ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫ , ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​গাবুড়া বাজারে দিনে দেড় কোটি টাকার টমেটো বিক্রি

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৭-০৫-২০২৫ ১১:৪০:৩৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ২৭-০৫-২০২৫ ১১:৪২:১৭ পূর্বাহ্ন
​গাবুড়া বাজারে দিনে দেড় কোটি টাকার টমেটো বিক্রি সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
টমেটোর জন্য ব্যবসায়ীদের কাছে পরিচিত নাম দিনাজপুর সদর উপজেলার ৪ নম্বর শেখপুরা ইউনিয়নের গাবুড়া বাজার। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় বেচাকেনা। প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে ভ্যান, ট্রাক, পিকআপ আর মানুষে ঠাসাঠাসি থাকে বাজার। প্রতিদিন প্রায় দেড় কোটি টাকার টমেটো বেচাকেনা হয়। 

ব্যবসায়ী ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন সকাল ১০টার মধ্যে কেনাবেচা শেষ হয়। এরপর বিকাল পর্যন্ত চলে গাড়ি লোড করার কাজ। প্রতিটি ট্রাকে ৫৬০ ক্রেট পর্যন্ত লোড করা হয়। ট্রাকে করে টমেটো যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। প্রতি বছর মার্চ মাসের মাঝামাঝি শুরু হয়ে জুনের শেষ পর্যন্ত চলে বাজার। দেশের বিভিন্ন জেলার তিন শতাধিক পাইকারি ব্যবসায়ী আসেন। দৈনিক ৯০-১০০টি ট্রাকে করে বিভিন্ন জেলায় টমেটো যায়। তবে এবার দাম নিয়ে চাষিরা কিছুটা হতাশ। কারণ প্রতিদিন দাম ওঠানামা করছে। চাহিদা অনুযায়ী দাম বাড়ে-কমে। 

সরেজমিনে গাবুড়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গাবুড়ার নদীর ব্রিজ থেকে মাস্তান বাজার পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে বাজার বসে। বাজারের পাশে টিনের ছাউনি দিয়ে স্তূপ করে রাখা হয় টমেটো। বাছাই করে ক্রেটে (প্লাস্টিকের ঝুড়ি) ভরেন শ্রমিকরা। সেগুলো ট্রাকে করে পাঠানো হয় বিভিন্ন জেলায়।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন সকাল থেকে ৮০-৯০ ট্রাক টমেটো বেচাকেনা হয়। কোনও কোনও দিন ১০০ ট্রাকও বিক্রি হয়। যেদিন বাজারে বেশি আসে, সেদিন দাম কম থাকে। যেদিন কম থাকে, সেদিন দাম বেশি থাকে। এমনও হয়, কোনোদিন প্রতি মণ বিক্রি হয় ৩৫০-৫০০ টাকা। আবার কোনোদিন বিক্রি হয় তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। সব মিলিয়ে দিনে প্রায় দেড় কোটি টাকার বিক্রি হয়। চাষিরা বলছেন, এবার উৎপাদন খরচ বেশি হলেও গত বছরের তুলনায় দাম কম। প্রতিদিন বাজার ওঠানামা করায় ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

সদরের বোলতৈড় এলাকার চাষি জয় কর্মকার বলেন, ‘এবার মৌসুমের শুরুর দিকে ৩০০ টাকা মণও বিক্রি করেছি। তবে এখন দাম বেশি। এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা মণ চলছে। তবে একেকদিন একেক দাম। বোঝা যায় না কোন দিন দাম বেশি পাওয়া যাবে। এতে আমাদের লাভ হয় না। ব্যবসায়ীরা ঠিকই লাভ করছেন। হিমাগার থাকলে আমাদের জন্য ভালো হতো। সংরক্ষণ করে বিক্রি করা যেতো।’ 

গোপালগঞ্জ এলাকার চাষি মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘গত বছর ভালো দাম ছিল। এবারে প্রথম থেকে দাম কম। এখন দাম বেড়েছে। মজুত করে রাখারও উপায় নেই। যা দাম বলে তাতেই বিক্রি করতে হয়। কারণ রাখলে পচে যাবে। সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে কৃষকরা ন্যায্য দাম পেতেন। এজন্য হিমাগার খুব প্রয়োজন।’পাঁচ বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ করেছেন গাবুড়া বাজার এলাকার চাষি মুকুল ইসলাম। প্রতি বিঘায় এক লাখ করে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে জানিয়ে এই চাষি বলেন, ‘এখন বাজারে বেশি, কিন্তু জমিতে তেমন ফলন নেই। মৌসুমের শুরু থেকে দাম কম ছিল। এখনও খরচের টাকা উঠেনি। মনে হচ্ছে, লোকসান হবে।’ 

একই এলাকার চাষি সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর এই সময়ে দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা মণ বিক্রি করেছিলাম। এবার একই সময়ে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকায়। এখন যে দামে বিক্রি করছি, তাতে একটু লাভ হবে বলে আশা করছি। শুরু থেকে এই দাম থাকলে লাভ বেশি হতো।’ঢাকা থেকে গাবুড়া টমেটো বাজারে এসেছেন পাইকারি ব্যবসায়ী মো. মাসুম আলম। তিনি বলেন, ‘এসব টমেটো কিনে আমরা ঢাকার কাওরানবাজার, যাত্রাবাড়ী, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠাই। আগে দাম ৫০০-৬০০ টাকা থাকলেও এখন মণ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।’কাওরানবাজার থেকে টমেটো কিনতে আসা ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমরা যে দামে কিনছি সে দামে বিক্রি করতে পারছি না। কাওরানবাজারে চাহিদা কম। এবার তেমন লাভ নেই। আমাদের বেশি লাভ হয় চাষিদের এমন অভিযোগ সত্য নয়। যদি চাহিদা থাকে তাহলে দাম বাড়ে, চাহিদা কমলে দামও কমে।’আরেক ব্যবসায়ী আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে এখন থেকে টমেটো কিনে ঢাকায় পাঠাই। গত বছর ভালো লাভ হয়েছিল। এ বছর অল্প লাভ হচ্ছে। কারণ ঢাকায় বেচাকেনা খুব কম। দামও কম। যখন বেশি দামে কিনি তখন সেই দামে বিক্রি করতে পারি না। ফলে কোনও কোনও সময় চালান ধরে বিক্রি করতে হয়।’

গাবুড়া টমেটো বাজারের ইজারাদার কমিটির সদস্য গোলাম রব্বানী বলেন, ‘প্রতি বছর মার্চ মাসের মাঝামাঝি শুরু হয়ে জুনের শেষ পর্যন্ত চলে এই টমেটো বাজার। তবে এখন বাজারে আমদানি কম। এজন্য দাম বেশি। গত বছর পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত মণ বিক্রি হয়েছিল। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই দাম কম যাচ্ছে। কারণ ভোক্তাপর্যায়ে এবার দাম কম। তবু প্রতিদিন প্রায় দেড় কোটি টাকার বিক্রি হয়।’

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. আনিছুজ্জামান বলেন, ‘চলতি বছর জেলায় ৮৬৫ হেক্টর জমিতে নাবি জাতের টমেটো আবাদ হয়েছে। যেখান থেকে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ফলন হবে বলে আশা করা যায়। ফলন ভালো হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে কৃষকরা দাম নিয়ে কিছুটা হতাশ হলেও এখন বেড়েছে। টমেটোর নতুন জাত চাষ করতে বলা হচ্ছে কৃষকদের। যাতে আগামীতে আরও লাভবান হন। সংরক্ষণের জন্য হিমাগার ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপনের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। যদি পাস হয়, টমেটো নষ্ট হবে না, কৃষকরা ভালো দাম পাবেন।’

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ