বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে ভারী বর্ষণ ও অস্বাভাবিক জোয়ারে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত জোয়ারের চাপে দ্বীপটির একমাত্র প্রধান সড়কের একাধিক স্থানে ভেঙে গেছে। সড়কপথে গাড়ি চলাচল পুরোটা অচল হয়ে পড়েছে। এতে স্থানীয়দের চলাচলের একমাত্র ভরসা এখন নৌকা।
নিঝুম দ্বীপের স্থানীয়রা জানান, টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধিতে নিঝুম দ্বীপের প্রায় প্রতিটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তীব্র জোয়ারের ধাক্কায় বন্দরটিলা বাজার, ছেওয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক ভেঙে পড়ে। ফলে দ্বীপের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ, রোগী ও জরুরি সেবার ওপর।
উপজেলা প্রকৌশলী অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে আইলা পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় বন্দরটিলা ঘাট থেকে নামার বাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ আরসিসি ঢালাই সড়কটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ১৪ বছরেও একবারও মেরামত করা হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সড়কটির বিভিন্ন অংশ নষ্ট হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুর রহমান জানান, নদীভাঙন, জোয়ার ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নিঝুম দ্বীপের অবকাঠামোগত সংকট দিন দিন বাড়ছে। এবারের জোয়ারে প্রধান সড়কটি একাধিক স্থানে ভেঙে গিয়ে খালের রূপ নিয়েছে। হাসপাতালে যাওয়ার মতো অবস্থাও নেই। পর্যটন কেন্দ্র হলেও কেউ একবার এলে দ্বিতীয়বার ভুল করেও আসার সাহস পায় না। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, জোয়ারে দ্বীপের সব রাস্তা ভেঙে গেছে। স্কুলে যেতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। যদি রাস্তা ভালো থাকত তাহলে পড়াশোনার ক্ষেত্রে সুবিধা হতো। সড়কের খারাপ অবস্থার কারণে কিছুদিন আগেই এক ইউপি সদস্যের ছেলেও প্রাণ হারায়।নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লাভলী আক্তার বলেন, নিম্নচাপজনিত দুর্যোগে এখনও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। সড়কের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। কয়েকটি জায়গায় পুরোপুরি ধসে পড়েছে। চলাচল অনুপযোগী হওয়ায় নৌকায় করে মানুষ রাস্তার একপাশ থেকে অন্য পাশে যেতে হচ্ছে।
হাতিয়া উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন কারণে এতদিন সড়কটি মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এখানে আরসিসি ঢালাই ছাড়া সড়ক টেকানো সম্ভব নয়। রাস্তাটি প্রশস্ত করার প্রয়োজনও রয়েছে। এরইমধ্যে প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন হয়েছে, তবে ডিজাইন পরিবর্তন প্রয়োজন। সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঢাকায় বসে সিদ্ধান্ত নেবে। আশা করছি, দ্রুত নতুন করে সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন