ঢাকা , বুধবার, ১৪ মে ২০২৫ , ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​দুগ্ধ খামারে সফল শিক্ষিত যুবক মাহমুদুল

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১৩-০৫-২০২৫ ০৩:২৮:৪৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৩-০৫-২০২৫ ০৩:৪৬:২৫ অপরাহ্ন
​দুগ্ধ খামারে সফল শিক্ষিত যুবক মাহমুদুল সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
৩৫ বছরের যুবক মাহমুদুল হাসান। বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ফরিদাবাদ ডাক্তারপাড়া গ্রামে। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে চাকরির পেছনে না ছুটে গড়ে তুলেছেন স্বপ্নের খামার। ভাগ্য পরিবর্তন করে স্থাপন করেছেন সাফল্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এই বয়সেই মাহমুদুল এলাকার সফল দুগ্ধ খামারি হিসেবে পরিচিত। তাঁর খামার থেকে প্রতিদিন সংগ্রহ করা হচ্ছে শতাধিক লিটার দুধ, যা স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠানেও।

শিক্ষিত এই তরুণের সাফল্য এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। একইসঙ্গে দুগ্ধ খামারের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করেছে আশেপাশের বেকার যুবকদেরও। দুধ উৎপাদনের লক্ষ্যে ১১ বছর আগে বাড়ির উঠোনে 'মাহমুদুল ডেইরি ফার্ম' প্রতিষ্ঠা করেন। পাশপাশি মাংস উৎপাদনের জন্য গরু মোটাতাজাকরণও শুরু করেন মাহমুদুল।

সেই থেকে এখন পর্যন্ত ষাঁড়সহ মোট ৭৫টি গরু বিক্রি করেছেন। বর্তমানে মাহমুদুলের খামারে ২০টি গরু রয়েছে, যার মধ্যে নিয়মিত দুধ দিচ্ছে ১০টি। খামার থেকে প্রতিদিন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লিটার দুধ সংগ্রহ করছেন তিনি। এরপর নিজেই বিক্রির জন্য নিয়ে যান, গ্রাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের ব্র্যাক আড়ং ডেইরি চিলিং সেন্টার ও ডেইরি মিল্ক ক্রয় কেন্দ্রে। আসন্ন ঈদ-উল-আযহায় খামারের ৪০০ কেজি থেকে ৭০০ কেজি ওজনের চারটি ষাঁড় ১৬-১৮ লখি টাকায় বিক্রি করার আশা করছেন মাহমুদুল। স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি, আরো চারজনকে মাসিক দশ হাজার টাকায় চাকরি দিয়েছেন। এদের মধ্যে দুজন স্থায়ীভাবে কাজ করেন।

মাহমুদুল জানান, ২০০৮ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর, চাকরি পাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি।  কিন্তু তাতে ব্যর্থ হই। তিনি আরো বলেন "তারপর আমি একটি ডেইরি ফার্ম স্থাপনের পরিকল্পনা করি এবং এই উদ্যোগ শুরু করার জন্য বাবার সঙ্গে পরামর্শ করি"। মাহমুদুলের পরিকল্পনায় খুশি হয়ে, তার বাবা মোজাহারুল ইসলাম মূলধন হিসেবে দেড় লাখ টাকা দিয়েছিলেন। এই টাকায় ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুটি বিদেশী দুগ্ধজাত গাভী কিনেছিলেন তিনি। কয়েক মাস পর, দুটি গাভীই একটি করে বাছুর জন্ম দেয় এবং প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ লিটার করে দুধ দেওয়া শুরু করে।"আমি দুটি গাভী থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ২২ থেকে ২৪ লিটার দুধ পাচ্ছিলাম, এতে ভালোই লাভ হচ্ছিল। পরে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য বাবা আরেকটি গাভী কিনে েিদন," মাহমুদুল যোগ করেন।

খামার বিষয়ে নানা পরামর্শের জন্য ২০১৫ সালে প্রথম তারাগঞ্জ উপজেলা যুব উন্নয়ন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেন মাহমুদুল। পরের বছর, 'দুগ্ধ খামার এবং গরু মোটাতাজাকরণ' বিষয়ে তিন মাসের প্রশিক্ষণ নেন। সেসময় তৎকালীন উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে ১ লাখ টাকাও পান। ঋণের সেই টাকায় মাহমুদুল আরেকটি গাভী কেনেন। এভাবেই তার গরুর সংখ্যা বেড়ে আটটিতে পৌঁছায়।  পরে খামারের গোবর দিয়ে একটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্টও তৈরি করেন। এটি দিয়ে পরিবার এবং দুগ্ধ খামারের বিদ্যুতের চাহিদা মেটে। ফলে বিদ্যুতের খরচ সাশ্রয় হয়। 

মাহমুদুল তার গরুর জন্য ৬০ শতাংশ জমিতে নেপিয়ার এবং পাকচুং জাতের পুষ্টিকর ঘাস চাষ করেছেন। তিনি জানান "আমার ফার্মটিকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এবং একত্রে ৫০টি গরু রাখার ক্ষমতাসম্পন্ন বড়  প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে চাই। এজন্য ২ হাজার ৪৬ বর্গফুটের একটি বিশাল টিন-শেডও তৈরি করেছি"। কোভিড-১৯ মহামারীর সময়, তার গরুর সংখ্যা ছিলো ৩২টি। তখন তিনি প্রতিদিন ১০০ লিটার দুধ সংগ্রহ করতেন। তবে, সে সময় দুধ বিক্রির পরিমাণ কম থাকায় বিপুল লোকসানের মুখে পড়েন।"তবে, আমার দুগ্ধ খামার বর্তমানে পুরোপুরি লাভে চলছে। কারণ আমি আগে বিনিয়োগ করা ১৫ লাখ টাকা ইতিমধ্যেই ফেরত পেয়েছি," মাহমুদুল বলেন। "ছয় বছর আগে যে দামে খামারিররা দুধ বিক্রি করতো, এখনও সেই দরেই করছেন। যদিও এই সময়ের মধ্যে পশুখাদ্যের দাম তিনগুণ বেড়ে গেছে," তিনি বলেন। তাই দুগ্ধখাতের সম্প্রসারণে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান এই সফল উদ্যোক্তা।

তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ কে এম ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় যুবকরাও এখন চাকরির পেছনে না ছুটে দুগ্ধ খামার স্থাপনে উদ্যোক্তা মাহমুদুলের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ