ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫ , ২২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেদেনা লিচুর জিআই স্বীকৃতি: রফতানির উদ্যোগ চান কৃষকরা

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০৫-০৫-২০২৫ ০২:২৫:২৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৫-০৫-২০২৫ ০২:৩৪:২১ অপরাহ্ন
বেদেনা লিচুর জিআই স্বীকৃতি: রফতানির উদ্যোগ চান কৃষকরা সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
লিচুর নাম উঠলেই সবার আগে দিনাজপুরের কথা মনে পড়ে। এই জেলার বেদেনা জাতের লিচুকে বলা হয় ‘লিচুর রাজা’। স্বাদ, গন্ধ, রস এবং মিষ্টতায় অনন্য এই লিচু এবার পেয়েছে ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি। গত ৩০ এপ্রিল দিনাজপুরের বেদেনা লিচু জিআই পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।দীর্ঘদিনের এই স্বীকৃতি পাওয়ায় আনন্দিত কৃষক ও বাগান মালিকরা। তবে তারা শুধু স্বীকৃতি নয়, লিচু বিদেশে রফতানির উদ্যোগ দেখতে চান। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বিদেশে রফতানিযোগ্য লিচু উৎপাদনে কাজ চলছে।

দিনাজপুর সদর উপজেলার মাসিমপুর ও বিরল উপজেলার মাধববাটি এলাকাকে বেদেনা লিচুর প্রধান উৎপাদন এলাকা হিসেবে ধরা হয়। এই অঞ্চলের উর্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়া লিচু উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।সরেজমিনে মাসিমপুর এলাকায় দেখা গেছে, গাছের পাতার ফাঁকে থোকা থোকা লিচু ঝুলছে, যেগুলোতে লালচে রঙ ধরতে শুরু করেছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই লিচু পরিপক্ক হয়ে বাজারজাত শুরু হবে। মাঠপর্যায়ে এখন চলছে পরিচর্যা, পানি সেচ ও কীটনাশক স্প্রে।বাগান মালিক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘বেদেনা লিচু স্বীকৃতি পেয়েছে—এটা আমাদের জন্য গর্বের। এতে বিদেশি আগ্রহ বাড়বে, দেশের সুনাম হবে, কৃষকেরাও লাভবান হবে। তবে শুধু স্বীকৃতিতে সীমাবদ্ধ না থেকে রফতানির সুযোগ তৈরি করতে হবে।’মুক্তিযোদ্ধা ও লিচু চাষি আকবর আলী বলেন, ‘স্বীকৃতি পাওয়াটা অনেক বড় অর্জন। লিচু রফতানি শুরু হলে দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে। কৃষি কর্মকর্তারা আরও সহযোগিতা করলে মানসম্মত উৎপাদন বাড়বে।’

বাগান মালিক মোকসেদুল হক বলেন, ‘এখানে প্রতি পিস লিচু সাত থেকে আট টাকায় বিক্রি হয়, ঢাকায় একটু বেশি। বিদেশে রফতানি হলে এখান থেকেই ১১ থেকে ১২ টাকা দামে বিক্রি করতে পারবো। এতে আমরা লাভবান হবো, দেশের অর্থনীতিও উপকৃত হবে। বাজারে লিচুর সরবরাহ বেশি হলে দাম পড়ে যায়, রফতানি হলে সে সমস্যা থাকবে না। হিমাগার নির্মাণ হলে আরও সুবিধা হবে।’উলিপুর এলাকার কৃষক আলমাস ইসলাম বলেন, ‘জিআই স্বীকৃতি আমাদের জন্য বড় অর্জন। যদি এই লিচু আন্তর্জাতিক মানে প্রক্রিয়াজাত করে রফতানি করা যায়, তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে। দেশের ডলার সংকট মোকাবিলায় কৃষকরাও ভূমিকা রাখতে পারবে। তবে কৃষকের মাধ্যমেই রফতানি হওয়া উচিত, যেন মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান না হয়।’ তিনি জানান, আগামী ২৫ মে থেকে লিচু ওঠানো শুরু হবে।মামুনুর রশিদ নামে আরেকজন বলেন, ‘বেদেনা লিচুর ফলন এবার ভালো হয়েছে। রফতানির উদ্যোগ নিলে আমরা আরও ভালো দাম পাবো। দেশে যে পরিমাণ উৎপাদন হয়, তা বিদেশে গেলে চাহিদা ও দাম দুটোই বাড়বে।’

দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ কৃষিবিদ ইমরুল আহসান বলেন, ‘বেদেনা লিচু জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় দিনাজপুরের কৃষকদের অভিনন্দন। এই পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে মান বজায় রেখে রফতানি করতে হবে। কৃষি বিভাগের পার্টনার প্রকল্পের মাধ্যমে গ্যাপ প্রটোকল মেনে, কীটনাশকের ব্যবহার সীমিত রেখে এবং স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে রফতানিযোগ্য লিচু উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই, দিনাজপুরের এই বিশেষ পণ্য সারা বিশ্বে পরিচিত হোক। এর মাধ্যমে কৃষক, বাগান মালিক এবং দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভব। চীন ও ভারতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করেই রফতানি করতে হবে।’ সব মিলিয়ে, বেদেনা লিচুর জিআই স্বীকৃতি দিনাজপুরবাসীর জন্য গর্বের। এখন দরকার কার্যকর রফতানি উদ্যোগ ও কৃষকদের প্রণোদনা— যা দিনাজপুরকে বিশ্ব বাজারে লিচুর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম করে তুলবে।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
 
 
 
 
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ