দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় অস্বাভাবিক জোয়ারে নিঝুমদ্বীপ সহ হাতিয়া দ্বীপের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের তীব্রতায় বেড়ী বাঁধের বাহিরে মানুষের বাড়িঘর দোকান-পাটের মালামাল ভেসে যায়। ৩ নং সতর্ক সংকেত বলবত থাকায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাময়িকভাবে হাতিয়ার সঙ্গে সকল ধরনের নৌ-যাতায়াত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকাল থেকে নিম্নচাপের প্রভাবে হাতিয়ায় ধমকা ও ঝড়ো হাওয়া সহ ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। নদী ও সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। দুপুরের জোয়ারে পানির উচ্চতা বেড়ে নলচিরা ঘাট এলাকায় বেড়ীর বাইরে, নিঝুমদ্বীপ, চরঘাসিয়া ও ঢালচর সহ নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নলচিরা ঘাটের বেড়ীর বাইরে অবস্থিত রাস্তার দুপাশে ছোট ছোট দোকানগুলো পানিতে ডুবে যায়। জোয়ারের তীব্র স্রোতে দোকান ভেসে যায়। নলচিরা ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জোয়ারের স্রোতে ও ঢেউয়ের আঘাতে শরিফ টি স্টোর, খালেকের চা দোকান সহ ঘাটের ৫-৬টি দোকান ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেলা ১১টার পর আসা জোয়ারের এসব ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘাট এলাকার প্রধান সড়কের ওপর তিনফুট উচ্চতায় পানি উঠে। জোয়ারের সাথে সাথে ঢেউয়ের তীব্রতা বেশি থাকায় ঘাটের এসব দোকান পাঠ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও অতিরিক্ত জোয়ারে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। রাতের জোয়ারে আরও বেশী প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার শাহেদ উদ্দিন জানান, দ্বীপের ১,২,৩ ও ৭,৮,৯ ওয়ার্ড সহ অধিকাংশ এলাকা অস্বাভাবিক জোয়ারে তলিয়ে যায়। মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে। অনেকের ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় রান্নাবান্না বন্ধ রয়েছে। নামার বাজার এলাকার ব্যবসায়ী জামসেদ উদ্দিন বলেন, নামার বাজারসহ আশপাশের সকল রিসোর্ট তলিয়ে গেছে। রাতে আরেকবার জোয়ার হবে। জোয়ারে সব তলিয়ে যাচ্ছে দেখে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
নিঝুমদ্বীপের বাসিন্দা তুহিন বলেন, বেড়িবাঁধ না থাকায় সহজেই জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হয় নিঝুমদ্বীপ। দিনে ও রাতে দুবেলায় জোয়ারে ইতোমধ্যে মোল্লা গ্রাম, বান্ধাখালী গ্রাম, পূর্ব মুন্সী গ্রাম, গুচ্ছগ্রাম, পূর্বাঞ্চল গ্রাম, মদিনা গ্রামসহ নিঝুমদ্বীপের সবগুলো গ্রামে পানি ঢুকেছে। এদিকে সকাল থেকে উপজেলার হরনী, চানন্দী, সুখচর, নলচিরা, চরঈশ্বর, তমরদ্দি, সোনাদিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ডের নিম্নাঞ্চলসহ চারপাশের নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এদিকে হাতিয়ার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। ত্রাণ পেলেই দুর্গতদের মাঝে দ্রুত পৌঁছে দেওয়া হবে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন