মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল আজহা। ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষের যানবাহনের ভিড়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল যমুনা সেতু মহাসড়কে সৃষ্টি হয় যানজটের। ঈদুল ফিতরে ঢাকা-টাঙ্গাইল যমুনা সেতু মহাসড়কে যানজট না হলেও ঈদুল আজহায় যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। তবে এবার ঈদযাত্রার আগে মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। ফলে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই মহাসড়কে নেমে আসে আতঙ্ক। এই মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতকারীদের মধ্যে এখন ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে পুলিশ বলছে মহাসড়কে টহল কার্যক্রমসহ নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
প্রতি বছর ঈদে এই মহাসড়ক দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ২৪ জেলার লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করে। যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। কোরবানির পশু পরিবহন এবং ঈদ যাত্রায় ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতের যানবাহনের চাপে যানজটের শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়ক। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়ক পথে উত্তরবঙ্গের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম এই মহাসড়কটি। এ কারণে প্রতি বছর ঈদে এই সড়কে যানবাহনের জটলা লাগে। শুধু ঢাকা-টাঙ্গাইল যমুনা সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইলের অংশ ৬৫ কিলোমিটার।
নিরালা সুপার যানবাহনের সুপারভাইজার হাসান আলী বলেন, ঈদুল ফিতরে মহাসড়ক স্বাভাবিক ও যানবাহনের চাপ ছিল কম। এবারের ঈদ যাত্রায় যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হবে। এবারে মানুষের চাপে যানবাহনের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। পশুবাহী ট্রাক বৃদ্ধি পাবে। এবার ঈদের আগে ছুটি কম। এসব মিলেই এবারের ঈদে যানজট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। কুড়িগ্রামের যাত্রী ইকবাল বলেন, মহাসড়কে রাতে ডাকাতি হচ্ছে। যারা রাতে বাড়ি ফিরবে তারা আতঙ্কে রয়েছে। প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই ঈদ যাত্রায় যাতে করে মানুষ কোন দুর্ঘটনার শিকার না হয়। পুলিশ প্রশাসনকে সচেতন থাকতে হবে।
সিরাজগঞ্জের যাত্রী মারুফ হাসান বলেন, সম্প্রতি মহাসড়কে বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ঈদের আগে মানুষ গ্রামে বাড়ি যাবে। রাতে যারা বাড়ি ফিরবে তাদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। এবার ঈদে মানুষ ঘরমুখো হবে বেশি। ঈদের পর মানুষ ছুটি পেয়েছে বেশি। এছাড়া এবার মহাসড়কে যানজট হবে। কারণ ঈদের আগে ছুটি কম। সে হিসেবে ঢাকা থেকে বেশিরভাগ মানুষ গ্রামের বাড়ি চলে আসবে। তাই মহাসড়কে এবার যানজট হবে। আরেক যাত্রী শফি মিয়া বলেন, রাতে ও দিনে মহাসড়কে ছিনতাই ও ডাকাতি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। মানুষ যাতে ভালো মতো বাড়ি পৌঁছাতে পারে সে দিকে পুলিশ প্রশাসনের নজর দিতে হবে। ঈদুল ফিতরে মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরেছে। তবে এবার মহাসড়কে যানজট হবে। এবার শহর থেকে মানুষ গ্রামে বেশি যাবে।
টাঙ্গাইল জেলা বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন বলেন, সরকারিভাবে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন সভা করেছে। নির্দিষ্ট গন্তব্য যাওয়ার আগে প্রতিটি বাসেই মোবাইল ফোন দিয়ে সবার ছবি তুলে রেখে সঙ্গে সঙ্গে ছবি ও ভিডিওগুলো পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। রাতে রাস্তায় কোনো যাত্রী উঠলে তাদের ছবি তুলে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও ওই ভিডিও বা ছবিগুলো ডাকাত ধরার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবে। বাসে যাদের সিসি ক্যামেরা লাগানোর সামর্থ্য আছে তারা সিসি ক্যামেরা লাগাবে। তিনি আরও বলেন, এবার ঈদের আগে ছুটি কম। ঈদের আগে ২ দিন ছুটি হওয়ায় যানজট হওয়ার আশঙ্কা করছি। যদি বৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে মহাসড়কে যানবাহনের ধীর গতি থাকবে। ঈদের পর ছুটি বেশি থাকায় ফিরতি পথে যানজট হবে না। প্রশাসন মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকবে। আমাদের লোকজনও থাকবে। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে গন্তব্য পৌঁছাতে পারে। সেজন্য পুলিশ সবসময় মহাসড়কে থাকবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম গ্রুপের ম্যানেজার রবিউল আওয়াল বলেন, এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কের ফোর লেনের ৪২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখনও মহাসড়কে ফোর লেন চালু আছে। ঈদুল ফিতরের দুই লেনের কিছু অংশ চালু করেছিলাম। যার কারণে ঈদুল ফিতরে কোনো যানজট হয়নি। এবার ঈদুল আজহায় যানজট হবে না। সাধারণ মানুষ ভোগান্তি ছাড়ায় বাড়ি ফিরতে পারবে।
যমুনা সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল বলেন, গত ঈদুল ফিতরের ন্যায় এবারও ঈদুল আজহায় সেতু দিয়ে সার্বক্ষণিক টোল চালু রাখার জন্য দুই প্রান্তে ৯টি করে বুথ সচল থাকবে। মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা দুটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। আগের মতোই প্রস্তুতি রয়েছে। আশঙ্কা আছে এ কারণে আমাদের ঈদের আগে আড়াই থেকে তিন লাখ যানবাহন যায় উত্তরবঙ্গে। এবার ঈদের আগে ছুটি কম।আমরা সার্বিক প্রস্তুতি রেখেছি। সেতুর ওপর কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেজন্য দুইটি রেকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমাদের পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় আছে। আমরা সবাই মিলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ শরীফ বলেন, ঈদুল ফিতরের মতো এবারও ঈদুল আজহায় ঘরমুখো মানুষ যানজট মুক্ত ও স্বাচ্ছন্দ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। মহাসড়কে সবসময় মোটরসাইকেল টিম থাকবে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে যেন দ্রুতই ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারে। এলেঙ্গা হাইওয়ে থানা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা আছে। আমি নিজেও প্রতিদিন রাতে টহলে থাকি। মানুষের নিরাপত্তা যাতে থাকে সেজন্য আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। আশা করি পরবর্তী কোনো ঘটনা মহাসড়কে ঘটবে না।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রাকিবুল হাসান রাসেল বলেন, মহাসড়কে পুলিশের টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঈদযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল যমুনা সেতু মহাসড়কে টাঙ্গাইল অংশে ছয় শতাধিক জেলা পুলিশ নিয়োজিত থাকবে। রেকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মহাসড়ক দিয়ে যাত্রীরা নিরাপত্তায় নির্বিঘ্নে বাড়িতে যেতে পারে সে বিষয় আমরা সার্বক্ষণিক চেষ্টা থাকবে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন