বর্তমান বিশ্ব নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো বিকল্প হতে পারে সিন্থেটিক ফুয়েল বা ই-জ্বালানি। কেননা, সম্প্রতি ই-জ্বালানিতে বৈপ্লবিক সাফল্য এসেছে। তাই এ নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। তবে বর্তমানে শুধু চিলির এক পাইলট প্ল্যান্টেই এই জ্বালানি উৎপাদন করা হচ্ছে। যেখানে গাড়ি নির্মাতা পোর্শে আপাতত এই জ্বালানির মূল ক্রেতা।
চিলির মাগেইয়ানিসে অবস্থিত হারু ওনি পাইলট প্ল্যান্টে ই-ফুয়েল উৎপাদিত হচ্ছে। ২০২২ সাল থেকে এটি চালু রয়েছে এবং প্রতিবছর এক লাখ ৩০ হাজার টন জ্বালানি উৎপাদন করছে। পোর্শে, আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থা ও জার্মান সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত প্ল্যান্টটি যদি সফল হয়, তাহলে এটি বছরে ৫৫০ মিলিয়ন টন পর্যন্ত জ্বালানি উৎপাদন করতে পারবে।প্ল্যান্ট পরিচালনা করা কোম্পানি ‘এইচআইএফ গ্লোবাল’ এর চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার খুয়ান-খস গানা এরাসুরিস বলেন, ‘আমরা দেখেছি যে, ইলেক্ট্রোফুয়েল বা ই-ফুয়েল একটি দারুণ বিকল্প, কারণ, এখানে বিদ্যুৎ খুবই সস্তা। এবং এই জ্বালানি উৎপাদনে যে খরচ হয় তার একটি বড় অংশ হয় বিদ্যুতের জন্য।’
নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে হাইড্রোজেন উৎপাদন করা হয়। এক্ষেত্রে মূলত বায়ুশক্তি ও পানি ব্যবহার করা হয়। আর কার্বন ডাই অক্সাইড যোগ করা হলে তখন মিথানল সংশ্লেষণের মাধ্যমে ই-ফুয়েল তৈরি করা হয়।আপাতত আর্জেন্টিনার একটি ব্রুয়ারি থেকে পাওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করা হচ্ছে। এইচআইএফ গ্লোবাল ভবিষ্যতে বায়ুমণ্ডল থেকে সরাসরি কার্বন ডাই-অক্সাইড সংগ্রহ করে ভূগর্ভে সংরক্ষণের পরিকল্পনা করছে। সে কারণে এখন একটি অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। এর জন্য আরও শক্তির প্রয়োজন হবে, তবে আরও পরিবেশবান্ধব হতে হবে।ল্যাব টেকনিশিয়ানরা পাইলট প্ল্যান্টে উৎপাদিত জ্বালানি পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করেন, এবং বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য তার গঠন পরিবর্তন করেন।
কিন্তু চ্যালেঞ্জ হচ্ছে: সিন্থেটিক ফুয়েল উৎপাদন এখনও অনেক ব্যয়বহুল৷ এছাড়া, এটি চিলি থেকে ইউরোপে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে ট্যাঙ্কার ট্রাক ও জাহাজের প্রয়োজন, সেগুলো এখনো প্রচলিত পেট্রোল ও সামুদ্রিক ডিজেলে চলে। ফলে পুরো বিষয়টি এখনো টেকসই নয়। ই-ফুয়েল পোর্শের প্রোজেক্ট ম্যানেজার ফাবিয়ান এরাট বলেন, ‘একটি আদর্শ বিশ্বে এক লিটার ই-জ্বালানি, জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় প্রায় শতভাগ কার্বন ডাই-অক্সাইড মুক্ত হতে হবে। কিন্তু অবকাঠামো নির্মাণ ও জাহাজ দিয়ে জ্বালানি পরিবহনের বিষয়গুলি থাকায় শতভাগ কার্বন ডাই-অক্সাইড মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।’
ইতিমধ্যে ইইউতে ২০৩০ সালের মধ্যে সিন্থেটিক জ্বালানির ব্যবহার অন্তত ৫.৭ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- এবং সেটি শুধু গাড়ির জন্য নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও। খুয়ান-খস গানা এরাসুরিস বলেন, ‘২০৩০ সালে কার্যকর হতে যাওয়া ইউরোপীয় নীতিমালার কারণে জাহাজ ও বিমান শিল্পসহ পরিবহন খাতের জন্য কার্বন কম নির্গত হয়, এমন জ্বালানির প্রয়োজন হবে। পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলে এমন নির্গমন রোধ করতে আমরা এই চাহিদা পূরণের দিকে মনোনিবেশ করছি।’ আপাতত পোর্শে ও অন্যান্য গাড়ি নির্মাতারা সম্ভবত ই-ফুয়েলের একমাত্র গ্রাহক হয়ে থাকবে। তবে কার্বনমুক্ত ভবিষ্যৎ নির্মাণের যাত্রা শুরু হয়েছে।
বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন