গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় শহর-গ্রাম সবখানেই সমান গুরুত্ব
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
২৪-০৪-২০২৫ ০৩:৫১:০৬ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২৪-০৪-২০২৫ ০৩:৫১:০৬ অপরাহ্ন
গ্রাফিক্স : বাংলা স্কুপ
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহের আগেই বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এবার শহর ও গ্রামে সমানভাবে লোডশেডিং ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন, যা পূর্বের ‘ঢাকাকেন্দ্রিক অগ্রাধিকার’-এর নীতির পরিবর্তন। বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, নিরবচ্ছিন্ন ঢাকামুখী সরবরাহের জন্য গ্রামকে অন্ধকারে রাখার পুরনো ধারা থেকে বেরিয়ে এবার গ্রীষ্মে সবাইকেই সমান ভাগে বিদ্যুৎ ঘাটতির বোঝা বহন করতে হবে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে এবার নির্ভরতা বাড়ছে হেভি ফুয়েল অয়েল (এইচএফও)–চালিত স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদকদের (IPPs) ওপর। সাধারণত উচ্চ খরচের কারণে এগুলো সীমিতভাবে চালু থাকলেও, এবার জাতীয় গ্রিডের চাপ সামাল দিতে এগুলো পুরোপুরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।অর্থনৈতিক দিক দিয়ে প্রস্তুতি আরও জোরালো। এলএনজি আমদানি এবং বকেয়া পরিশোধে অর্থ বিভাগ ছাড় দিয়েছে ২,৪০০ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনাও পরিশোধ করা হয়েছে, যার মধ্যে শুধু শেভরনের পাওনাই ছিল ৫৩২ মিলিয়ন ডলার।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির বাংলা স্কুপকে বলেন, ‘রমজানে পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে ছিল, কিন্তু গ্রীষ্মে চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন হবে।’ তিনি জানান, সরকার ঈদুল আজহার আগে বড় পরিসরে পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। তাপমাত্রা যদি ৪২–৪৩ ডিগ্রিতে পৌঁছায়, বিদ্যুৎ চাহিদা ১৭,৫০০ মেগাওয়াট ছুঁতে পারে বলে আশঙ্কা। এর বিপরীতে গ্যাস, কয়লা ও তেলের মধ্যে শুধুমাত্র তেলচালিত কেন্দ্রগুলোই তাৎক্ষণিকভাবে চাহিদা পূরণে প্রস্তুত রয়েছে।
বিদ্যুৎ সচিব ফারজানা মমতাজ বাংলা স্কুপকে বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে আমরা আগে থেকেই অনেক প্রস্তুতি নিয়েছি। গত শীত মৌসুমেই বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ও সাবস্টেশনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করেছি। একই সঙ্গে সরকারি দপ্তর ও আপামর জনসাধারণকে এসি ব্যবহারে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ব্যবহার করার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। পাশাপাশি সরকারি দপ্তরগুলোতে বকেয়া টাকা ও গ্রাহক পর্যায়ে বকেয়া বিল আদায়ের জন্য তাগাদাপত্র দিয়েছি। আশা করি, রমজানের মত এই গ্রীষ্ম মৌসুমেও বিদ্যুতের সংকট হবে না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ সচিব বলেন, আমাদের উপদেষ্টা মহোদয়ের দিকনির্দেশনায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগে ব্যয় আরেক ধাপ কমেছে। পাশাপাশি গ্রাহক পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করেছি। একই সঙ্গে, বড় বড় প্রকল্পগুলোর অপ্রয়োজনীয় অনেক খাত আমি কমিয়েছি।
বর্তমানে দেশে ১৪০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে, যার মধ্যে এইচএফওচালিত ৫৫টি কেন্দ্রের সম্মিলিত উৎপাদনক্ষমতা ৫,৬৬৩ মেগাওয়াট। তবে এইচএফও–চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের উচ্চ খরচ নিয়ে সরকারের দুশ্চিন্তা রয়েছে। প্রতি ইউনিটে এই খরচ ৩৫–৪৫ টাকা, যেখানে গ্যাসচালিত ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ ১২–১৫ টাকার মধ্যে। আইএমএফ-এর ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির শর্ত অনুযায়ী, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমাতে হবে। ফলে এইচএফও–নির্ভরতাকে অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন। তবু বর্তমান বাস্তবতায় এটিই সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প।
পিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম জানান, ট্রান্সমিশন লাইন পুরোনো হওয়ায় কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো পুরোপুরি চালানো যাচ্ছে না, তবে সেপ্টেম্বরে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গ্রীষ্মের চরম চাহিদা মোকাবেলায় সরকার একদিকে শহর-গ্রামে সমতা প্রতিষ্ঠার পথে হাঁটছে, অন্যদিকে ব্যয়বহুল হলেও কার্যকর বিদ্যুৎ উৎসগুলোকে প্রস্তুত রাখছে।
বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কেএম রেজাউল হাসনাত বলেন, ‘বকেয়া, সার্ভিস চার্জ হ্রাস ও মুদ্রার অবমূল্যায়নের চাপে থেকেও আমাদের কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত।’
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স