ঢাকা , শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫ , ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রংপুরে কোরবানির হাটে দেশীয় পশুর প্রাধান্য

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০৪-০৬-২০২৫ ০৪:০৭:০২ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৪-০৬-২০২৫ ০৪:০৭:০২ অপরাহ্ন
রংপুরে কোরবানির হাটে দেশীয় পশুর প্রাধান্য সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র তিন দিন বাকি। কোরবানির পশুর হাট এখন জমে উঠেছে। রংপুর জেলার ৮টি উপজেলা ও রংপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ছোট-বড়, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় শতাধিক হাট বসেছে। এর মধ্যে লালবাগ, বুড়িরহাট, নিসবেতগঞ্জ, চওড়া, বেতগাড়ি, খানসামা, পাওটানা ও চৌধুরানী হাট সবসময়ই কোরবানির পশু কেনাবেচার জন্য বিখ্যাত। এসব হাটে এবার দেশী গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে।

জেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর রংপুরে কোরবানির পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৭৫২টি। জেলার প্রায় ১২ হাজার খামারে প্রস্তুত করা হয়েছে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৩১২টি পশু। অর্থাৎ জেলায় চাহিদার চেয়ে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৬১টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি হাটেই গত সপ্তাহের তুলনায় গরু-ছাগলের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বিক্রিও বেড়েছে কয়েকগুণ। ঈদ ঘনিয়ে আসায় হাটগুলোতে পুরোদমে পশু কেনা-বেচা চলছে। তবে পশুর দাম নিয়ে রয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিক্রেতারা বলছেন, গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় লালন-পালনের খরচও বেড়েছে। তাই কম দামে পশু ছাড়ার কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, কোরবানির সময় দাম কিছুটা বাড়া স্বাভাবিক হলেও এবার ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিকের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি দাম চাচ্ছেন। এটি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। হাটে আসা পাইকার ও স্থানীয়রা জানান, গত বছর যে গরু ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকায় পাওয়া যেত, এবার সেটি কিনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকায়। অন্যান্য বছর ঈদের ১৫ থেকে ২০ দিন আগেই ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে রংপুরের হাটগুলো থেকে গরু কিনে নিয়ে যেতেন। তবে এ বছর সেই সংখ্যা খুবই কম।

এদিকে হাসিল (খাজনা) নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী গরু ও মহিষের জন্য ৫০০ টাকা এবং ছাগল ও ভেড়ার জন্য ১৫০ টাকা হাসিল ধার্য করা হয়েছে। ক্রেতার কাছ থেকে এই হাসিল আদায় করার কথা। কিন্তু বাস্তবে প্রায় প্রতিটি হাটেই অতিরিক্ত হাসিল আদায় করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত অঙ্কের দ্বিগুণ হাসিল আদায় করা হচ্ছে। কোনো কোনো হাটে বিক্রেতাদের কাছ থেকেও হাসিল নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ নিয়ে প্রায় সময়ই ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে ইজারাদারদের বচসা লেগে যাচ্ছে। বিক্রেতাদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে নীরব ভূমিকা পালন করছে।

রংপুর ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার লতিফুর রহমান মিলন বলেন, পশুখাদ্যসহ অন্যান্য উপকরণের দাম লাগাতার বাড়তে থাকায় রংপুরে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক খামার বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে। যারা এখনো টিকে আছেন, তাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এ বছর গরুর মাংসের কেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকার নিচে বিক্রি করলে খামারিদের লোকসান হবে। তারা ন্যূনতম লাভে পশু বিক্রি করতে চায়। কিন্তু সেই লাভ না হলে খামার ধরে রাখা সম্ভব নয়। রংপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবু ছাঈদ জানান, কোরবানির ঈদে চাহিদা পূরণের পরও পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। হাটগুলোতে অসুস্থ পশু যেন কেউ বিক্রি না করতে পারে, সে জন্য জেলার বিভিন্ন হাটে মেডিকেল টিম কাজ করছে। কোনো পশু অসুস্থ হলে হাটেই চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

হাইওয়ে পুলিশের রংপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বড়দরগা হাইওয়ে থানার আওতায় থাকা শঠিবাড়ী গরুর হাটের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তদারকি করা হচ্ছে। হাট ইজারাদারদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতন করার জন্য কাজ চলছে। যাতে কোরবানির পশুবাহী যানবাহন সড়কে কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হয় সে বিষয়েও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মজিদ আলী বলেন, চাঁদাবাজি ও হয়রানি রোধে কন্ট্রোল রুম, গোয়েন্দা নজরদারি ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ‘মলম পার্টি’, ‘হালুয়া পার্টিসহ প্রতারকচক্রের বিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ