ঢাকা , শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫ , ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খালেদা জিয়াকে ‘কালো মানিক’ উপহার দিতে ঢাকার পথে সোহাগ

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০৫-০৬-২০২৫ ০২:১৫:২৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৫-০৬-২০২৫ ০৫:৫৯:৫৯ অপরাহ্ন
খালেদা জিয়াকে ‘কালো মানিক’ উপহার দিতে ঢাকার পথে সোহাগ সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
নিজের গোয়ালঘরে লালন পালন করা ষাঁড় ‘কালো মানিক’কে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন কৃষক সোহাগ মৃধা। তবে বিক্রির উদ্দেশ্যে নয়, প্রিয় নেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে উপহার দেওয়ার জন্য। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকালে দুটি মিনি ট্রাক নিয়ে তারা ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকায় যাওয়ায় উদ্দেশে ভাড়া করা হয়েছে দুটি মিনি ট্রাক। চারপাশে ব্যানার, বাদ্যযন্ত্র, স্লোগান, হুল্লোড়-লোকজনের ভিড়। একটি ট্রাকে সাজানো কালো রঙের বিশাল এক ষাঁড়, নাম কালো মানিক। গলায় মালা, গায়ে রঙিন কাপড়। এক অসম্ভব স্বপ্ন পটুয়াখালীর প্রান্তিক কৃষক সোহাগ মৃধার। নিজের হাতে লালনপালন করা ষাঁড়টি উপহার দিতে চান প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে।

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর ঝাটিবুনিয়া গ্রামে সোহাগ মৃধা ২০১৮ সালের শেষের দিকে চৈতা বাজার থেকে মাত্র ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকায় একটি গাভি কিনেছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে গাভিটি একটি বাছুর প্রসব করে। পরে গাভিটি বিক্রি করে বাছুরটি রেখে দেন তিনি। আর সেই বাছুরই আজকের কালো মানিক।ছয় বছরের যত্ন, আদর আর কঠোর পরিশ্রমে গড়ে ওঠে বিশাল আকৃতির ষাঁড়টি। এখন ওজন প্রায় ৩৫ মণ, দৈর্ঘ্য ১০ ফুট, উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। স্থানীয় বাজারে গত বছর কোরবানির সময় ষাঁড়টির দাম ওঠে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু সোহাগের সাফ কথা- ‘এই ষাঁড় বিক্রির জন্য না, নেত্রীর জন্য।’ঢাকায় ষাঁড়টি পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি চলে বেশ কিছুদিন ধরেই। দুটি মিনি ট্রাক ভাড়া করা হয়েছে, খরচ হবে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। দলের প্রতীকে সুসজ্জিত ব্যানার, কাপড়, এমনকি বাদ্যযন্ত্রের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। গ্রামের শত শত মানুষ মিলে তৈরি করেছে এক আনন্দ-উৎসবের পরিবেশ।

সোহাগ মৃধা বলেন, ভাইরালের জন্য না। আমি সত্যিই চাই, নেত্রীর কোরবানির জন্য যাক আমার কালো মানিক। এতে আমার কোনো লাভ নেই, শুধু ভালোবাসা আছে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০২৩ সালে সংবাদ মাধ্যমে দেখেছিলাম, এক কৃষক গরু উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তখন মনে মনে ইচ্ছা হয়েছিল, যদি কোনো দিন সুযোগ পাই আমিও আমার প্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে একটি গরু উপহার দেব। আজ সেই সুযোগ এসেছে। আল্লাহ যদি কবুল করেন এবং নেত্রী যদি এই গরু গ্রহণ করেন, তাহলে আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা পূরণ হবে। আশা করি, নেত্রী আমাকে নিরাশ করবেন না।

সোহাগের মা হাজেরা বেগম বলেন, ‘ও (সোহাগ) ছোটবেলা থেইকাই বিএনপি ভালোবাসে। কয় বছর ধইরা কয়- এই গরু নেত্রীরে দিবো। সংসারে কত কষ্ট গেছে, কত সময় ভাত কম খাইছি, কিন্তু ওরে থামাই নাই। মানিকরে আমরা ঘরের মানুষ বানাইয়া রাখছি। আজ যাইতেছে ঢাকায়, আমাদের গোয়াল ঘর খালি হইয়া যাইবে। চোখে পানি আসে, কিন্তু মনে শান্তি লাগে। নেত্রী যদি গ্রহণ করেন, তয় আমরা ধন্য হইয়া যামু।’সোহাগের স্ত্রী পলি বেগম বলেন, ‘আমরা এই মানিকরে ৬ বছর সন্তানের মতোই মানুষ করছি। গায়ে সর্দি লাগলে ওষুধ দিছি, খাইছে কি না সেই দুশ্চিন্তা করছি। আজ যাইতেছে ঢাকায়, ঘর ফাঁকা লাগবে। কিন্তু এই কান্না দুঃখের না, এটা খুশির কান্না। যদি নেত্রী এই গরু গ্রহণ করেন, তয় আমাদের সব কষ্ট সার্থক হইবো।’সোহাগ জানেন না আদৌ বেগম খালেদা জিয়া তার এই উপহার গ্রহণ করবেন কি না। তবে ঢাকায় পৌঁছে যদি ফিরিয়েও দেওয়া হয়, তবুও তার ভালোবাসা কখনোই কমবে না। কারণ তার চোখে কালো মানিক কেবল একটি গরু নয়, এটি তার শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং রাজনৈতিক চেতনার এক জীবন্ত প্রতীক। শেষ কথায় সোহাগ বললেন, ‘ভালোবাসা হিসাব কষা যায় না ভাই। নেত্রী যদি নাও নেন, তবু শান্তি পাবো চেষ্টা তো করছি। এইটাই আমার জীবনের বড় পাওয়া।’

আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সোহাগ আমাদের দলের একনিষ্ঠ, ত্যাগী কর্মী। গরুটি নেত্রীকে উপহার দেওয়ার কথা যখন প্রথম বললো, তখন আমরা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারিনি। ভেবেছিলাম, আবেগে বলছে। কিন্তু ধাপে ধাপে ওর প্রস্তুতি দেখে এখন স্পষ্ট বুঝি, এটা শুধু আবেগ না, এটা ওর বিশ্বাস, ভালোবাসা আর রাজনীতির প্রতি দায়বদ্ধতা। আজকাল রাজনীতিতে এতটা নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দেখা যায় না। সোহাগ তা প্রমাণ করেছে। আমরা গর্বিত, এমন একজন কর্মী আমাদের ইউনিয়নে আছে। আমরা তার সফলতা কামনা করি।’

বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ