কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে এখন সোনালী ধানের মোহনীয় রঙ্গ আর মৌ মৌ ঘ্রাণে মাতোয়ারা। প্রচণ্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে দিনরাত ব্যস্তসময় পার করছে অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইনের কৃষকরা। এক ফসলি কিশোরগঞ্জ হাওরাঞ্চলে এবার ৬৭ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ধানে রোগ-বালাই কম ও অনুকূল পরিবেশে বাম্পার ফলনে খুশি হলেও দাম নিয়ে অসন্তোষ কৃষক।তিন হাওর উপজেলায় স্বপ্নের সোনার ফসল ঘরে তুলতে কৃষক, কৃষি শ্রমিক ও হার্ভেস্টারে চলছে বিরামহীন ধান কাটা ও মাড়াই। বৃষ্টি না থাকায় রোদে দ্রুত ধান শুকিয়ে গোলায় তুলে খুশি তারা। এতে কৃষক পরিবারে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, দেশের অন্যতম খাদ্যভান্ডার খ্যাত কিশোরগঞ্জের একফসলি তিন উপজেলা অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইনের ২৪টি ইউনিয়নে এবার ৬৭ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে উফসী, হাইব্রিড ও দেশীয় জাতের বোরোধান আবাদ করা হয়েছে।
হাইব্রিডসহ উফসী জাতের ব্রি ধান-৮৮, ব্রি ধান-৮৯, ব্রি ধান-৯২, ব্রি ধান-৯৬, বিনা-২৫ এবং দেশীয় জাতের রাতাবোরো, টেপিবোরো ধান, অনুকূল পরিবেশ ও রোগবালাই কম থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। হেক্টর প্রতি উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ থেকে সাড়ে ৮ টন।
তবে ব্যাপক ফলনে কৃষকের মুখে হাসি থাকলেও শঙ্কিত ধানের দাম নিয়ে। কৃষকরা জানান, চড়াদামে কৃষি উপকরণ, সার, বীজ ও কিটনাশক ব্যবহার করে উপযুক্ত দাম মিলছেনা ধানের। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। বোরো আবাদের উৎপাদন ব্যয় মিটিয়ে কৃষকের হাত এখন শূন্য। ধান কর্তনের শ্রমিক মজুরি দিতে ভিজা (ধান কেটে রোদ ছাড়া) সাড়ে ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা দরে ধান বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচের চেয়ে কমদামে ধান বিক্রি করে লোকসান হবে বলে মনে করেন প্রান্তিক কৃষকরা।
তারা জানান, কৃষকের উৎপাদিত বোরোধান উপযুক্ত দাম না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা। ফলে ব্যাহত হতে পারে দেশের খাদ্য উৎপাদন। তাই ধানের মূল্য বৃদ্ধি ও প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে সরকার সরাসরি ধান ক্রয় করুক, এমন দাবি হাওরাঞ্চলের কৃষকদের।
অষ্টগ্রাম উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ২৪ হাজার ১২০ হেক্টর। ইটনার ৯টি ইউনিয়নে ২৭ হাজার ৩৪০ হেক্টর ও মিঠামইনে ১৫ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে বোরোধান আবাদ করা হয়েছে।অষ্টগ্রামের কলমা ইউনিয়নের কৃষক হরিচরণ দাস বলেন, এবার বেশি দামে সার বীজ ও কীটনাশক কিনে ধান ফলিয়েও উচ্চ দাম মিলছে না। ধান ফলাতে যে খরচ হয়েছে তারচেয়ে কম দামে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। ভালো ফলনেও আমাদের লাভ নেই।
মিঠামইন উপজেলার কেওয়াজোড় ইউনিয়নের হানিফ মিয়া বলেন, কৃষক দেশের প্রাণ এ কথা শুধু মুখে মুখে। কৃষকের হাতে পণ্য থাকলে দাম নেই। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কিনে চড়াদামে লাভ করে। আমরা থাকি লোকসানে। উচিত দাম ও সরাসরি গুদামে ধান বিক্রি করতে চাই। অষ্টগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অভিজিৎ সরকার বলেন, হাওরে ইতোমধ্যে সিংহভাগ ধান কর্তন হয়েছে। অনুকূলে পরিবেশের কারণে বাম্পার ফলন হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত দাম পেলে লাভবান হবেন তারা। বোরোধান কর্তনে আমাদের এবার সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন