কী কারণে মরক্কোতে এবার পশু কোরবানি নিষিদ্ধ করা হলো?
ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় :
০৫-০৬-২০২৫ ০৬:২৩:৪৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০৫-০৬-২০২৫ ০৭:০১:৪৪ অপরাহ্ন
ফাইল ছবি
আফ্রিকার দেশ মরক্কোতে এবার রাজকীয় ডিক্রি (সরকারি আদেশ) জারি করে ঈদুল আজহায় পশু কোরবানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। বুধবার (৪ জুন) রাষ্ট্রায়ত্ত্ব টিভিতে রাজা পঞ্চম মোহাম্মদের জারি করা রাজকীয় ডিক্রিটি পড়ে শোনান দেশটির ইসলাম ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ তৌফিক। ডিক্রিতে রাজা পঞ্চম মোহাম্মদ সাধারণ মানুষকে এ বছর কোরবানি না দিতে অনুরোধ জানান।
মরক্কোর ৯৯ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। দেশটিতে এ বছর ঈদুল আজহায় কোরবানি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি পুরো বিশ্বকে অবাক করেছে। কিন্তু কেন এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত?
সিদ্ধান্তের পেছনের কারণগুলো কী
গত ছয় বছর ধরে মরক্কোয় তীব্র খরা চলছে। যার ফলে গবাদি পশুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিশেষ করে ভেড়ার সংখ্যা গত এক দশকে ৩৮ শতাংশ কমেছে এবং এ বছর বৃষ্টিপাত গড়ে ৫৩ শতাংশ কম।
এর ফলে চারণভূমির অবস্থা খারাপ হয়েছে, যার ফলে পশুখাদ্য ও পানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মাংস উৎপাদনও হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে দেশের অর্থনীতি এবং খাদ্য সরবরাহে প্রভাব পড়েছে।
মরক্কোর সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটিতে গত কয়েক বছর ধরে প্রচণ্ড খরা চলছে। এছাড়া আরও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছে মরক্কো। যে কারণে পশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।
যেসব পশু এখনও অবশিষ্ট আছে সেগুলো রক্ষায় এ বছর কোরবানি না দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া কৃষিখাতের স্থায়িত্ব রক্ষাতেও এমন বিতর্কিত উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
সাধারণ মানুষ যেন এই সরকারি আদেশ অমান্য করতে না পারেন সেজন্য বিশেষ নিরাপত্তা ও তদারকি বাহিনীকে প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া পশু পরিবহনের পথেও বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। কেউ আদেশ অমান্য করে পশু কোরবানি করলে তাকে বিপুল অর্থ জরিমানা এমনকি কোরবানির পশু জব্দ করার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে।
তবে দেশটির একটি কৃষি সংগঠনের প্রধান আব্দেল ফাত্তাহ আমের জানিয়েছেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত কৃষকদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এমনিতেই খরার কারণে তারা লোকসানে আছেন। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঈদকে সামনে রেখে তারা পশু প্রস্তুত করেছেন। কিন্তু এখন কৃষকরা যদি এগুলো বিক্রি করতে না পারেন তাহলে আরও ক্ষতির মুখে পড়বেন। তিনি কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সরকারি বাহিনী বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে সাধারণ মানুষের কেনা ভেড়া জব্দ করছে।
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, তারা এই সরকারি আদেশ কোনোভাবেই মানবেন না এবং ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পশু কোরবানি করবেন।
জনসাধারণের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
কেউ কেউ এই সিদ্ধান্তকে ধর্মীয় রীতিনীতিতে সরকারি হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। আবার কেউ কেউ অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সংকটের প্রেক্ষাপটে এটাকে কার্যকর পদক্ষেপ বলছেন।
ইসলামে নবী ইব্রাহিমের আল্লাহর প্রতি নিষ্ঠা ও ত্যাগের স্মরণে ঈদুল আজহার সময় কোরবানি গুরুত্বপূর্ণ। তবে মরক্কোর এই পদক্ষেপ ধর্মীয় রীতিনীতিতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার সরকারের আছে কিনা তা নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে।
অর্থনৈতিক সংকট ও আমদানির উপর নির্ভরতা
খরা ও গবাদি পশুর ঘাটতির কারণে মরক্কোয় মাংসের দাম তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে অনেক পরিবারের জন্য কোরবানির জন্য পশু কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরকার মাংসের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে ১ লাখ ভেড়া আমদানির জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং গরু, ভেড়া ও উটের উপর থেকে আমদানি শুল্ক এবং ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে। তবে এই পদক্ষেপ দেশটির কোরবানির যে ঐতিহ্য তা পূরণ হয়নি।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান ও দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন
বাংলা স্কুপ/ডেস্ক/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স