কমেছে অর্থপাচার-হুণ্ডি, বেড়েছে বৈধ পথে রেমিটেন্স
আপলোড সময় :
১১-১০-২০২৪ ০৯:১৮:২৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১২-১০-২০২৪ ০৯:৪৭:২৪ অপরাহ্ন
দেশ যখন বেসরকারি খাতের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি, সার এবং পণ্য ইত্যাদি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পড়েছিল, ঠিক তখনই রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে গেছে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ ৪.৬৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৮ শতাংশ বেশি। রেমিটেন্সের এ উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির পেছনে মূলত দুটি কারণ কাজ করছে। প্রথমত, আমদানি বিলের আন্ডার-ইনভয়েসিং উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। আগে এ প্রক্রিয়ায় বড় অঙ্কের অর্থ সরিয়ে নেওয়া হলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, হুন্ডির মতো অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমে মানি লন্ডারিং তথা অর্থপাচার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, মূলত আমাদের দেশে আসা রেমিট্যান্স ইনফরমাল চ্যানেল থেকে ফরমাল চ্যানেলে ডাইভার্ট হওয়ায় এই প্রবৃদ্ধি এসেছে। এর একটা কারণ হতে পারে, দেশ থেকে টাকা পাচার হওয়া অনেকটাই কমে এসেছে। টাকা পাচার কেন কমেছে জানতে চাইলে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, যারা অর্থ পাচারকারী ছিল, অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেরাই পাচার হয়ে গেছে অথবা আত্মগোপনে চলে গিয়েছে। ফলে টাকা পাচার কমেছে। তবে, নতুন কোনো পাচারকারী গ্রুপ যেন এই জায়গাটি নিতে না পারে সেজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ভালো অবস্থানে যেতে ফরমাল ও ইনফরমাল চ্যানেলের ডলারের দামের পার্থক্য বাড়তে দেওয়া যাবে না মন্তব্য করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ডলারের দাম নয়মনীয় থাকা উচিৎ। অনেক মাল্টিলেটরল অর্গানাইজেশন থেকে আমরা ডলার সাপোর্ট পাচ্ছি। এছাড়া, গত কিছুদিন ধরে ডলারের দামে একটা স্থিতিশীলতা এসেছে। তাই, আমাদের জন্য বাজারভিত্তিক ডলার রেটে যাওয়ার এখনই সুযোগ। আমদানি বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, একটি অর্থনীতিতে ব্যাঘাত ঘটলে সবার মধ্যেই আতঙ্ক কাজ করে। দেশের আর্থিক খাতের অনেক জায়গাতেই আন্দোলনসহ নানান সমস্যা হচ্ছে। দেশে আইন শৃঙ্খলার এ যে সমস্যা চলছে, সেটি ঠিক হয়ে গেলে বিনিয়োগ বাড়বে।
ব্যবসায়ী, ব্যাংকার এবং অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কার্যকলাপ ধীর হয়ে গেছে এবং মানি লন্ডারিং বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অনানুষ্ঠানিক হুন্ডি বাজারে ডলারের চাহিদা কমেছে এবং সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে ডলার আসতে শুরু করেছে। ব্যাংকার এবং বিদেশি রেমিট্যান্স ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা হুন্ডির চাহিদা হ্রাসের ক্ষেত্রে আরেকটি সহায়ক কারণ হিসাবে মানি লন্ডারিং হ্রাসকে উল্লেখ করেছেন। একটি প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কান্ট্রি হেড বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর 'বিদেশে অর্থপাচারে' জড়িত থাকা অনেক রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। মানি লন্ডারিং কমে যাওয়ায়, হুন্ডি ডলারের চাহিদা ৬০-৭০ শতাংশ কমে গেছে বলে বিদেশে থাকা ব্রাঞ্চগুলো থেকে আমরা জেনেছি। আগে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো ডলার এখন আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে আসতে শুরু করেছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগের অভাবের কারণে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলা এবং নিষ্পত্তি প্রায় ১৩ শতাংশ কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাই-আগস্টের মধ্যে ১০.০৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের এলসি খোলা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার হ্রাস পেয়েছে।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের একজন সিনিয়র ট্রেজারি কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর তদারকি, বিশেষ করে এলসি খোলার ওপর নজরদারি এবং আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য নির্ধারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকের নজরদারি হুন্ডি বাজারের চাহিদা হ্রাসে অবদান রেখেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকারেরা আরও সতর্ক হয়ে উঠেছেন — তারা আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করছেন।
একটি মানি এক্সচেঞ্জের প্রধান বলেন, গত দুই সপ্তাহে ডলারের দাম বৃদ্ধি আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের মধ্যে দামের ব্যবধানকে সংকুচিত করেছে, ফলে রেমিট্যান্স বেড়েছে। এখন বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে সরকার ঘোষিত ২.৫ শতাংশ প্রণোদনাসহ ১২৫-১২৫.৫০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। অবৈধ হুন্ডি চ্যানেলে ডলার পাঠালে ১২৬-১২৭ টাকা পর্যন্ত মিলছে। অর্থাৎ দুটি চ্যানেলের মধ্যে দামের পার্থক্য, যা রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির একটি উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল, এখন মাত্র ১-২ টাকা। তিনি বলেন, ২০২২ ও ২০২৩ সালে এ পার্থক্য অনেক বেশি ছিল, অনেকসময় সেটি ৭-৮ টাকা হয়ে গিয়েছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে বেশ কয়েকটি দেশ থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ আশাতীতভাবে বেড়ে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৮৮ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আগের বছরের একই মাসের তুলনায় দেশটি থেকে রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে প্রায় ১৭৫ শতাংশ। এছাড়া, গত বছরের একই মাসের তুলনায় দেশে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৪১ শতাংশ বেড়ে ৩৬২ মিলিয়ন ডলার, সৌদি আরব থেকে ৬০ শতাংশ বেড়ে ৩৪৫ মিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়া থেকে ২৭৫ শতাংশ বেড়ে ২৩৭ মিলিয়ন ডলার এবং যুক্তরাজ্য থেকে ৩৯ শতাংশ বেড়ে ২০৬ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।
ওভারডিউ পেমেন্টের চাপে গত দুই সপ্তাহে ডলারের দাম ২ টাকা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। দেশের আর্থিক ভাবমূর্তি উন্নত করার জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো বিভিন্ন দেশ এবং প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া ডলারের অর্থ পরিশোধ করতে শুরু করেছে। তারা ক্রমবর্ধমান ডলার চাহিদা মেটাতে রেমিট্যান্স ডলার সংগ্রহ করতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। প্রতিযোগিতায় টিকতে বেসরকারি ব্যাংকগুলোও এর সঙ্গে যুক্ত হয়। তবে রেমিট্যান্স সংগ্রহের এ প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশ দিয়েছে ডলার কেনাবেচায় সর্বোচ্চ ১২০ টাকা রেট অফার করতে পারবে ব্যাংকগুলো। বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর মধ্যে অন্যতম বড় মানিগ্রাম ৬ অক্টোবর ১২৪.০৬ টাকায় ডলারের দাম অফার করছিল। অন্যদিকে ট্যাপট্যাপ সেন্ড ১২০.৫০ টাকা অফার করেছিল। এর বাইরেও কিছু ছোট-বড় এক্সচেঞ্জ হাউজ আছে, যেগুলো বেশি রেট দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। দুই সপ্তাহ আগেও এসব এক্সচেঞ্জ হাউজ সর্বোচ্চ ১২০-১২১ টাকায় রেমিট্যান্সের ডলার কিনত।
বেশি রেমিট্যান্স নিয়ে আসা এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর মধ্যে অন্যতম ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ২ অক্টোবর রেমিটরদের ১২১.১৮ টাকা দাম অফার করেছিল। প্রতিযোগিতায় টিকতে মাত্র ৫ দিনের ব্যবধানে রেমিট্যান্সের ডলার রেট ১ টাকার বেশি বাড়িয়ে ১২২.২১ টাকা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৩ অক্টোবর এক বৈঠকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলির ট্রেজারি প্রধানদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল রেমিট্যান্স ডলারের রেট ১২২ টাকার বেশি না করার জন্য। একইসঙ্গে পর্যায়ক্রমে সেটিকে ১২০ টাকায় নামিয়ে আনার জন্যও বলা হয়েছে। সব ওভারডিউ পেমেন্ট নিষ্পত্তি হয়ে গেলে ডলারের দামও কমবে বলে আশা করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ কর্মকর্তাও।
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ডলারের বাজার স্থিতিশীল করতে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ আগস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তারল্য বাড়ানোর জন্য আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের জন্য অনুমোদিত ব্যান্ডকে ১শতাংশ থেকে ২.৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রসারিত করা হয়। বর্তমান ক্রলিং পেগ ব্যবস্থার অধীনে ডলারের মধ্যবর্তী দর ১১৭ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকগুলো এখন ২.৫ শতাংশ যোগ করে ডলারের রেট ১২০ টাকা পর্যন্ত বাড়াতে পারে। এই সমন্বয়ের ফলে ব্যাংকগুলো কিছুটা উচ্চ রেট অফার করার সুযোগ পায়। পরদিন এক সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের ওভারডিউ বিদেশি দায় নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে এসব পেমেন্টের জন্য বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে আন্তঃব্যাংকে ডলার বিক্রি করতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। ব্যাংকগুলোর বেশি রেট দেওয়া বন্ধ করতে ২৯ আগস্ট ৪৭টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানরা ক্রয়-বিক্রয় উভয় ক্ষেত্রেই ডলারের বিনিময় হার ১২০ টাকা নির্ধারণে সম্মত হন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বেশি রেট অফার করা অব্যাহত রাখায় ধীরে ধীরে বেসরকারি ব্যাংকগুলোও একই কাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে অধিকাংশ ব্যাংকই ডলারের রেট বেশি অফার করা শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় রেমিট্যান্সের ডলারের রেট সর্বোচ্চ ১২২ টাকায় পৌঁছায়। বাংলাদেশ ব্যাংক এর আগে ৮ মে ক্রলিং পেগ সিস্টেম চালু করেছিল। যার ফলে একক দিনে টাকার সবচেয়ে বড় অবমূল্যায়ন হয় এবং ডলারের দাম ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১১৭ টাকায় ওঠে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমদানিতে আন্ডার-ইনভয়েসিং সাধারণত হুন্ডির চাহিদা বাড়ায়, কিন্তু সম্প্রতি আমদানি কমে যাওয়ায় হুন্ডির চাহিদা কমে গেছে এবং ডলার আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে আসতে শুরু করেছে। সৈয়দ মাহবুব আরও বলেন, আগস্টের শাসন পটভূমি পরিবর্তনের পর থেকে প্রবাসীরা দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেও রেমিট্যান্স পাঠাতে আনুষ্ঠানিক চ্যানেল বেছে নিচ্ছেন। এমটিবি সিইও সৈয়দ মাহবুব বলেন, মানি লন্ডারিং ব্যাপকভাবে কমে গেছে, যা হুন্ডির চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে। আমরা অতীতে কোভিডের সময়েও হুন্ডি বন্ধ থাকায় আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ার ঘটনা দেখেছি।
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মারুফ বলেন, ডলারের হার রেমিট্যান্স প্রবণতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে। সেপ্টেম্বরের রেমিট্যান্স পরিসংখ্যানের সঙ্গে গত দুই বছরে বিদেশে যাওয়া শ্রমিকদের উচ্চ সংখ্যার সঙ্গে মিল রয়েছে। তিনি বলেন, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে রেমিট্যান্স কম আসার পেছনের অন্যতম কারণই ছিল ডলারের রেট কম দেওয়া। কারণ, ২০২৩ সালেই খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয়েছিল সর্বোচ্চ ১২৫ টাকা রেটে। এছাড়া, একটা দেশে সরকারের ভালো পরিবর্তন আসলে তখন রেমিটাররা বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী হন উল্লেখ করে মারুফ বলেন এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে সামনের দিনগুলোতে রেমিট্যান্সের ইতিবাচক প্রবাহ রাখা সম্ভব হবে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের বাজার-ভিত্তিক বিনিময় হার গ্রহণের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে বলেন, এমন হলে সরকারের পক্ষ থেকে আলাদা করে প্রণোদনা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাও কমে আসতে পারে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ডলারের দর ১২০ টাকায় রাখার চেষ্টা করছেন। যদি এ হার আরও বেড়ে যায়, তাহলে তার প্রচেষ্টা পুরোপুরি সফল হয়েছে তা বলা যাবে না। তবুও এই অধ্যাপক মনে করেন, ডলারের বাজারে অস্থিরতা কমানোর ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তবে, বাজার পুরোপুরি স্থিতিশীল না হলে মূল্যস্ফীতিকে আশানুরূপ কমানো সম্ভব হবে না। একবার দেশের রিজার্ভের ওপর চাপ কমলে বিনিময় হারের চাপও কমবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সরকারি ও অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের মধ্যে ডলারের দামের পার্থক্য সম্পর্কে মইনুল বলেন, হুন্ডির মাধ্যমে অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে এটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনতে পারে। এগুলো একটার সঙ্গে আরেকটার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, আমদানিনির্ভর দেশে ডলারের ঊর্ধ্বগতি স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি বাড়ায়। এমনকি একটি সংকোচনমূলক আর্থিক নীতি বজায় থাকলেও, ডলারের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতি কমানোর প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
বাংলা স্কুপ/বিশেষ প্রতিবেদক/এএইচ/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স