যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবেন। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্তটি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন দেশটির একটি আদালত। এর ফলে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী এই উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে নতুন করে আশার আলো দেখেছেন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা।

রয়টার্স জানিয়েছে, হার্ভার্ড প্রশাসন ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে আবেদন করে। এর পরপরই আদালত ওই সিদ্ধান্ত সাময়িকভাবে স্থগিত করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৩ মে) একটি মার্কিন আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের একটি নীতিমালা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন। এই নীতিমালার ফলে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারত না। হার্ভার্ডের দাবি, এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৃহত্তর রাজনৈতিক কৌশলের অংশ, কারণ তারা ‘একাডেমিক স্বাধীনতা’ বিসর্জন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।

আদালতের এই আদেশে হাজার হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সাময়িক স্বস্তি পেয়েছেন। আদেশটি বলবৎ না থাকলে তাদের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর হতে হতো। হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিটিকে মার্কিন সংবিধান ও অন্যান্য ফেডারেল আইনের ‘প্রকাশ্য লঙ্ঘন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় আরও জানিয়েছে, এই নীতির ফলে ৭ হাজারের বেশি ভিসাধারী শিক্ষার্থীর ওপর ‘তাৎক্ষণিক ও ধ্বংসাত্মক প্রভাব’ পড়ত।

শুক্রবার বোস্টনের ফেডারেল আদালতে দায়ের করা মামলায় ৩৯৮ বছরের পুরোনো হার্ভার্ড বলেছে, “আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছাড়া হার্ভার্ড, হার্ভার্ড নয়।” বিশ্ববিদ্যালয়টি জানিয়েছে, বর্তমান শিক্ষাবর্ষে সেখানে প্রায় ৬ হাজার ৮০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী রয়েছেন, যা মোট শিক্ষার্থীর ২৭ শতাংশ।

এই পদক্ষেপটি হোয়াইট হাউস ও হার্ভার্ডের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান দ্বন্দ্বের সর্বশেষ সংযোজন। ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, আইন সংস্থা, সংবাদমাধ্যম, আদালত এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে চাপ দিচ্ছে। রিপাবলিকানরা দীর্ঘদিন ধরেই অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে বামপন্থী পক্ষপাতের অভিযোগ করে আসছে।

এর আগে হার্ভার্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। মামলার একদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (ডিএইচএস) জানায়, তারা হার্ভার্ডের শিক্ষার্থী ভিসা কর্মসূচির অনুমোদন বাতিল করছে, যার আওতায় বিদেশি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে পারেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের আরও অভিযোগ, হার্ভার্ড ইহুদিবিরোধিতার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি এবং তাদের নিয়োগ ও ভর্তি প্রক্রিয়ায় সংস্কার আনেনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

হার্ভার্ড আদালতে বলেছে, “কলমের এক খোঁচায় সরকার আমাদের শিক্ষার্থীদের এক-চতুর্থাংশকে বাদ দিতে চেয়েছে। অথচ এই শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ও কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।”

বিশ্ববিদ্যালয় আদালতের কাছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সিদ্ধান্তটি স্থগিত করার আবেদন জানিয়েছে। কারণ, এর ফলে হার্ভার্ডের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রামের সার্টিফিকেশন বাতিল হয়ে যায়।

হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার এক চিঠিতে বলেন, “আমরা এই বেআইনি ও অযৌক্তিক পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সরকার বারবার পদক্ষেপ নিয়ে হার্ভার্ডকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছে, কারণ আমরা আমাদের একাডেমিক স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে রাজি হইনি।”

ট্রাম্প প্রশাসন শুধু হার্ভার্ড নয়, অন্যান্য শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও টার্গেট করেছে। তারা দাবি করেছে, এসব প্রতিষ্ঠানকে ফিলিস্তিনপন্থী কর্মীদের দমন করতে হবে এবং রক্ষণশীল মতামতের প্রতি বৈষম্য দূর করতে হবে। ইতোমধ্যে তারা ডজনখানেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে এবং নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির মতো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কিছু ছাড় আদায় করে নিয়েছে।

চলতি বছরের এপ্রিলে হোয়াইট হাউস হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দ ২.২ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল অর্থায়ন স্থগিত করে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্ববিদ্যালয়টির করছাড় সুবিধা বাতিলেরও হুমকি দেন। এই অর্থায়ন স্থগিতের প্রতিবাদে হার্ভার্ড আগেও মামলা করেছিল।

উল্লেখ্য, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের কেমব্রিজ শহরে অবস্থিত। এটি দেশটির প্রাচীনতম ও অন্যতম খ্যাতনামা উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

বাংলা স্কুপ/ডেস্ক/এসকে