অন্তর্বর্তী সরকারের আইন মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বারবার অযাচিত সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে উল্লেখ করে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ড. আসিফ নজরুল। বুধবার (১১ জুন) রাত ১২টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। ড. আসিফ নজরুল দাবি করেন, সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্ত বা আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সামগ্রিক দায় সরকারের হলেও অনেক সময় এককভাবে তাকেই দায়ী করা হচ্ছে, যা অনুচিত।
পোস্টে তিনি লিখেন, কয়েকদিন আগে মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞায়ন বিষয়ক ভুল সংবাদের জেরে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এই ঝড়ের অন্যতম শিকার হয় আমার পরিবারের সদস্যরা। দু-একজন তাদের ধিক্কার দিতে থাকে, কীভাবে এই আইন করলাম আমি! তারা বলে, এটা তো মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় করেছে! কিন্তু সমালোচকরা নাছোড়বান্দা! না, আইনটিতে তো লেখা আছে আইন মন্ত্রণালয়ের নাম। আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে আইন উপদেষ্টা লিখেন, আমি জানি, এরকম বহু শিক্ষিত মানুষ আছে সমাজে। তাদের কাছে সবিনয়ে বলি, অন্য যে কোনো মন্ত্রণালয় যে অধ্যাদেশই করুক না কেন, তা জারি করতে হয় আইন মন্ত্রণালয়কে। আমাদের রুলস্ অব বিজনেস অনুসারে এটাই বিধান। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে এটাই হয়।
উদাহরণস্বরূপ তিনি লিখেন, বাংলাদেশে এনবিআর নিয়ে যে আইনটা (অধ্যাদেশ) হয়েছে, তা করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত হওয়ার পর এটা জারি করতে হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়কে। সরকারী কর্মচারীদের শৃঙ্খলা নিয়ে যে আইন, তাও করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু এটা জারি করতে হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়কে। ড. আসিফ নজরুল লিখেন, অধ্যাদেশ আকারে যত আইন অতীতে হয়েছে, সেগুলো আইন মন্ত্রণালয় জারি করেছে। ভবিষ্যতে যেসব অধ্যাদেশ হবে, সেগুলোও আইন মন্ত্রণালয়কে জারি করতে হবে। এজন্য গেজেটের প্রথম পাতায় আইন মন্ত্রণালয়ের নামই থাকবে। কিন্তু, তার মানে এই নয় যে আইন মন্ত্রণালয় আইনগুলো করেছে বা এটি আইনগুলোর প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়।
আইন উপদেষ্টা হিসেবে তিনি নিজের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি লিখেন, আইন মন্ত্রণালয় নিজস্ব উদ্যোগে আইন করেছে কেবল এ মন্ত্রণালয়ের কার্যপরিধিভুক্ত বিষয়ে। যেমন, দেওয়ানি কার্যবিধির সংশোধনী আইন বা উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত আইনটি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। কিন্তু অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের কার্যপরিধিভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়নের কোনো ক্ষমতা আইন মন্ত্রণালয়ের নেই। আছে শুধু জারি করার দায়িত্ব। এটি স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা। আসিফ নজরুল আরও লিখেন, আইন তো তবু কিছুটা খটমটে বিষয়। কিন্তু সাদামাটা, সহজবোধ্য যে কোনো বিষয়েও আমাকে নিন্দা করার প্রবণতা আছে সমাজের কিছু মানুষের মধ্যে। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারের যেকোনো কাজের জন্য সমালোচনা যদি আমাকে করা হয়, তাহলে যেকোনো ভালো কাজের জন্য প্রশংসাও আমাকে কেন করা হয় না?
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা লিখেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি কীভাবে বিদেশে গেলেন এই দায় যদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে না দিয়ে আমাকে দেওয়া হয়, তাহলে দ্রব্যমূল্য যে স্থির রয়েছে, এই প্রশংসাও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে না দিয়ে আমাকে দিতে হবে। কিন্তু, এর কোনটিই আসলে করা ঠিক নয়।তিনি লিখেন, আমার কাজের জন্য নিন্দা বা প্রশংসা আমাকে করবেন, অন্যর কাজের জন্য অন্যকে। যে কোনো কাজের সামগ্রিক দায়দায়িত্ব আমাদের গোটা সরকারের। কিন্তু যদি নির্দিষ্টভাবে একজন উপদেষ্টাকে দায়ী করা হয় তাহলে সেটি শুধু তার মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত বিষয়ে করা উচিত। সমালোচকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আসিফ নজরুল লিখেন, যারা নিন্দা করেন, কুৎসা রটান, এ রমধ্যে হয়তো কোনো আনন্দ খুঁজে পান। কিন্তু, এটা অন্য কাউকে এমন কষ্ট দিতে পারে, যা আপনি নিজে কখনও বহন করতে চাইবেন না। এটি মনে রাখা ভালো। তিনি আরও লিখেন, আমি জানি ‘অপরের মুখ ম্লান ক’রে দেয়া ছাড়া প্রিয় সাধ নেই’- এমন মানুষ আছে সমাজে। যারা এমন না, তাদের কাছে অনুরোধ, কারও নিন্দা করার আগে একটু জেনে নিন। আল্লাহ আছেন, আমাদের সবাইকে একদিন জবাব দিতে হবে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন