ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫ , ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মবের নামে নাশকতার সুযোগ নাই : সারজিসকে সেনা কর্মকর্তা

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০১-০৬-২০২৫ ০৩:২৭:২৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০১-০৬-২০২৫ ০৫:৫৪:১৪ অপরাহ্ন
মবের নামে নাশকতার সুযোগ নাই : সারজিসকে সেনা কর্মকর্তা সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
রংপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের পৈতৃক বাস ভবন স্কাই ভিউতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় সেনাবাহিনী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দুই নেতাসহ বিএনপি নেতাদের ডেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তে তাদের সহায়তা চেয়েছে। শনিবার (১ জুন) গভীর রাতে রংপুর নগরীর পায়রা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রাত ৩টা পর্যন্ত নগরীজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।

সেনাবাহিনী রংপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহামেদ ইমতি ও জেলা আহ্বায়ক ইমরান আহামেদকে শনিবার রাত ১২টার দিকে পায়রা চত্বরে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার খবর পেয়ে রাত দেড়টার দিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তিনি সেনাবাহিনীর ৭২ ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন।

সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতাসহ বিএনপি নেতাদের ডেকে বৃহস্পতিবার জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাসায় হামলা, ভাঙচুরসহ তাণ্ডবের ঘটনায় অংশগ্রহণকারীদের ভিডিও চিত্র ও ছবি দেখিয়ে তাদের ধরিয়ে দিতে সহায়তা চেয়েছেন।এনসিপির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ইমরান আহামেদ ও ইমতিয়াজ আহামেদ ইমতির ওপর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের হামলা ও আহত করার ঘটনায় রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে প্রধান আসামি ও সাবেক সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমানসহ ১৮ জনের নামে শনিবার রাতে লিখিত অভিযোগ করে থানা থেকে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় সেনাবাহিনীর একটি দল তাদের ডেকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শমসুজ্জামান শামু, সদস্য সচিব মাহফুজুন্নবী ডন, জেলা সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুকেও সেখানে ডেকে জি এম কাদেরের বাসায় হামলায় অংশগ্রহণকারীদের ভিডিও দেখিয়ে বলা হয়, এ ঘটনায় তাদের দলের লোকজন জড়িত ছিল কি না। এ ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপির নেতাদের কাছ থেকে অপরাধীদের ধরতে সহায়তা চায় সেনাবাহিনী।

এ সময় ঘটনাস্থলে মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি সাংবাদিকদের বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ তাদেরকে ফোন দিয়ে কোথায় আছি জানতে চাওয়া হয়। তারা পায়রা চত্বরে আছেন জানালে সেনাবাহিনী সদস্যরা সেখানে চলে আসেন। হামলার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তে তাদের সহযোগিতা চেয়েছেন সেনাবাহিনী।

অপরদিকে বিএনপির মহানগর আহ্বায়ক শামসুজ্জামান শামুও সাংবাদিকদের বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আমাদেরকেও এখানে ডাকা হয়েছে। তারা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাস ভবনে হামলার ঘটনায় তাদের দলের কারা কারা জড়িত ছিল। সেনাবাহিনী ওই ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও তাদেরকে দেখিয়েছে। আমরা ওই ভিডিও দেখে একজনকে শনাক্ত করেছি। এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে- এমন সংবাদ জানতে পেরে রাত ১টার দিকে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি ওই স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রংপুরে ফ্যাসিস্টদের দোসরদের গ্রেফতার না করে অভ্যুত্থানের সহযোদ্ধাদের বিব্রত করলে আগামীকাল রংপুরের রাজপথে আবার দেখা হবে। আর আমরা সেখানে সামনের সারিতে থাকবো।’এর কিছু সময় পর রাত দেড়টার দিকে বৃষ্টির মধ্যেই ঘটনাস্থল পায়রা চত্বরে এসে উপস্থিত হন সারজিস আলম। সেখানে সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে কথা বলেন।পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, জাতীয় পার্টি বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগকে স্বৈরাচারী সরকারে পরিণত হতে সমর্থন দিয়েছে। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের বি টিম। তারা রংপুরে অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তাদের সঙ্গে মিছিলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা অংশ নিচ্ছে। জি এম কাদের রংপুরে এসে গোপন বৈঠক করে জাতীয় পার্টির আড়ালে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার ষড়যন্ত্র করছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর প্রতিবাদ করলে জাতীয় পার্টির সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধ করেতে হবে। আমরা সরকারের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলবো। জাতীয় পার্টির নেতা অবৈধ ভোটে রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এখন মেয়র পদ ফিরে পেতে পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছে। তারা আল্টিমেটাম দেয়, বিক্ষোভ করে। তাদের সঙ্গে কারা কারা আছে এদের খুঁজে বের করতে হবে। তিনি রংপুর নগরীর আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

এনসিপির এই নেতা আরও বলেন, তদন্তের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হোক, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির যে কাউকে হোক জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে। অবশ্যই প্রয়োজন। আমরা মনে করি রাত ১ টা,২ টা, ওই সময়টাই দৃষ্টিকটু দেখায়। আমরা প্রত্যাশা করি, তাদের যেকোনও টাইমে দিনের বেলা অফিস আওয়ারে ডেকে নেওয়া হয়। সবাই প্রস্তুত থাকবে এ বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য।সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম সারজিস আলমকে বলেন, ‘শরীরে যতক্ষণ রক্ত আছে, উই আর নট গোয়িং টু প্রমোট এনিওয়ান যে দেশের বিরুদ্ধে করে। আপাতত স্ট্যান্ডিং হলো, যে জনগণের অসুবিধা করে, ভ্যান্ডালিজম (নাশকতা) করে, মবের নামে যে আগুন লাগায়, ঘরদোর ভাঙচুর করে, এই পার্টিটাকে বার্তা দেওয়া যে, না, এইটা করার সুযোগ নেই এখন।’তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের স্বার্থে সবকিছু করতে প্রস্তুত, সেটাই আমরা রংপুরে করে যাচ্ছি। দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যেটা যাবে, সেটা দলমত নির্বিশেষে যে খারাপ কাজ করবে তার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান খুবই কঠোর। কোনোভাবেই মানুষের ক্ষতি হয়, কোনও কিছু ভেঙে ফেলা– এই জিনিসগুলো করার অবকাশ আমাদের অবস্থানে নেই। এটাই আমাদের বার্তা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপি নেতৃবৃন্দ দুই পক্ষই আমাদের সহযোগিতা করতে চেয়েছেন। তারা বৃহস্পতিবারের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে শনাক্ত করতে পেরেছেন কে কে আছে তাদের দলে, যাদের হাতে লাঠি ও অন্য জিনিস ছিল, সেগুলো থাকার কথা ছিল না। এ জন্য তারা বিব্রতবোধ করেছেন এবং কথা দিয়েছেন আগামীকাল রবিবার তাদের হাজির করবেন। ভবিষ্যতে তারা এমনটা করবেন না, এটা আমরা আশা করছি।

এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানায় গিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ জাতীয় পার্টি ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের ১৮ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়ে মামলা করেন।রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান জানিয়েছেন, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। তবে এই অভিযোগ এজাহার হিসেবে এখন গ্রহণ করছেন না। তদন্তের পর ব্যবস্থা নেবেন। লিখিত দাখিল করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির রংপুর জেলা সংগঠক আলমগীর রহমান নয়ন।

প্রসঙ্গত, রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাসভবনে গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, গুলি বর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণ, গান পাউডার দিয়ে মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে শুক্রবার রাতে জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আরিফ আলী বাদী হয়ে অভিযোগ দিলেও পুলিশ মামলা রেকর্ড না করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে। এর প্রতিবাদে শনিবার জাতীয় পার্টি রংপুর নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। অন্যথায় থানা ঘেরাও হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানিয়েছে।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ