয়ে গুরুদাসপুর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী লিডার মো. আলম হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আমার ঘটনাস্থলে পৌঁছে মুমূর্ষু অবস্থায় মাইক্রোবাসের চালককে হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পেয়েছি।

 বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ